পিঠে সিক্সগানের নল চেপে বসার আগে প্যাট্রিক হল টের পায়নি পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে কেউ। নিঃশব্দে পৌঁছে গেছে হিউ হুবার্ট! যদিফঁদ পেতে থাকো, ঠাণ্ডা, মসৃণ স্বরে বলল সে, খুন হয়ে যাবে চোখের পলক ফেলার আগে।
দুহাত মাথার ওপর তুলল প্যাট্রিক হল, তারপর ঘুরে দাঁড়াল। সামনে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখে ধূর্ত হাসি ফুটে উঠল তার চেহারায়। কোনও ফাঁদ বা চালাকি নেই, অ্যাডলার।
১৭.
জুয়াড়ীর পেটে সিক্সগানের নল দাবিয়ে খোঁচা দিল জুডাস অ্যাডলার। তাড়াতাড়ি যা বলার বলে ফেলো।
হুপার বলেছে ট্রায়ালের আগেই ওকে জেল ভেঙে বের করে না আনলে তোমার পরিচয় বলে দেবে শেরিফকে।
ওয়্যাগনগুলোর কাছে একটা কুকুর ডেকে উঠল কয়েকবার। ঘুম জড়ানো স্বরে কথা বলল কে যেন। ইশারায় প্যাট্রিক হলকে পেছনে সরে আসার নির্দেশ দিল জুডাস অ্যাডলার ওরফে হিউ হুবার্ট। চল্লিশ গজ হটিয়ে একটা পড়ে থাকা গুড়ির ওপর জুয়াড়ীকে বসতে বাধ্য করল। তারপর নিচু গলায় স্বগোতক্তি করল, শেষ করে দেব না বিশ্বাস করব। বুঝতে পারছি না।
কথাটা শুনে, প্যাট্রিক হলের মেরুদণ্ড বেয়ে ভয়ের ঠাণ্ডা হোত নেমে গেল। শ্বাস বন্ধ করে ঢোক গিলে বলল, আমি মরলেও হুপার বা লরা তোমার পরিচয় ফাস করে দিতে পারে। কাঁপা কাঁপা হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া বুকের ভেতর টেনে নিল সে।
লরা বলবে না, হাসল অ্যাডলার। ফাঁসিতে ঝোলার আগে হুপারও মুখ খুলবে না। ওর ট্রায়াল ডিসেম্বরে। তখন সে আমার পরিচয় সবাইকে। জানালেও ক্ষতি নেই, ততদিনে বহুদূর চলে যাব আমি। সবাই মনে করছে র্যাঞ্চারকে আমি খুন করেছি। কিন্তু আমি করিনি, বুঝতে পারছি। কাজটা তোমার।
সতীর্থ খুনীর দেখা পেয়েছে বলেই হয়তো বার্টের গলাটা অপেক্ষাকৃত নরম, মনে হলো জুয়াড়ীর কাছে। খানিকটা সাহস ফিরে পেয়ে প্রতিবাদ করল সে, যুক্তি ছাড়া কথা বলছ।
আমরা দুজন ছাড়া স্যাণ্ড ক্রীকে র্যাঞ্চারকে খুন করার মত কেউ নেই। কাজটা তুমিই করেছ। গম্ভীর হয়ে গেল হুবার্টের চেহারা। আর আইন তোমাকে খুঁজছে বলেই এখনও আমার হাতে খুন হয়ে যাওনি তুমি।
তাছাড়া লোক দরকার তোমার, হাতের উল্টোপিঠে চেহারার ঘাম মুছে শুকনো গলায় বলল জুয়াড়ী।
আমি শুনেছি তুমিও একটা বিশেষ কাজেই ডেনভার থেকে এসেছ।
হ্যাঁ। বক্স বির জোডি বেঞ্চলির কাছে টাকা পাই। কিন্তু ওই র্যাঞ্চের সম্পত্তি ভাগাভাগির আগ পর্যন্ত আরও দুতিন মাস অপেক্ষা করতে হবে আমাকে। দুএক মুহূর্ত অপেক্ষা করে প্রশ্নটা করল সে, এই দুই মাসের মধ্যে করার মত কোনও কাজ আছে তোমার হাতে?
