ট্রেইলের বামপাশে সেমিনো পর্বতের গায়ে জন্মানো জঙ্গল আধমাইল দূরে এসে থেমে গেছে। ট্রেইল ছেড়ে সেদিকে এগুলো জুয়াড়ী। দুশো গজ এগুনোর পর সামনে শুকনো, শক্ত জমি। হাল্কা হলেও ঘোড়র পায়ের ছাপ পড়বে, অনুসরণ করতে অসুবিধে হবে না। কোনও দক্ষ ট্র্যাকারের। ট্রাকগুলো অ্যাডামের চোখে পড়ুক না পড়ুক, এখন আর কিছুই যায় আসে না প্যাট্রিক হলের।
সমতল জমি নিচু হয়ে গেছে হঠাৎ। কিনারায় পড়ে আছে বড় বড় বোল্ডার। ঢাল বেয়ে ঘোড়া নামিয়ে থামল সে। একহাতে বের দড়ি ধরে স্ক্যাবার্ড থেকে নামিয়ে আনল কারবাইন। একটা পাথরে ঘোড়ার দড়ি পেঁচিয়ে বোল্ডারের আড়ালে সরে এল। পাম্প করে কারবাইনের চেম্বারে একটা শেল ঢুকিয়ে কাঁধে ঠেকাল ওটা ঢালের উঁচুতে বুক রেখে।
ট্রিগারে আঙুল বসিয়ে অসীম ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে। অ্যাডাম যদি ট্র্যাক করতে না পারে, চলে যেতে দেবে সে অক্ষত অবস্থায়। কিন্তু যদি অনুসরণ করে এগিয়ে আসে, আজ কেউ ওকে বাচাতে পারবে না। অ্যাডামকে খুন করে হলেও বার্টের সাথে দেখা তাকে করতেই হবে। চার লক্ষ ডলার ছেড়ে দেয়া যায় না!
আধঘণ্টা পর দেখা গেল অ্যাডামকে। সহজ ভঙ্গিতে ঘোড়ায় বসেছে। সে, রলিন্স যাবার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জুয়াড়ী যে তার সামনে আছে সে ব্যাপারে অ্যাডাম নিশ্চিত। আগে বেড়ে ধরতে চায় না।
প্যাট্রিক হল যেখানটায় রাস্তা ছেড়েছে তার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অ্যাডাম বেঞ্চলি। কারবাইন তাক করল জুয়াড়ী। অ্যাডাম ট্রাক দেখে এদিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলেই গুলি করবে মাথায়। ঘোড়াটাকে নিজের ইচ্ছেয় চলতে দিয়ে একটা সিগারেট বানিয়ে ধরাল অ্যাডাম, যেখানে জুয়াড়ী রাস্তা বদলেছে সে জায়গাটা পেরিয়ে গেল অজান্তেই। টের পেল না নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ভাগ্য আজ বাচিয়ে দিল তাকে।
কাঁধ থেকে কারবাইন নামিয়ে নিল প্যাট্রিক হল। ট্রেইলের দিকে তাকিয়ে থাকল দশ-পনেরো মিনিট। অ্যাডাম রলিন্সের পথে চোখের আড়ালে চলে যাওয়ার পর উঠে দাঁড়িয়ে কাপড় থেকে ধুলোমাটি ঝাড়ল। কারবাইনটা স্ক্যাবার্ডে ঢুকিয়ে রেখে স্যাডিলে চাপল। এখন হুবার্টের সাথে দেখা করতে যাবার পথে আর কোনও বাধা নেই।
২০.
চারমাইল পুবে সেমিনো পর্বতের কাছাকাছি অক্স বো র্যাঞ্চের দুই নম্বর লাইন ক্যাম্পটা। দেখে মনে হয় পরিত্যক্ত। পাশে জঙ্গলের দিকে বয়ে যাচ্ছে একটা ঝর্না। ছোট ছোট বাধ বানিয়েছে বিভারের দল, ফলে অনেকটা জায়গার মাটি সিক্ত হয়েছে পানিতে।
ওখানে পৌঁছুনোর পর গাছের আড়াল থেকে ডাক দিল হবার্ট। জঙ্গলে ঢুকে প্যাট্রিক হল দেখল দুটো প্যাক হর্সের দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে হিউ হুবার্ট। সময় নষ্ট না করে কাজের কথা জানতে চাইল সে, এখানে আসতে কেউ তোমাকে দেখে ফেলেনি তো, প্যাট্রিক?
