গুজব রটল কার্বনে হুপারকে ছিনিয়ে নেয়া হবে। তাই গত মাসে শুধু লরেন্সকে নিয়ে শেরিফ এই ট্রেনে ফিরছিল।
লরেন্স তাহলে তখন রলিন্সের জেলে?
মাথা নাড়ল জুয়াড়ী। কার্বনে ওরা শেরিফের কাছ থেকে লরেন্সকে কেড়ে নিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে।
.
দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে ট্রেন। জানালা দিয়ে বিস্তৃত প্রান্তর আর দূরের মেডিসিন বো মাউন্টিনের জঙ্গলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল রোসা। সামনের স্টপেজ কার্বন, বগিতে ঢুকে অনুচ্চস্বরে জানিয়ে গেল একজন ব্রেকম্যান।
বন্দীর দিকে তাকিয়ে লোকটা কি ভাবছে বোঝার চেষ্টা করল রোসা। হুপার বোধহয় প্যান্ট নষ্ট করে ফেলেছে, বলল একজন যাত্রী।
তার পাশে বসা র্যাঞ্চার মাথা কঁকাল। কার্বন পেরনোর পরও লোকটা জীবিত থাকলে ওর ভাগ্য বলতে হবে। লরেন্সকে ওখানেই। ঝোলানো হয়েছে। পাসির মৃত সদস্য দুজন কার্বন শহরের লোক ছিল।
তোমার কি মনে হয় আবারও ওরা চেষ্টা করবে?
বোধহয় না, কুঁচকে বলল র্যাঞ্চার। ওরা জানে না শেরিফ এই ট্রেনে যাচ্ছে। খবর গোপন করার সবরকম চেষ্টা করেছে শেরিফ।
গম্ভীর চেহারায় রোসার দিকে তাকাল প্যাট্রিক হল। চলো তোমাকে অন্য কোচে বসিয়ে দিয়ে আসি। কার্বন পেরিয়ে যাওয়ার পর এখানে এসে বোসো আবার।
মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাল রোসা। জানতে চাইল, কার্বনে না থেমেও তো চলে যেতে পারে ট্রেনটা?
না। কার্বন কোল টাউন, এঞ্জিনে কয়লা নিতে ওখানে থামতেই হবে।
লম্বা হুইসল দিয়ে চালক বুঝিয়ে দিল ট্রেন কার্বনে প্রবেশ করছে। গতি কমে আসায় ধীর লয়ে খটখট আওয়াজ করছে এখন ফিশপ্লেট। স্টেশনে থামার পর জানালা দিয়ে প্ল্যাটফর্ম আর রাস্তাটা দেখল রোসা। লোক চলাচল করছে রাস্তায়। পোশাক দেখে বোঝা যায় বেশিরভাগই মাইনার। কোমরে সিক্সগান ঝুলছে অল্প দুএকজনের।
মনে হচ্ছে এবার কিছুই ঘটবে না, কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে থেকে হতাশ কণ্ঠে বলল যাত্রীদের কে যেন।
র্যাঞ্চার আঙুল তুলে রোসার দিকের জানালা দেখাল। ডিপোর পাশে টেলিগ্রাফের খুঁটিটা দেখেছ? লরেন্সকে ওটাতেই ঝোলানো। হয়েছিল।
শেরিফ রস লেম্যানের চেহারা থেকে দুশ্চিন্তার ছাপ দূর হয়ে যেতে শুরু করেছে। হাতের উল্টোপিঠে তাকে কপালের ঘাম মুছতে দেখল রোসা। এঞ্জিনের দিক থেকে ধাতব শব্দ ভেসে আসছে। বোধহয় কয়লা তোলার কাজ শেষের পথে।
.
