ঘুরে দাঁড়াল স্ট্যানলি, জুয়াড়ীর হাত ধরে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেল।
ঘরে উপস্থিত একজনও অ্যাডামকে দোষ দিল না। ওরা অ্যাডামের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে। ঘুম থেকে ডেকে তুলে যদি ওদের বাবাকে, হত্যা করা হত, আইনের প্রতি অতি শ্রদ্ধা থাকত না ওদেরও।
গোলমালের আর কোনও সম্ভাবনা নেই দেখে একজন দুজন করে নিজেদের ঘরে ফিরে গেল ওরা। ঘরটা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পর অ্যাডাম ডেস্কের ওপর থেকে ব্যাজ আর সিক্সগানটা তুলে নিল, দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে এল ক্লান্ত পায়ে, নিজের ঘরে ঢুকে আছড়ে পড়ল বিছানায়। ঘুমিয়ে গেল চোখ বোজার সঙ্গে সঙ্গেই।
১৬.
সেলের দরজা খোলার ধাতব শব্দে ঘুম ভেঙে গেল এডমণ্ড হুপারের। মাঝরাতে ঘুমিয়েছে সে। জানালায় আলো না দেখে বুঝল এখনও রাত। পাশের সেলে কাকে যেন ঠেলে ঢোকানো হলো। আবার আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে গেল দরজা। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করল হুপার।
কনস্টেবলের সাথে নতুন বন্দীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুনে বুঝতে পারল লোকটা সাধারণ চোর হ্যাঁচোড় নয়। উঠে বসে তাকাল কৌতূহলী চোখে। লণ্ঠনের হলদে আলোয় কনস্টেবল এডকে দেখা গেল দুই নম্বর সেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। সেলের ভেতরে দাঁড়ানো লোকটার চেহারা পোশাকে হুপারের মনে হলো হয় উঁচু শ্রেণীর প্রতারক, নাহলে শহুরে জুয়াড়ী।
আইন আমার কম জানা নেই, খেঁকিয়ে উঠল প্যাট্রিক হল। উকিলের সাথে কথা বলতে চাই আমি।
দুঃখিত চেহারায় মাথা নাড়ল কনস্টেবল। র্যাঞ্চারের খুনী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন কারও সাথে দেখা করবে না মিস্টার হিগিনস। রলিন্সে সে ছাড়া আপাতত আর কোনও উকিল নেই। ঘুরে দাঁড়িয়ে করিডরের দরজা বন্ধ করে অফিসে ফিরে গেল সে।
চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেছে হুপারের, কটে বসে ভাবছে সে। খবরের কাগজে র্যাঞ্চারের খুন হওয়ার ব্যাপারটা পড়েছে। র্যাঞ্চারের শবযাত্রার দিনই ওকে ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিল লিঞ্চিঙ মব!
ঘটনাটা মনে পড়তেই শিউরে উঠল হুপার। পাশের সেলের। লোকটাই যদি র্যাঞ্চারের খুনী হয়ে থাকে, আবারও হামলা চালাতে, পারে উন্মত্ত জনতা। এবার হয়তো রাতের আঁধারে আসবে। কনস্টেবলের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে শুধু ওই লোককে খুন করতে নিয়ে যাবে না, ওকেও নিয়ে যাবে। ধূসর ভোরে ঘুম ভেঙে শহরবাসী হয়তো দেখবে র্যাঞ্চারের খুনীর পাশে টেলিগ্রাফ পোল থেকে ঝুলছে হবার্টের দোসর। তোমাকে ধরেছে কেন? মধ্যবর্তী শিকের ফাঁক দিয়ে পারের ফাঁসফেঁসে গলা শুনতে পেল জুয়াড়ী। বিনা কারণে, কাঁধ ঝাঁকাল সে। বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবে না।
মনে খানিকটা শান্তি ফিরে পেল হুপার। কটে শোয়র পর ঘুমাতে পারল।
সকাল সাতটার সময় ওদের ব্রেকফাস্ট এনে দিল অন্য একজন কনস্টেবল। নটায় প্যাট্রিক হলের সাথে কথা বলতে এল লইয়ার জ্যাক হিগিনস। চার্জ আনার মত কোনও তথ্য প্রমাণ হাতে না এলে মাঝরাতের আগেই শেরিফ তাকে ছেড়ে দেবে জানিয়ে চলে গেল।
তোমার বদলে যদি আমাকে ছেড়ে দেয়া হত! লইয়ার বিদায় নেয়ার পর প্যাট্রিক হলের দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলল হুপার।
কোনও জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না জুয়াড়ী। কটে শুয়ে পড়ল ঘুম দেয়ার জন্য। লোকটা নিশ্চিত তাকে ছেড়ে দেয়া হবে, মনে মনে বলল হুপার। ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে আপাত ভদ্রলোকের মুখোশের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে লোকটা।
বিকেল পর্যন্ত গভীর ভাবে প্রত্যেকটা আচরণ পর্যবেক্ষণ করে হুপারের মনে হলো প্যাট্রিক হল আর সে একই জগতের বাসিন্দা। সন্ধে নামার অনেকক্ষণ পর ভেতর থেকে একটা তাগাদা অনুভব করল সে। মনে হচ্ছে মূল্যবান সময় যেন ফুরিয়ে আসছে। হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে কি যেন একটা সুযোগ।
মাঝরাতের খানিক আগে হুপার বুঝতে পারল অবচেতন মন তাকে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। শিকে কপাল ঠেকিয়ে পায়চারিরত প্যাট্রিক হলকে সে ডাক দিল নিচু স্বরে। কৌতূহলী জুয়াড়ী কাছে এসে দাঁড়ানোর পর বলল, আমার হয়ে একটা খবর পৌঁছে দিতে পারবে একজনের কাছে?
কার কাছে? হুপারের অনুকরণে ফিসফিস করে জানতে চাইল প্যাট্রিক হল।
চারপাশে তাকিয়ে নিল হুপার মুখ খোলার আগে। তারপর বলল, হবার্ট। হিউ হুবার্টের কাছে।
আউট-লর নামটা রলিন্সে আসার আগেও শুনেছে জুয়াড়ী। এখানে, এসে শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়ার দশা। এতদিন কৌতূহল অনুভব করত সে। কিন্তু এখন হুপারের মুখে নামটা উচ্চারিত হওয়ার পর সতর্ক হিসেবী মনটা সজাগ হয়ে উঠল ওর। পুরো ওয়াইয়োমিঙ খুঁজছে হিউ হবার্টকে! হুপারের কাছ থেকে লোকটার ছদ্ম পরিচয় জানতে পারলে। ভবিষ্যতে তথ্যটা কোন কাজে লেগে যায় কে জানে।
খবর পৌঁছে দিতে যে বলছ, কিসের খবর? অদম্য কৌতূহল চেপে নিরাসক্ত একটা ভাব চেহারায় ফুটিয়ে তুলল প্যাট্রিক হল।
শুধু বললেই হবে আমাকে যাতে এখান থেকে বের করে নিয়ে যায়। নাহলে শেরিফকে আমি ওর পরিচয় জানিয়ে দেব।
তোমাকে জেল ভেঙে বের করবে কিভাবে?
হুবার্টের জন্য এটা কোনও ব্যাপারই না। কনস্টেবলকে ডাক দিয়ে দরজা খুলিয়ে মাথায় বাড়ি মেরেই কাজ সেরে ফেলতে পারবে সে।
তারপর কনস্টেবলের জ্ঞান ফেরার পর তো হিউ হুবার্টের পরিচয় জানবে সবাই। সেই ঝুঁকি হুবার্ট নেবে কেন?