কথা শুনে মনে হচ্ছে সব তোমার চোখের সামনে ঘটেছে, চেষ্টা করেও গলা থেকে ঠাট্টার সুর তাড়াতে পারল না স্ট্যানলি।
আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি ডিক উলফের র্যাঞ্চে, সমুচিত জবাব দেয়ার ভঙ্গিতে চোখ পাকাল ওয়েন। সেরাতে কাউকে ওরা দেখেনি বটে, তবে পরদিন সকালে করালে ওদের একটা সোরেল কম ছিল।
ওয়েনের যুক্তি বুঝতে পারল স্ট্যানলি। স্পাইক হাননা ল্যানডারে যাবার ধোকা দিয়ে স্যাণ্ড ক্রীকের পথ ধরেছে, ঘোড়া বদলে নিয়েছে ডিক উলফের করাল থেকে। উঠে দাঁড়াল সে, যাই শেরিফকে খবরটা দিয়ে আসি।
এক নম্বর সেলের সামনে শেরিফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল স্ট্যানলি। রোজকার মত আজও হুপারকে একই প্রশ্ন করছে লেম্যান নির্বিকার চেহারায়। হিউ হুবার্ট কে? একই জবাব দিচ্ছে হুপারও। আমি জানি না। স্ট্যানলিকে সাথে নিয়ে করিডরের দরজা বন্ধ করে অফিসে এসে
বসল শেরিফ। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, হুবার্ট ওকে জেল থেকে পালাতে সাহায্য করছে না দেখে একদিন হয়তো অধৈর্য হয়ে বলে ফেলবে কোন্ পরিচয়ের আড়ালে আত্মগোপন করে আছে খুনীটা।
স্ট্যানলির মুখে পাইক হাননার খবর শুনে গম্ভীর চেহারায় মাথা দোলাল লেম্যান। কালকে স্যাণ্ড ক্রীকে গিয়ে ট্রাক খুঁজতে শুরু করব। ওই লোকের ব্যাপারে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে গভর্নর। জেল ভাঙার ব্যাপারটা নাকি রাজনৈতিক চক্রান্ত। গভর্নর চায় নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই স্পাইক হান্নাকে আমরা ল্যারামি জেলে ঢোকাই।
একাই যাবে, না আমাকেও আসতে হবে?
একাই যাব। হিউ হুবার্টকে ধরার জন্য অ্যাডাম আর তোমার রলিন্সেই থাকা প্রয়োজন।
.
প্যাট্রিক হল সাপার টেবিল ছাড়ল মন ভরা অস্বস্তি নিয়ে। গত কয়েক দিন। ধরেই শহরের হাওয়া হালচাল ভাল ঠেকছে না তার। লক্ষ করেছে অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে পুর্ব থেকে আসা প্রত্যেকটা ট্রেনের ওপর চোখ রাখছে রোসা হিগিনস, দুই ডেপুটির সাথে নিয়মিত নিচু স্বরে আলাপ করছে সাপার টেবিলে। কিসের এত কথা ওদের! লিভারি বার্ন। আর হোটেলগুলোয় খোঁজ খবর নিচ্ছে দুই ডেপুটি। ব্যাঙ্ক ডাকাত আর্চার আর রবিনসনের ব্যাপারে কিছু জেনে যায়নি তো ওরা!