আক্রমণ হলো বগির দুদিক থেকেই। নিখুঁত সময়জ্ঞান। দুমাথার দরজা। দিয়ে যোলো জন সশস্ত্র লোক ঢুকে পড়ল হুড়মুড় করে। কাউকে চেনার উপায় নেই, মুখোশ পরে আছে। শেরিফকে ঘিরে দাঁড়াল তারা। ভয়ে। ককিয়ে উঠল এডমণ্ড হুপার, কর্ণপাত করল না লোকগুলো। একজন হাত বাড়িয়ে শেরিফের কোল থেকে সিক্সগানটা তুলে নিল। চাবিটা দাও, রস, বলে উঠল আরেকজন।
সবার কথা বলার ভঙ্গিই বন্ধুত্বপূর্ণ। বোঝা যায় শেরিফকে ওরা পছন্দ করে। চাবি নিয়ে বন্দীর হ্যাণ্ডকাফ খুলে ফেলা হলো। থামাও! ঈশ্বরের দোহাই, ওদের থামাও! হুপারের আর্তনাদ ফেঁপানিতে পরিণত হলো। বগি থেকে তাকে হেঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যেতে এক মিনিটও লাগল না লোকগুলোর।
নিরস্ত্র, অসহায় শেরিফ অনুসরণ করল ওদের। যোলোজন মুখোশ পরা সশস্ত্র লোক হুপারকে টেনে নিয়ে ডিপোর প্ল্যাটফর্মের দিকে যাচ্ছে জানালা দিয়ে দেখল রোসা। শেরিফ আপ্রাণ চেষ্টা করছে উন্মত্ত, লোকগুলোকে বোঝাতে। কয়েকজন তাকে ঠেলে সরিয়ে দিল। টেলিগ্রাফ পোস্টের ক্রসআর্মের ওপর দিয়ে রশি গলিয়ে দেয়া হলো। বাড লরেন্সও এই খুঁটিতে ঝুলে মরেছে।
হুপারের গলায় ফাঁস পরানো হতেই প্যাট্রিক হল হাত বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করে দিল যাতে দৃশ্যটা রোসাকে দেখতে না হয়। দেখতে। না হলেও হুপারের কাকুতি মিনতি কানে এল ওর। কিছুক্ষণ পর লিঞ্চিঙ মবের নেতা কথা বলে উঠল। আমরা তোমাকে শেষ একটা সুযোগ দিচ্ছি, হুপার। আমাদের কথা শুনলে রলিন্সে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাবে, তা না হলে এখানেই তোমাকে ঝুলিয়ে দেব। তোমরা চারজন ছিলে। তুমি আর লরেন্স ছাড়া বাকি দুজন কারা?
আতঙ্কিত হুপার বুঝতে না পারায় একই কথা আবারও পুনরাবৃত্তি করা হলো। আমি বলব! সব বলব…আগে গলা থেকে দড়ি সরাও, কেঁদে ফেলল হুপার।
তুমি সত্যি বলছ বোঝার আগ পর্যন্ত দড়ি দড়ির জায়গাতেই থাকবে! ধমকে উঠল একজন।
হুপারের বলা প্রত্যেকটা কথা বোসা মনোযোগ দিয়ে শুনল। কোর্টে দাড়ানোর সুযোগ পাওয়ার জন্য হড়বড় করে কথা বলে চলেছে আউট ল।
আমরা চারজন ছিলাম। আমি, লরেন্স, গ্যানন উইলিস আর…
কোন্ গ্যানন উইলিস? কথা কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল একজন মুখোশধারী। যে লোকটা শাইয়ানে গানফাইটে মারা গেছে?
হ্যাঁ,ফোপানোর ফাঁকে ফাঁকে বলল হুপার, সেই আমাকে খারাপ পথে টেনে এনেছে।
আগে তুমি খুব ভাল মানুষ ছিলে, না? প্রাণে বাঁচতে চাইলে ফালতু কথা বন্ধ করে চার নম্বর খুনীর নাম জানাও, সাবধান করল একজন। দুইবার হুইসল বাজিয়ে ড্রাইভার বুঝিয়ে দিল ট্রেন ছাড়তে দেরি নেই।
অন্যজন হিউ হুবার্ট। আমি সত্যি বলছি, হুবার্ট এখন ওয়াইয়োমিঙের ফেরিসে। ট্রেনে ওঠার জন্য মরিয়া হুপার কবুল করল।
অবিশ্বাসের গুঞ্জন উঠল ভীড়ের মধ্যে। ফেরিস? ফেরিস তো এই কাউন্টিতেই! উত্তরে ঘোড়া ছোটালে রলিন্স থেকে মাত্র একদিনের পথ