এইমাত্র ফ্রেড স্টীল দুর্গ থেকে ফিরল স্ট্যানলি। রোসা জানে ওখানে সে এক সার্জেন্টের বউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিল। মহিলা আগে হেয়েস হোটেলের ওয়েট্রেস ছিল। হয়তো সে ভুয়া হান্টারদের চেহারার বর্ণনা দিতে পেরেছে।
কিচ্ছু কাজ হয়নি, ঘোড়া বেঁধে জানালায় দাঁড়ানো রোসার উদ্দেশে চেঁচাল স্ট্যানলি।
দুই ডেপুটি অন্য পথেও এগোতে পারেনি। সেপ্টেম্বরে শিকারের। জন্য পার্টিরা ঘোড়া ভাড়া করেছে কি না বার্নগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখেছে ওরা। বার্ন মালিকরা যেসব পার্টির কথা বলেছে তাদের কেউ আর্চার বা রবিনসন হতে পারে না, প্রত্যেকেই তারা নিজ এলাকায় হান্টার হিসেবে। সুপরিচিত।
রোসাও বসে নেই, গত কদিন মনোযোগ দিয়ে দুটো কাজ করেছে সে। প্রতিটা ট্রেনের ওপর চোখ রেখেছে দুজন শিকারী একসাথে আসে কিনা দেখার জন্য। দিনে দুইবার হোটেল রেজিস্টার পরীক্ষা করে দেখেছে। আর্চার আর রবিনসন, হোটেলে উঠলে সম্ভবত একই নাম ব্যবহার করবে।
তৃতীয়দিন অনেক দেরিতে এল তিন নম্বর ট্রেন। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সন্ধের আলোয় যাত্রীদের নামতে দেখল রোসা। আজও হতাশ হতে হলো ওকে। আসেনি কোনও হান্টার। ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে এমন সময় ঘাড়ের কাছে কথা বলে উঠল স্ট্যানলি, দেখা যাচ্ছে তোমার কপালও আমাদের চেয়ে ভাল না। রোসা দেখল অ্যাডামও দাঁড়িয়ে আছে দৈত্যাকার ডেপুটির পাশে। সাপারের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ভুলে গেছ। ওয়েনের আসার কথা? মনে করিয়ে দিল স্ট্যানলি।
ম্যাক্সওয়েলে ঢুকে ওরা দেখল যাত্রা ক্লান্ত, চেহারায় ওদের জন্য সাপার টেবিলে অপেক্ষা করছে জোসেফ ওয়েন। বাঁ কাঁধের স্লিঙ খুলে ফেলেছে সে, কিন্তু ব্যাণ্ডেজ খোলার অনুমতি পায়নি অলিভার কাছ থেকে। সময় নষ্ট না করে কাজের কথা পাড়ল সে, অলিভার বাবা ওদের চেহারার বর্ণনা দিতে পেরেছে। একজনের বয়স পঞ্চাশ মত হবে। লম্বা। চুল পাকা। চেহারায় অসংখ্য ভাজ। অন্যজন বেঁটে আর মোটা। গালে দাড়ি আছে। কপালে একটা কাটা দাগ। সঙ্গীর চেয়ে বয়সে বছর দশেকের ছোট হবে।
আর কিছু মনে করতে পারেনি হেনরিখ? সামনে ঝুঁকে জিজ্ঞেস, করল অ্যাডাম।
না। বুড়োর মুখ থেকে এটুকু বের করতেই জান খারাপ হয়ে গেছে। খালি প্রশ্ন করে ভবিষ্যতে আমার কি করবার ইচ্ছে!
