হয়তো এরইমধ্যে ফিরে এসে টাকা নিয়ে গেছে।
অসম্ভব! খারাপ কথা বলে ফেলা দুই ছাত্রকে যেন স্কুল শিক্ষকের ভঙ্গিতে বকে দিল হুবার্ট। ওই ক্যাম্প যাতে শহুরে লোকগুলো না চেনে। সেজন্য গ্যানন আর আমি সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলেছি। উঁচু একটা পাইন গাছ ছিল ক্যাম্পের পাশে, ওটা কেটে ফেলা হয়েছে। ওরকম দুএকটা ল্যাণ্ডমার্ক ছাড়া জঙ্গল ওখানে মাইলের পর মাইল একই রকম। ওরা ক্যাম্পই খুঁজে পাবেনা, লুটের মাল উদ্ধার করবে কোত্থেকে!
তোমরা খুঁজে দেখোনি?
হ্যাঁ। গ্যানন হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়ার পরও অনেক খুঁজেছি। পাইনি। অক্স বোর স্ট্রেম্যানের চাকরি নিয়েছি কারও মনে সন্দেহ না, জাগিয়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবার জন্য। বেশ কিছুদিন আগে লরেন্সের হাত ঘুরে আমার একটা চিঠি এসেছে নিউ অরলিন্স থেকে। সেই লোক দুজন। আবার এসে একই ক্যাম্প থেকে শিকার শুরু করতে চায়। লিখেছে ওই ক্যাম্পের চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে ওরা নাকি মুগ্ধ, এখনও ভুলতে পারে না!
হাসল প্যাট্রিক হল। চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছ তুমি রাজি।
অবশ্যই। রলিন্সে পৌঁছে স্টেজে করে ফেরিসে পৌঁছুবে ওরা সেপ্টেম্বরের পনেরো তারিখে। বলেছি মালামাল, ঘোড়াসই ওখানে। উপস্থিত থাকব আমি আর একজন কুক। তুমিই হচ্ছ সেই কুক, প্যাট্রিক। একসাথে ফেরিসে যাওয়া আমাদের উচিত হবে না। তুমি তেরো। তারিখে অক্স বোর দুই নম্বর লাইন ক্যাম্পের কাছে অপেক্ষা করবে। ওখানে ক্যাম্পের মালপত্র বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাব আমি। পনেরো তারিখে আবার দেখা হবে তোমার সঙ্গে।
চেহারায় অস্বস্তি নিয়ে হিউ হুবার্টের দিকে তাকাল জুয়াড়ী। আমাকে তোমার কেন প্রয়োজন এখনও বুঝতে পারলাম না।
ওদেরকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হলে আমি ছাড়াও আরেকজনকে দরকার। ঘুম থেকে উঠে চার লক্ষ ডলার নিয়ে ওরা সরে পড়েছে দেখতে চাই না আমি। দুজন হলে একজন ঘুমালে অন্যজন পাহারায় থাকতে পারবে। হয়তো টাকাগুলো উদ্ধারের আগে পরিস্থিতি বোঝার জন্য সপ্তাখানেক শিকারের ভান করবে ওরা, কে জানে!
ওরা বস্তাটা খুঁজে বের করলে তারপর?
সশব্দে হাসল হুবার্ট। সে-রাতে বিলি বেঞ্চলি ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেয়ার পর তুমি কি করেছিলে, হাওডি বলে বিদায় নেয়ার আগে তার গালে চুমু খেয়েছিলে? কথা বলার জন্য জুয়াড়ীকে হাঁ করতে দেখে হাতের ঝাঁপটায় তাকে থামিয়ে দিল সে। তুমি যা করেছিলে আমরাও তাই করব।
ওদের আসতে আরও তিনসপ্তাহ দেরি আছে। এই কদিন কি হাঁ। করে বসে থাকব?
