আরও অনেক বড় মাপের একটা জুয়ায় কিভাবে চাল দেবে ভাবছে সে। বাইশ হাজার ডলারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়া যায় কিনা হিসেব কষছে। মনে অনেক রকমের সন্দেহ দোলা দিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, দুচোখে গরু দেখতে পারে না তারপরও বক্স বিতে গেল কেন জোডি? বড় ভাইকে কতটুকু বলেছে ছোঁকরা? খুনের জায়গায় আবার যেতে দশবার ভাবে যে-কোন খুনী। দুভাই কি তাকে সন্দেহ করেই টোপ ফেলেছে?
গর্তে পড়ে থাকা .৪৫ সিক্সগানটা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। হাজার হাজার গর্ত খুঁজে ওটা পাওয়া গেলেও কেউ ওকে দোষী প্রমাণিত করতে পারবে না। ধরা পড়ে যাওয়ার মত আর কোন সূত্র আছে কিনা জ কুঁচকে ভাবল প্যাট্রিক হল।
সন্দেহ হলেই ওকে সার্চ করবে অ্যাডাম। সে অধিকার ডেপুটি শেরিফ হিসেবে আছে তার। সার্চ করলেই ওর ওয়ালেটে পেয়ে যাবে দুটো কাগজ। একটা নব্বই দিনের মধ্যে বাইশ হাজার ডলার। পরিশোধের লিখিত রসিদ, অন্য কাগজটা জোডির ব্যাংক প্রত্যাখ্যাত নকল চেক। এই কাগজ দুটো র্যাঞ্চার ছাড়া আর কাউকে দেখায়নি সে। সই করেছে বলে জোডি রসিদের ব্যাপারটা জানে। কিন্তু সব চেক ছিঁড়ে যে একটা নকল চেক সে প্রমাণ হিসেবে রেখে দিয়েছে সেটা জানে না। জোডির ধারণা লিখিত রসিদ দিয়েছে, কাজেই সবকটা চেক ছিড়ে ফেলেছে সে। আপন মনে হাসল প্যাট্রিক হল। বাইশ হাজার ডলার আদায় করার পরও নকল চেকের গুণে জোডিকে ছিবড়ে বানিয়ে। ফেলতে পারবে সে। পশ্চিমে প্রতারণার দায়ে কারও জেল হলে সমাজে। সেই লোক টিকতে পারে না। নাহ্, গরু বিক্রির পুরো ছাপান্ন হাজার ডলার আদায় না করে ছোঁকরাকে ছাড়া যায় না, সিদ্ধান্ত নিল জুয়াড়ী।
কি ব্যাপার, আজ একা বলে যে? সিসিলিয়া এসে দাঁড়াল প্যাট্রিক হলের পাশে।
এমনি, ডার্লিঙ, উঠে দাঁড়িয়ে কাউন্টারের দিকে হাঁটতে শুরু করে বলল সে। সিসিলিয়ার নগ্ন কাঁধ দেখার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে আছে তার।
একটা খালি এনভেলপ দাও, চিপস ভাঙিয়ে ক্যাশ করার পে, কাউন্টারে গিয়ে ক্যাশিয়ারকে বলল হল।
নীল রঙের একটা ম্যানিলা এনভেলপ ক্যাশিয়ারের হাত থেকে নিয়ে ওপরে নিজের নাম লিখল সে। খামের মধ্যে জোডির রসিদ আর নকল চেকটা ভরে আঠা লাগাল। তারপর ক্যাশিয়ারের হাতে দিয়ে বলল, সেফে রেখে দাও।
মাথা ঝাঁকিয়ে মুখে মেকি হাসি ধরে রেখে নির্দেশ পালন করল ক্যাশিয়ার। গোল্ডরূমের মত জুয়া সর্বস্ব সেলুনে এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বড় অঙ্কের টাকা জিতে বাড়ি যাওয়ার পথে বিপদ হতে পারে ভেবে অনেক জুয়াড়ীই সেলুনের সেফে টাকা রেখে যায়। আমানত; রক্ষার অলিখিত নিয়ম মেনে চলে সেলুনগুলো। গোল্ডরূমের সেফে টাকা বা মূল্যবান কাগজপত্র রাখা ব্যাংকেরই মত নিরাপদ।
বার কাউন্টারে এসে সিসিলিয়ার মান ভাঙাতে ড্রিঙ্ক অফার করল সে। কিছুক্ষণ তোষামোদ করতেই একটু আগের অবহেলা ভুলে উচ্ছল হয়ে উঠল সিসিলিয়া, প্যাট্রিক হলের কাঁধে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করল, নতুন গোলাগুলির খবরটা জানো?