জবাব না দিয়ে দক্ষ হাতে প্যাট্রিক হলকে সার্চ করে দেখল হুবার্ট। .৩৮ টা নেই, অ্যাডাম রাখার পর থেকেই পড়ে আছে ড্রেসারের ওপর। নিজের সিক্সগান হোলস্টারে ঢুকিয়ে হাসল হুবার্ট। তোমার সাহস আছে। আমার সাথে কাজ করার মত?
কি ধরনের কাজ?
বড়। চার লক্ষ ডলারের।
নিচু সুরে শিস বাজাল জুয়াড়ী। সমান ভাগ পাব?
না। ষাট-চল্লিশ। সবকিছু আমাকে ভেবে ঠিক করতে হয়েছে। তারপরও গ্যানন উইলিসের দুগুণ অফার করেছি তোমাকে। পুরো টাকা নগদে পাবে। এক লক্ষ ষাট হাজার ডলার।
ট্রেন-ডাকাতি হলে আমি নেই।
ট্রেন-ডাকাতি না, কাজটা পাহাড়ে।
তাহলে তোমার সঙ্গী দরকার কেন?
পরে বলব। রাজি আছ? জুয়াড়ী সাথে সাথে মাথা ঝাঁকানোয় হাসল। হবার্ট। তাহলে চলো মদ গিলে নতুন বন্ধুত্বকে স্বাগত জানাই।
লোকজন দুজনকে একসাথে দেখুক চায় না ওরা। বড় রাস্তায় উঠে। আলাদা হয়ে গেল দুজন। ফাঁকা ট্রেন ডিপোয় গিয়ে ব্যাগেজ ট্রলির ওপর বসল প্যাট্রিক হল। ডেভিড মুরের সেলুন থেকে একবোতল হুইস্কি নিয়ে এসে তার পাশে বসল হিউ হুবার্ট। বোতলের গলা পর্যন্ত এক চুমুকে নামিয়ে দিয়ে বাড়িয়ে দিল প্যাট্রিক হলের দিকে।
চুমুক দিয়ে মুখ থেকে নামিয়ে বোতলটা দোলাল জুয়াড়ী। কাজের ব্যাপারে কিছু বলো।
দুবছর আগে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দুজন হান্টারকে এল শিকারে নিয়ে গিয়েছিলাম গ্যানন উইলিস আর আমি। ভয় ছিল না কোনও, হপার আর লরেন্সকে ছাড়া আর কাউকে চিনতে পারেনি পাসি গোলাগুলির মধ্যে। যাই হোক, আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম শিকারী দুজন শিকার করতে আসেনি। ক্যাম্পের ধারেকাছেই সর্বক্ষণ ঘুরঘুর করত ওরা, বড়জোর পায়ে হেঁটে জঙ্গলে ঘুরে আসত।
এক সকালে ওদের ট্র্যাক দেখে আমরা বুঝলাম রাতে ওরা দুজনেই ক্যাম্পের বাইরে ছিল। তাছাড়া ওদের কেনা একটা খাবারের বস্তা উধাও। গ্যানন ওদের শিকারে নিয়ে যাওয়ার পর পায়ের ছাপ অনুসরণ করলাম আমি। অনেকদূর যাওয়ার পর শক্ত মাটি আর পাথরে ট্রাক হারিয়ে ফেললাম।
তারমানে বস্তায় ভরে মূল্যবান কোনকিছু লুকিয়ে রেখেছে ওরা?
তাছাড়া আর কি! দুদিন পরই একটা করে ছোট এল মারল ওরা। বলল যথেষ্ট শিকার হয়েছে। মালপত্র গুছিয়ে বেল প্রিঙ পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম ওদের। স্টেজে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করে গেল আবার শিকারে আসতে চাইলে কোথায় আমাদের খোঁজ পাবে। ফেরিসের ঠিকানা, দিয়েছি আমি।
তারপর আর চেহারা দেখায়নি ওরা?
না। তবে শিকাগোর পেপারে ওদের ছবি দেখেছি। নাম আলাদা যদিও, তবু প্রথমবার দেখেই চিনেছি। ব্যাংকার, নিজেদের ব্যাংকের চারলক্ষ ডলার নিয়ে পলাতক। পুলিশের ধারণা মেক্সিকোতে চলে গেছে ওরা। কিন্তু আমি জানি সেমিনো মাউন্টিনে টাকা লুকিয়ে রেখে আত্মগোপন করে আছে।