না। অ্যাডাম বেঞ্চলির ব্যাপারটা খুলে বলল জুয়াড়ী। তারপর রাগে দুহাত মুঠি করল। ভুল করেছি। ওকে শেষ করে দেয়া উচিত ছিল। আমি ওর সামনে ট্রেইলে নেই টের পেয়ে এখন ফিরে আসতে পারে লোকটা।
চোখ সরু করে দুএক মুহূর্ত ভাবল হুবার্ট, তারপর নিষ্ঠুর একটুকরো হাসি খেলে গেল তার ঠোঁটে। তোমাকে ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসব আমি। কয়েকটা গরু ট্রেইলে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তোমার ট্র্যাক মুছে ফেলব। অ্যাডামের কপাল ভাল হলে আমার সাথে দেখা হবে না ওর।
ঝোপঝাড়ে বুজে যাওয়া উঁচু একটা ট্রেইল ধরে পাহাড়ের দিকে। এগুলো ওরা দুজন। পাক হর্স দুটো প্যাট্রিক হলের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়ে পথ দেখাচ্ছে হুবার্ট ওরফে অ্যাডলার। অসংখ্য পাইনগাছ জন্মেছে। পাহাড়ের গায়ে। ওগুলোর মাঝে হলুদের ছোপ দেখে চেনা যাচ্ছে মধ্য, সেপ্টেম্বরের অ্যাসপেনগুলোকে। সামনের পথ আরও অনেক খারাপ। বিপজ্জনক, বলল হবার্ট, আমি পথ না দেখালে বাকি জীবন চেষ্টা করেও ক্যাম্প খুঁজে পাবে না আর্চার বা রবিনসন।
অপেক্ষাকৃত কম ঢালু ট্রেইল ধরে পাহাড়ের গায়ে আরও দুমাইল, এগুলো ওরা দুজন। তিন হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে এল। প্রায় পুরো পথই হেঁটে এগুতে হলো ওদের। একবার একটা মাদি ভালুক তেড়ে আসতে গিয়েও সিদ্ধান্ত বদলে বাচ্চাসহ ঢুকে গেল ট্রেইলের পাশে গভীর জঙ্গলে।
পাহাড়ের একটা তাকে উঠে বামে মোড় নিয়ে সরু একটা শিকারের ট্রেইল ধরে আধমাইল এগুলো ওরা। তারপর ডানদিকের পাহাড়ে উঠতে শুরু করল অবিশ্বাস্য ঝুঁকি নিয়ে। কোনও ট্রেইল এখানে কোনকালে ছিল বলে মনে হলো না প্যাট্রিক হলের। পা ফস্কালে ঢাল বেয়ে কয়েক–হাজার ফুট গড়িয়ে নামতে হবে। গাছের গুঁড়ি বা পাথরে বাড়ি খেলে দেহের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। কেউ আসে না। এদিকে, মন্তব্য করল হুবার্ট।
পাহাড়ের ওপরে একটা মেসামত জায়গায় উঠে এল ওরা। একটা বিশাল হরিণ ওদের দেখে জঙ্গলের ভেতরে ছুটে পালাল। ওরা আওয়াজ পেল হরিণটা পানির ওপর দিয়ে শব্দ তুলে ছুটছে। আমরা ওই ঝর্না ধরে এগিয়েই ক্যাম্পে পৌঁছে যাব, বলল হুবার্ট।
জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ঝর্না অনুসরণ করে এগুলো ওরা। আরেকটা মোটামুটি খাড়া ঢাল বেয়ে একটা ক্লিফের পাদদেশের সমতল ভূমিতে পৌঁছে থামার নির্দেশ দিল হুবার্ট। ক্যাম্পে এসে গেছি। প্যাকহর্স দুটো থেকে মালপত্র নামিয়ে একটা তাঁবু দাড় করাল ওরা দুজন। এই তাবুতে থাকার সুযোগ ওদের হবে না, বাইরে ঘুমাতে হবে। ওদের। তবু আর্চার আর রবিনসনের জন্য। এক সপ্তাহের খাবার এনেছে। হবার্ট চারজনের আন্দাজে। ক্যাম্প করার আনুষঙ্গিক অন্যান্য জিনিস আনতেও ভুল করেনি।