ভার্জিনিয়ার পুলিশ চীফ লিখেছে, স্ট্যানলি।
খাম থেকে কাগজের টুকরোটা বের করে ভাজ খুলে এগিয়ে দিল সে। ডেপুটির উদ্দেশে। চোখ বুলাল স্ট্যানলি। রিচমন্ড, ভার্জিনিয়া থেকে পুলিশ চীফ লিখেছে:
চার্লি রবিনসন আর নেলসন আর্চারকে এখানে কেউ চেনে না। হান্টারদের সাথে আলাপ করে বুঝতে পেরেছি ভুয়া নাম ব্যবহার করেছে লোক দুজন। রিচমণ্ড থেকে রলিন্সে গত পাঁচ বছরের মধ্যে শিকার করতে যায়নি কোনও স্পোর্টসম্যান।
একে একে দুই ডেপুটির দিকে তাকাল ওয়েন। কিছু বুঝলে?
দুটো ব্যাপার, উজ্জল হাসিতে ঝলসে উঠল স্ট্যানলির সুদর্শন চেহারা। দুবছর আগে মিথ্যে নাম ভূঁড়িয়ে হোটেলে উঠেছিল রবিনসন আর আর্চার পনেরোই সেপ্টেম্বরে। আবার ওই একই দিনে হফের বার্ন থেকে দুটো করে স্যাডল আর প্যাক হর্স ভাড়া নিয়েছিল গ্যানন উইলিস। ষোলো তারিখে দুই হান্টার বা গ্যানন কেউ রলিন্সে ছিল না।
শিকার শেষে ওরা রলিন্স হয়ে ফিরেছিল? জানতে চাইল অ্যাডাম।
গ্যানন উইলিস ঘোড়া ফিরিয়ে দিয়েছে কবে সে রেকর্ড হফের রেজিস্টারে আছে। তবে রবিনসন বা আর্চার হোটেলে আর ওঠেনি।
এতসব তথ্য আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? একটা সিগারেট, ধরিয়ে অধৈর্য কণ্ঠে জানতে চাইল ওয়েন।
বুঝতে পারছ না, দুই বছরের ফারাকে একই তারিখে একটা কাজ সারবে বলে আসার কথা ছিল গ্যানন উইলিসের? কি কাজ যে এত বিপদ মাথায় নিয়েও কাউন্টি ছেড়ে পালাচ্ছে না হিউ হুবার্ট? শেষ প্রশ্নটা যেন নিজেকেই করল স্ট্যানলি। রোসার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কি মনে হয়?
হয়তো শিকার করতে নয়, কোন কিছু লুকিয়ে রাখতে এসেছিল আর্চার আর রবিনসন।
সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল স্ট্যানলি। যদি ধরে নিই বড় ধরনের কোনও অপরাধ করার পর অনেকদিন লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে, কি করবে ওরা? একই লোককে ভাড়া করছে, নাহলে গ্যানন উইলিস.. বোধহয় রলিন্সে আসতে চাইত না। তারমানে…
প্রথমবার লুটের মাল লুকিয়ে রেখে গেছে। দ্বিতীয়বার আসছে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হবার পর। জায়গা খুঁজে বের করার জন্য ভাড়া করছে। একই প্যাকারকে… সিগারেটটা পায়ের নিচে পিষে নেভাল ওয়েন।
শাইয়্যানে গ্যানন উইলিস বলেছিল আশি হাজার ডলারের একটা কাজ হাতে আসছে তার। মেলে! সবকিছু মিলে যাচ্ছে খাপে খাপে। এসব কথা আমাদের চারজনের বাইরে যাতে আর কেউ না জানে, সবার ওপর চোখ বুলিয়ে সাবধান করল জেরাল্ড স্ট্যানলি। এতদিন পর্যন্ত যতটুকু আমরা অগ্রসর হয়েছি, খবরের কাগজের কল্যাণে জেনে গেছে হুবার্টসহ শহরের সবাই। এখন থেকে শেরিফ লেম্যান ছাড়া আর কেউ যেন কিছু টের না পায়।
চাচাকেও বলব না? আহত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল রোসা।