স্ট্যানলি নোসার দিকে তাকাল। কাজ খুঁজছিলে, পেয়ে গেছ একটা। আমার বন্ধু ফ্রেড ম্যাকলিনের কাছে শাইয়্যানে একটা চিঠি পাঠাতে হবে। ফ্রেড শাইয়্যানের নামকরা একটা পেপারের সাংবাদিক। ওর কাছে হান্টার দুজনের বর্ণনা দিয়ে জানতে চাইবে দুবছর আগে। পলিশ এই বর্ণনার সাথে মেলে এমন দুজন দুবৃত্তকে খুঁজছিল কিনা। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সব পেপার ঘাটতে হবে ওকে। লোক দুজন পুব, দক্ষিণ বা মধ্য পশ্চিমের ওয়ান্টেড হতে পারে। চিঠিতে পুনশ্চ, দিয়ে লিখবে কিছু খুঁজে পেলে যেন মুখ বন্ধ রেখে খবর পাঠায়।
রাতেই লিখে ফেলব, কাল সকালে অফিসে এসে সই করে। দিয়ো। কাজ পেয়ে খুশিই হয়েছে রোসা।
এতক্ষণ ওদের আলাপে বাধা দেয়নি অধৈর্য অ্যাডাম। এখন ওয়েনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সে, জোডির খোঁজ নিয়েছ?
মাথা ঝাঁকাল ওয়েন। হ্যাঁ। বাসায় ছিল না, রেঞ্জে ছিল ক্যাটলগুলোর কাছাকাছি।
কি করছিল?
একটা ঘোড়ার পিঠে বসে সদ্য প্রসূত একটা বাছুর আর ওটার মাকে দেখছিল। জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছে, জবাব দিল না। কিছুক্ষণ লাল সাদা রঙের বাছুরটাকে দেখে পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে একটা দাগ দিল কাগজে। তার কথা বলার ইচ্ছে নেই দেখে বাংকহাউসে গিয়ে ল্যারির সাথে খানিকক্ষণ গল্প করলাম। ল্যারি তোমাকে বলতে। বলেছে যে এই পর্যন্ত সাতটা গুণেছে জোডি।
অলিভার কি খবর? জানতে চাইল রোসা।
আরেকজন লোক ঢুকেছে হোটেল ডাইনিঙ রূমে। রোসার কথার জবাব দিতে গিয়েও হঠাৎ অ্যাডামের চেহারায় পরিবর্তন দেখে থেমে গেল ওয়েন। ওদের টেবিল পাশ কাটানোর সময় পিঠে অ্যাডামের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অনুভব করল প্যাট্রিক হল। অ্যাডাম খোঁজ নিয়ে দেখেছে জেল থেকে ছাড়া পাবার পর গোল্ড রূমে জুয়া খেলা ছাড়া আর কোনদিকে নজর নেই লোকটার।
অ্যাডামের কাঁধে হাত রাখল স্ট্যানলি। গতকাল আবার ওকে জেরা করেছি। জানতে চাওয়ায় বলেছে জোডির জন্য অপেক্ষা করছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে জোডি শহরে না এলে নাকি সে-ই বক্স বিতে গিয়ে। পাওনা দাবি করবে।
ওয়েট্রেস এসে খাবারের অর্ডার নিয়ে চলে যাওয়ার পর ওয়েন বলল, আরেকটা ব্যাপার, ফেরিসে যাওয়ার পথে বেল স্পিঙে রাস্তা যেখানে। দুভাগ হয়ে গেছে সেখানে বড় একটা সাইনবোর্ড দেখলাম। আঙুল একে ল্যানডার আর ফেরিসে যাওয়ার রাস্তা আলাদা করে দেখানো আছে।
তো কি হয়েছে? অ্যাডাম আর স্ট্যানলি বহুবার দেখেছে সাইনবোর্ডটা।
ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে অ্যাডামের দিকে তাকাল ওয়েন। পাইক হানার কথা ভুলে গেছ? তোমাকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার পর করাল ম্যান জানিয়েছিল লোকটা ল্যানডার কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হয় জানতে চেয়েছিল। কেশে গলা পরিষ্কার করে নিল ওয়েন, হাসি হাসি চেহারায় চোখ বোলাল সবার ওপরে। অতবড় সাইনবোর্ড তার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। ভাওতা দিয়েছে। কেউ খোঁজ জানতে চাইলে ওরা বলবে সে ল্যানডারের পথে গেছে। করাল ম্যানের চোখের সামনে ল্যানডারের দিকে ঘোড়া ছুটিয়েছে সে, তারপর কিছুদূর গিয়ে ফেরিসের রাস্তা ধরে বাজার্ডস গ্যাপের দিকে এগিয়েছে।