মিথ্যে বলে লাভ নেই, হুপার, ঠাণ্ডা স্বরে বলল লিঞ্চিঙ মবের নেতা। গত এক বছর ধরে তুমি মনটানায় ছিলে, হিউ হুবার্টের খবর। তুমি জানো কোত্থেকে?
বাড লরেন্স বলেছে, বিশ্বাস করো আমি সত্যি কথা বলছি। ধরা পড়ার আগে হুবার্টের কাছে টাকা চেয়ে ফেরিসে চিঠি লিখেছিল সে।
ব্যাটা মিথ্যে কথা বলছে।
ঝুলিয়ে দাও শালাকে!
ভীড়ের মধ্যে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন মত প্রকাশ করল। কেউ নিশ্চিত লোকটা মিথ্যে কথা বলছে। সুযোগ নিল শেরিফ রস লেম্যান। উঁচু গলায় বলল, হুপার মিথ্যা বলছে কিনা সহজেই বোঝা যাবে। ফিরে। গিয়ে ফেরিসে খোঁজ নিলেই আমি জানতে পারব হিউ হুবার্টের নামে। ওখানে কোনও চিঠি গিয়েছিল কিনা। আমি কথা দিচ্ছি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তোমরাও কিন্তু কথা দিয়েছিলে অচেনা খুনীদের নাম বললে হুপারকে তোমরা আমার হাতে ছেড়ে দেবে।
আবার দুইবার হুইসল বাজাল অধৈর্য ড্রাইভার। রোসা শুনতে পেল নিচু গলায় লোকগুলো আলোচনা করছে। কিছুক্ষণ পর ওদের নেতা উঁচু গলায় বলল, আমরা জানি বিচারে এমনিতেই ফাঁসি হবে হুপারের। বেশ, শেরিফ, ওকে রলিন্সে নিয়ে যাও তুমি।
এক মিনিট পর বন্দীকে নিয়ে বগিতে উঠল শেরিফ রস লেম্যান, সীটের হাতলে আবার আটকে দিল হুপারের হাত। ট্রেন চলতে শুরু করায় ধাতব শব্দ উঠল ফিশপ্লেটের।
আমি প্যাট্রিক হল, ম্যাম।
পাশে বসা লোকটার গলার আওয়াজ শুনে চোখ তুলে তাকাল বোসা। চওড়া কাঁধ লোকটার। পরনে শহরে তৈরি দামী কোট। ক্লিন। শেভড চেহারাটা সুদর্শন। কোঁকড়ানো কালো চুল। দেখতে সুন্দর, তবু কেন যেন সহজ হতে পারল না রোসা। রুক্ষ একটা ভাব আছে লোকটার মধ্যে। চোখ জোড়া মায়া দয়াহীন। আমি রোসা হিগিনস, মিস্টার হল, বলল সে। রলিন্সে যাচ্ছি। তুমি?
রলিন্স।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল রোসা, কিন্তু আর একটা কথাও বলল না প্যাট্রিক হল। জানালা খুলে দেয়ার জন্য ঝুঁকল লোকটা। তার ফাঁক হয়ে যাওয়া কোটের ভেতর হোলস্টারে রাখা অস্ত্রটা চোখে পড়ল রোসার। মুখ ফিরিয়ে খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকল সে।
০৩.
নর্থ প্ল্যাট রিভার পার হওয়ার পর কণ্ডাক্টর এল বগিতে। যাত্রীদের উদ্দেশে বলল, আমরা রলিন্সে থামার পর শেরিফ তার বন্দী সহ নেমে যাওয়ার আগে সীট ছেড়ে উঠবে না কেউ।
একজন যাত্রী জানতে চাইল, হুপারকে গুলি করতে গিয়ে কেউ আমাদের খুন করে বসবে সেই ভয় পাচ্ছ?