না তো, ডার্লিঙ!
আজ বিকেলে বেল স্প্রিঙস স্টেজ স্টেশনে ওরা আরেকটু হলেই পাইক হান্নাকে ধরে ফেলত। করাল ম্যানের মুখে শুনলাম লোকটা। ডেপুটি অ্যাডামকে আহত করে ল্যানডারের পথ ধরেছে।
পুরো খবর জানার কোনও আগ্রহ প্যাট্রিক হলের নেই বুঝতে পেরে কষ্ট করে বিস্তারিত বর্ণনাটা পেটের মধ্যে চেপে রাখল সিসিলিয়া, তবে পরবর্তী রূপমুগ্ধ কাস্টোমারকে শুনিয়েই ছাড়বে।
সেলুনের সেফে নকল চেকটা রাখতে পেরে স্বস্তি অনুভব করছে প্যাট্রিক হল। ওকে সার্চ করে ওটা পাওয়া গেলে সন্দেহের উদ্রেগ হতে পারত। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না ওই চেক দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলের ইচ্ছে ছিল তার, বা র্যাঞ্চারকে সে খুন করেছে। তবু কথা বলার সুযোগ। দিতে চায় না সে, শহরবাসীদের কথা বলার ধরনটা এখানে ভাল না। অনেক সন্দেহভাজন খুনীকেই কোর্ট থেকে ছিনিয়ে এনে ফাঁসিতে লটকেছে রলিন্সের জনতা।
প্যাট্রিক হল সিদ্ধান্ত নিল র্যাঞ্চ পর্যন্ত জোডিকে ধাওয়া করে যাবে না। গরু দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে শিগগিরই রলিন্সে আসতে বাধ্য হবে ছোঁকরা।
.
মাঝরাত পার করে গোল্ডরূম থেকে বেরল সে। এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা এসে ঢুকল হোটেলে। লণ্ঠনের আলোয় মৃদু আলোকিত হয়ে আছে লবি। হোটেল ক্লার্ক নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে একটা কাউচে। লোকটাকে না জাগিয়ে কাউন্টার থেকে চাবি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল প্যাট্রিক হল। কী হোলে চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিয়ে বুঝল দরজাটা খোলা। ঠেলা দিয়ে পাল্লা সরাতেই ভেতরে আলো জ্বলছে দেখতে পেল। ঘরের এককোণে চেয়ার টেনে বসে আছে ডেপুটি অ্যাডাম বেঞ্চলি। মাথায় বাধা লাল ব্যাণ্ডেজটা একসময় সাদা ছিল বোঝা যায় কাপড়ের রক্ত না লাগা অংশ দেখে।
ঢুকলে কি করে? স্বাভাবিক চেহারায় গলার স্বর নামিয়ে জানতে চাইল জুয়াড়ী।
তুমি যেভাবে ঢুকেছু। বসো, তোমার কাছে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব। চাই আমি।
দাঁড়িয়েই থাকল প্যাট্রিক হল। সার্চ ওয়ারেন্ট এনেছ?
না। তবে আনতে পারব।
ইচ্ছে থাকলে সার্চ করতে পারো, লুকানোর কিছু নেই আমার, বাম গোড়ালির টানে পেছনে দরজাটা বন্ধ করে দিল প্যাট্রিক হল।
আছে। তোমার ৩৮ সিক্সগানটা লুকানো হোলস্টার থেকে বের করে দেখাও।