স্বাভাবিক আচরণ করবে।
ঠিক আছে, অ্যাডলার, বলল, জুয়াড়ী, জোডির জন্য অপেক্ষা করছি এমন একটা ভাব দেখিয়ে সেপ্টেম্বরের বারো তারিখ পর্যন্ত রলিন্সে থাকব। এরমধ্যে টাকা যদি কিছু পাওয়া যায় ভাল, না হলেও কোনও চাপ দেব না ছোঁকরাকে। তারপর ডেনভারে ফিরে যাচ্ছি খবর ছড়িয়ে দিয়ে গোপনে ফেরিসের পথ ধরব।
ভাল। সন্তুষ্টির সাথে মাথা দোলাল হুবার্ট। অক্স বোতে গিয়ে বেতন বুঝে নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেব আমি। কেউ সন্দেহ করবে না, হান্টিঙ সীজনে অনেকেই বড় শহর থেকে আসা পয়সাওয়ালা লোকদের শিকারে নিয়ে গিয়ে কাউহ্যাণ্ডদের একবছরের বেতনের সমান টাকা কামায়।
তেরো তারিখে দেখা হবে, বলে ট্রলি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ম্যাক্সওয়েল হোটেলের দিকে হাঁটতে শুরু করল প্যাট্রিক হল। কাজটায় সফল হলে বাকি জীবন বসে খেতে পারবে। ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস। ফিরে আসছে তার, মাথায় নতুন কূটবুদ্ধি খেলতে শুরু করল।
১৮.
শেরিফের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জোসেফ ওয়েন। অনেকক্ষণ হলো ডেপুটি স্ট্যানলির জন্য অপেক্ষা করছে সে। তদন্তের অগ্রগতি জানতে হবে। সেপ্টেম্বর প্রায় এসে গেল, এখনও বার্টের কোনও হদিস নেই। বিরক্তিতে চেহারা বিকৃত করে ব্যাণ্ডেজের ওপর দিয়ে দ্রুত শুকিয়ে আসা কাঁধের ক্ষতটা চুলকাল সে ডান হাতে।
সবার ধারণা ওয়াইয়োমিঙ ছেড়ে চলে গেছে হুবার্ট, কিন্তু জোসেফের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে সর্বক্ষণ ধারেকাছেই কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছে লোকটা। প্লামার ডেপুটির হাতে মরার পর বাকি ছয়জন স্যাণ্ড ক্রীক রাইডারের একজনই যে হুবার্ট সে-ব্যাপারে ওর মনে কোনও সন্দেহ নেই।
লু মেয়ার দক্ষিণে পাড়ি জমিয়েছে, জস হারমার এখনও রলিন্সে। বাকি চারজন, পেকোস, অ্যাডলার, লেপম্যান আর কিলরন হার্পার ফিরে গেছে নিজেদের র্যাঞ্চে। প্যাট্রিক হলের ব্যাপারে ওর কোনও মাথা ব্যথা। নেই, ওই লোক হিউ হুবার্ট না, ওর চাচা-চাচীকে খুন করেনি ডেনভারের জুয়াড়ী।
শেরিফের অফিসের সামনে হিচর্যাকে ঘোড়া থামিয়ে লাফ দিয়ে নামল অ্যাডাম আর স্ট্যানলি। দুজনেই হতাশ, ক্লান্ত। ঘোড়া দুটো বেঁধে ওয়েনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল ওরা। এত খেটেও তদন্তে একপাও অগ্রসর হতে পারেনি। লরার খোঁজ বের করতে পারেনি খবর পাঠিয়েছে শাইয়্যানের পুলিশ।
তাড়াতাড়ি আসো, স্ট্যানলি, আজকের মেইলে দারুণ একটা খবর এসেছে! রাস্তার উল্টোপাশে জ্যাক হিগিনসের অফিসের জানালা থেকে চেঁচাল রোসা।
রাস্তা পেরিয়ে একেকবারে সিঁড়ির চার ধাপ অতিক্রম করে দোতলায় উঠে এল স্ট্যানলি। বাকি দুজনও তেমন পিছিয়ে নেই। হুড়মুড় করে অফিসে ঢুকে ওরা দেখতে পেল ডেস্কে বসে আছে রোসা। ডান হাতে ধরা নীল রঙের এনভেলপটা নাড়ছে বাতাস করার ভঙ্গিতে।