ফ্যাকাসে চেহারায় হাসল কণ্ডাক্টর। না। ডেপুটি জেরাল্ড স্ট্যানলি। থাকবে প্ল্যাটফর্মে।
তাহলে আমাদের চিন্তার কিছু নেই। মাথা ঝাঁকাল র্যাঞ্চার।
তারপরও আমরা ঝুঁকি নেব না। এবার স্ট্যানলিকে দুদিকে নজর রাখতে হবে, বলল কণ্ডাক্টর। ল্যারামি জেল থেকে পাঁচজন হাজতী পালিয়েছে। পশ্চিমে আসছে ওরা।
তো? জিজ্ঞেস করল র্যাঞ্চার।
একজনের চুরি করা ঘোড়াটা গতকাল পাওয়া গেছে স্যাডল গিয়ারসহ। সম্ভবত রলিন্সে লুকিয়ে আছে লোকটা, চেষ্টা করছে নতুন ঘোড়া যোগাড় করার। অথবা হয়তো ভাবছে এই ট্রেনে উঠে পড়বে। লোকটা সে চেষ্টা করলে ডেপুটি তাকে গুলি করবে।
কণ্ডাক্টর চলে যাওয়ার পর প্যাট্রিক হল তাকাল রোসার দিকে।–চিন্তিত চেহারায় হাসল রোসা, জানতে চাইল, এদিকে সবসময়েই এরকম গোলমাল চলে?
না। কখনও কখনও পুরো একসপ্তাহ পার হয়ে যায় একজন লোকও গুলি খায় না বা ফাঁসিতে ঝোলে না।
ব্রেকম্যানের চিৎকার শোনা গেল। সামনের স্টপেজ রলিন্স। আমরা। না বলা পর্যন্ত সীট ছেড়ে উঠবে না কেউ।
শহরের মধ্যে গতি কমিয়ে প্রবেশ করল ট্রেন, থামল লম্বা একটা প্ল্যাটফর্মের পাশে। বড় রাস্তা দেখা যায় এখান থেকে। এক সারিতে কয়েকটা সেলুন আর একটা হোটেল রয়েছে রাস্তার উল্টোপাশে। একজন মহিলাকেও দেখা গেল না কোথাও, অথচ অন্তত শখানেক লোক দাঁড়িয়ে আছে উঁচু বোর্ডওয়াকে।
বিশাল প্ল্যাটফর্মে লম্বা একটা লোক ছাড়া আর কেউ নেই। গ্রীক দেবতার মত চেহারা লোকটার। সোনালী চুল। বুকে ঝুলছে একটা স্টার। কোমরের হোলস্টার উরুর সাথে বাধা। ঋজু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ নীল চোখের দৃষ্টিতে চারপাশ জরিপ করছে সে। অস্বাভাবিক। কোনকিছু দেখলেই মোকাবিলা করবে।
বোর্ডওয়াকে দাঁড়ানো একটা লোকও নড়ল না। বগির ভেতর শব্দ শুনে ঘাড় ফেরাল রোসা। শেরিফ লেম্যান তার বন্দীকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে। প্ল্যাটফর্মে নেমে ডেপুটির সাথে কথা বলল শেরিফ। রোসা শুনতে পেল ডেপুটি স্ট্যানলি বলছে, তোমার সাথে জেল পর্যন্ত যেতে পারলে ভাল হত, কিন্তু ট্রেন ছাড়ার আগে এখান থেকে আমার নড়া উচিত হবে না।
শেরিফ সমঝদারের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। হ্যাঁ, কণ্ডাক্টরের কাছে শুনেছি। তুমি আসার আগ পর্যন্ত ডিপোতেই অপেক্ষা করব।
কার্বনে কোনও ঝামেলা হয়েছিল?
হ্যাঁ, প্রায় সেই আগের বারের মতই। তবে এবার কিছু নতুন তথ্য আদায় করেই হুপারকে ছেড়ে দিয়েছে ওরা। কাল তদন্ত করতে ফেরিসে যেতে হবে তোমাকে।
ফেরিস? ওখানে কেন? চারপাশে নজর রাখার ফাঁকে জানতে চাইল স্ট্যানলি। নিচু হয়ে ট্রেনের তলায় কেউ লুকিয়ে আছে কিনা দেখল।
ফাঁসির দড়ি গলায় এঁটে বসবে এই ভয়ে অচেনা খুনী দুটোর নাম বলে দিয়েছে হুপার। তাদের একজন হচ্ছে হিউ হুবার্ট। লোকটা বোধহয়, ফেরিসে লুকিয়ে আছে। ওই জায়গার পোস্ট অফিসে তার নামে চিঠি এসেছে। পোস্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে যদি দেখ সত্যি লোকটার চিঠি, এসেছে ওখানে, তাহলে তাকে ধরে আনতে হবে তোমার।