না। যত কম মানুষ জানবে হুবার্টের কানে খবর পৌঁছুনোর সম্ভাবনা তত কম। ওকে সতর্ক হয়ে উঠতে দেয়া যাবে না।
ঠিক, সায় দিল অ্যাডাম, সতর্ক নজর রাখব আমরা। ভুয়া শিকারীরা এসে যাদের সাথে এলক শিকারে যাবে তাদেরই কেউ একজন হিউ হুবার্ট। অন্যজনও যে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা হবে তা নয়। সঙ্গী হিসেবে প্রথমে গ্যানন তারপর প্লামারকে কাজে লাগাতে চেয়েছে হুবার্ট। এখন কাকে সঙ্গী করবে কে জানে।
হিউ হুবার্ট এত ঝুঁকি নিচ্ছে কেন? জানতে চাইল রোসা।
নিশ্চয়ই সে টের পেয়ে গেছে নকল শিকারীদের উদ্দেশ্য, ওয়েন দৃঢ়কণ্ঠে বলল, লোকগুলোর কাছ থেকে লুটের মাল কেড়ে নিয়ে খুন করবে সে ওদের। আমাদের কারও চেয়ে মাথায় বুদ্ধি কম নেই হুবার্টের, যেহেতু লোকগুলোকে কাছ থেকে দেখেছে কয়েকদিন, অনেক আগেই। আমাদের মত দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বসে আছে সে।
হেয়েস হোটেলে আর্চার আর রবিনসন ছিল, ওদের চেহারার বর্ণনা বলতে পারেনি কেউ? স্ট্যানলির দিকে তাকাল অ্যাডাম।
না। ওয়েনের দিকে তাকিয়ে হাসল স্ট্যানলি। তবে আরেকটা চিন্তা এইমাত্র মাথায় এল। ফেরিসে বিউয়েলদের ওখানে গিয়ে কদিন ঘুরে এসো না, ওয়েন, ওদিকে হুবার্টের যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। জিজ্ঞেস করে দেখো, হান্টাররা ওদের স্টোর থেকে কিছু কিনে থাকতে পারে। হয়তো চেহারার বর্ণনা দিতে পারবে।
স্ট্যানলির মুখে যাওয়ারও শুনে হেসে ফেলল অ্যাডাম আর রোসা। লজ্জায় চেহারা লাল হয়ে গেল জোসেফ ওয়েনের। ম্যাক্সওয়েল; হোটেলের নিয়মিত বোর্ডার হওয়ায় ওরা জেনে গেছে ফেরিস থেকে আসা সবকটা স্টেজে ওয়েনের চিঠি থাকে। আহত অবস্থায় অলিভার নিঃস্বার্থ সেবা ওয়েনকে প্রথমে কৃতজ্ঞ করেছে, হঠাৎ তারপর বুঝতে পেরেছে ওরা পরস্পরকে ভালবাসে।
তলে তলে যদিও, তবু তোমরাও কম যাও না, পাল্টা জবাব দিল ওয়েন লজ্জা কাটিয়ে উঠে।
লাজুক বোকা বোকা হাসি হেসে এবার মুখ নামিয়ে নিল স্ট্যানলি। হতাশ রোসা দেখল অ্যাডামের মুখের অভিব্যক্তি বিন্দুমাত্র পাল্টায়নি। কাল সকালে রওনা হয়ে যাব, এক মুহূর্ত ওদেরকে দেখে বলল ওয়েন।
ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগুচ্ছে এসময় অ্যাডাম কথা বলে উঠল, হাতে সময় থাকলে বক্স বিতে গিয়ে জোডির অবস্থা দেখে এসো।
যাব। দরজা, পেরনোর সময় জবাব দিল জোসেফ। তিন দিনের মধ্যেই ফিরে এসে ম্যাক্সওয়েল হোটেলে সাপার টেবিলে দেখা করব তোমাদের সাথে।
.
ঘটনা বিহীন তিনটা দিন পেরিয়ে গেল রোসার জন্য। ওর চাচা কেস। লড়তে পাশের কাউন্টিতে গেছে। দিনগুলো পার করল অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে ধুলোময় রাস্তার ওপর চোখ রেখে। শেরিফের অফিসের ব্যস্ততা দেখল কৌতূহলের সাথে। শেরিফ ইভানস্টোনে গেছে। একজন বন্দীকে নিয়ে আসতে, তবে অ্যাডমি আর স্ট্যানলিরও বিশ্রাম। নেই এদিকে।