গোল্ড রূমে ঢুকে টেবিল দখল করে বসল জুয়াড়ী ভাবনা চিন্তার। ফাঁকে মদ গেলার জন্য। কিছুক্ষণ পর গল্প করার জন্য এসে জুটল। সিসিলিয়া। আজ মেয়েটার সাহচর্য অসহ্য লাগছে প্যাট্রিক হলের, বাইরে বেরিয়ে এল সে। হাঁটতে শুরু করে পৌঁছে গেল ট্রেন ডিপোর সামনে। এইমাত্র এসে পৌঁছেছে চার নম্বর ট্রেন। অন্ধকারেও হাতের সাদা ব্যাণ্ডেজ দেখে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো জোসেফ ওয়েনকে চিনল সে। তারমানে রোসা আর ওয়েন রাতদিন নজর রাখছে ট্রেনগুলোর
ওপর! আর এক সপ্তাহও নেই এই স্টেশনে এসে নামবে রবিনসন আর আর্চার। ডেপুটিদের সন্দেহ হলে ওদের অনুসরণ করে ফেরিসে পৌঁছে যাবে। দেখবে লোক দুজন জুডাস অ্যাডলারের সাথে দেখা করছে ওখানে।
এই বিপদের কথা বাদ দিলেও আরেকটা সম্ভাবনা মাথা থেকে দূর করতে পারছে না প্যাট্রিক হল। হুপার যদি মুখ খোলে সর্বনাশ হয়ে, যাবে। একই সাথে এই দুটো বিপদ দূর করে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত একটা বুদ্ধি খেলে গেল জুয়াড়ীর মাথায়। মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ে শেরিফের অফিসের দিকে হাঁটতে শুরু করল।
হুপারের সেলের দেয়ালে উঁচুতে বসানো ভেন্টিলেটর দিয়ে ছোট একটা নুড়ি পাথর ছুঁড়ল সে। মৃদু ঠুক শব্দে পড়া পাথরটা নাক ডাকার শুরুগম্ভীর আওয়াজের মাঝে হারিয়ে গেল বলেই হয়তো ঘুম ভাঙল না এডমণ্ড হুপারের। দ্বিতীয় নুড়িটা থুতনির ওপরে পড়ায় চমকে উঠে বসল।
হুবার্ট খবর পাঠিয়েছে, ফিসফিস করে বলল প্যাট্রিক হল।
বেশ অনেকদিন ধরে সুখবর শোনার আশায় উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছিল হুপার, দ্বিধা না করে উঠে দাঁড়িয়ে ভেন্টিলেটরের শিক দুহাতে আঁকড়ে ধরল। কবে আমাকে এখান থেকে বের করবে সে?
একটা কাজে শহরের বাইরে থাকতে হচ্ছে তাকে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তোমাকে মুক্ত করবে ফিরে এসে।
করলেই ভাল, নাহলে ওর পরিচয় জানিয়ে দেব শেরিফকে আমি।
হুবার্ট তোমাকে ডোবাবে না। তবে একটা সাহায্য চেয়েছে সে। সেপ্টেম্বরের চোদ্দ তারিখে হুবার্টের ছদ্মনাম শেরিফকে বলে দেবে তুমি রাগের মাথায়–দুঃখে।
হুবার্ট ধরা পড়ে গেলে আমি জেল থেকে বেরব কিভাবে! বিস্ময়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল এডমণ্ড হুপার।
ধরা পড়বে না। লুমেয়ার ছাড়া স্যাণ্ড ক্রীকের বাকি পঁচজন জীবিত রাইডারদের কেউ এলাকা ছেড়ে চলে যায়নি। তুমি বলবে লু মেয়ারই আসলে হিউ হুবার্ট। মনে রেখো, লু মেয়ারই হুবার্ট। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে লু মেয়ারকে ধরার জন্য, কাজ করতে সুবিধা হবে হুবাটের। বিনিময়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে জেল ভেঙে পালাতে তোমাকে সে সাহায্য করবে।
১৯.
হুপারকে রলিন্সে আনার ঠিক একমাস পর, বারোই সেপ্টেম্বর একই ট্রেন থেকে নামল অপরিচিত একজন লোক। প্রথমবার দেখেই রোসা বুঝতে পারল চিকন কাঠির মত লম্বা কম বয়েসী এই লোক আর্চার বা রবিনসন হতে পারে না।
রোসার সামনে থেমে দাঁড়িয়ে মাথা থেকে হ্যাট নামাল পাটখড়ি। নড করে জানতে চাইল, ডেপুটি স্ট্যানলিকে কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারো, ম্যাম? রোসা মাথা দোলানোয় হাত বাড়িয়ে বলল, আমি শাইয়্যান থেকে এসেছি, ম্যাম। ফ্রেড ম্যাকলিন।