কাঠের মেঝেতে অ্যাডামের পায়ের শব্দ পেল অলিভা।
আধঘণ্টা পর টেবিল ঘিরে বসল ওরা তিনজন। কেমন ঘুমিয়েছ? হেনরিক বিউয়েল জিজ্ঞেস করল।
মোটামুটি, জবাব দিল অ্যাডাম। কাল বিকেলে পৌঁছে বিউয়েলদের করালে বাকবোর্ড রেখেছে সে। স্যাডল চড়ানো ঘোড়াটাকে বেঁধেছে বার্নের ভেতর।
সকালেই রওয়ানা হতে চাইবে মনে করে ঘোড়াগুলোকে দানাপানি, খাইয়ে এসেছি, গালে পোরা সেদ্ধ ডিমটা চিবিয়ে গিলে ফেলে বলল অলিভার বাবা।
হাসি হাসি চেহারায় অলিভার দিকে তাকাল অ্যাডাম। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমি রাতে কোথায় ছিলাম, কি বলবে তুমি?
অ্যাডামের প্রশ্নে অবাক হলো অলিভা। কেন, বলব আমাদের সাথে ছিলে!
তুমি কি বলবে, হেনরিখ?
মেয়ের মত বাবাও নিশ্চিত অ্যাডাম সারারাত এখানে ছিল।
তাহলে ভুল বলবে তোমরা, তিক্ত স্বরে বলল অ্যাডাম। রাত একটায় জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়েছি আমি। বার্ন থেকে গোপনে। ঘোড়া বের করে পাঁচমাইল দূরের বক্স বি থেকে ঘুরে এসেছি।
কেন? বোকা বোকা দেখাল অলিভাকে।
সময় জানার জন্য। রাত দুটোয় পৌঁছেছি ওখানে। তিনটের মধ্যেই ফিরে এসে বার্নে ঘোড়া রেখেছি।
কিন্তু কেন? চোখ জোড়া আরও বড় বড় হলো অলিভার।
কেউ এভাবে বক্স বিতে যেতে পারে কিনা দেখার জন্য। উঠে। দাঁড়িয়ে টেবিল থেকে তুলে মাথায় হ্যাট পরল অ্যাডাম। রলিঙ্গে কেউ। গেলে তাকে দিয়ে বাকবোর্ড পাঠিয়ে দিয়ো, বার্নে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে পৌঁছে বলল সে, এই মুহূর্তে আমি দেরি করতে চাই না।
অ্যাডাম ঘোড়ায় চড়ে বার্ন থেকে বেরিয়ে আসার পর হেনরিখ বিউয়েল দরজায় দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে জানতে চাইল সে কোথায় যাচ্ছে।
প্যাট্রিক হল নামের এক লোকের সাথে দেখা করতে, রলিন্সের পথে দ্রুত ছুটন্ত ঘোড়া থেকে জবাব দিল অ্যাডাম বেঞ্চলি।
.
ডেভিড মুরের র্যাঞ্চের মাইল তিনেক আগে ল্যারি এবং অন্যান্য কাউহ্যাণ্ডদের গরু তাড়িয়ে আনতে দেখল অ্যাডাম। ওদের পাশ কাটানোর আগে ল্যারিকে বলল, জোডি জানতে চাইবে কয়টা গরুর বাচ্চা হলো। ওকে বোলো নিজে গিয়ে খোঁজ নিতে। স্যাডল চড়িয়ে একটা ঘোড়া তৈরি রেখো ওর জন্য, গরুর বাচ্চা গুনতে কাজে লাগবে। ফোরম্যানকে অবাক চোখে তাকাতে দেখে রাসে ঝাঁকি দিয়ে হাসল অ্যাডাম। পরে তোমাকে সব বুঝিয়ে বলব, ল্যারি।
।বিকেলে বেল প্রিঙসে খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্টের সামনে থামল পরিশ্রান্ত অ্যাডাম। করালে ঘোড়াটা একজনের দায়িত্বে বুঝিয়ে দিয়ে জানতে চাইল ভেতরে কেউ আছে কিনা।
অপরিচিত একজন এসেছে লাঞ্চ করতে। বলছে ল্যানডারে যাবে। জানাল করাল ম্যান।
নতুন এসেছে এখানে?
হ্যাঁ, ঘোড়া দলাইমলাই করতে করতে জবাব দিল করাল ম্যান। নতুন লোক না হলে জিজ্ঞেস করত না কোনদিকের রাস্তা ধরে গেলে ল্যানডারে পৌঁছানো যাবে।
কৌতূহলী অ্যাডাম রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখল কাউন্টারের পাশে একটা, টেবিলে বসে আছে লোকটা। সরু, লম্বাটে চেহারা। গায়ের ফ্যাকাসে ত্বক দেখে বোঝা যায় কখনও র্যাঞ্চে কাজ করেনি। পুরানো, কুঁচকে যাওয়া একটা শহুরে কোট পরেছে, কলারে কফির দাগ। গোগ্রাসে খাচ্ছে। শ্লৈষ্ট থেকে বেকন আর স্টেক তুলে।
পরিচিত কুকের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল অ্যাডাম। একটা প্লেটে আমাকেও দাও।
ওর গলার আওয়াজ শুনে তাকাল লোকটা। চোখের দৃষ্টি আটকে গেল অ্যাডামের বুক পকেটের ওপর। লোকটা উঠে দাঁড়ানোর পরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না অ্যাডাম। ডেপুটির চাকরি
বেশিদিন করলে ও বুঝতে পারত লোকটার চেহারা ওর বুকের ব্যাজ দেখেই বদলে গেছে। অপ্রস্তুত অ্যাডাম দেখল কোটের পকেট থেকে পিস্তল বের করে; ট্রিগার টিপল লোকটা। চুলে সিথি কেটে খুলির চামড়া ছিড়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল বুলেট। ঝুঁকিতে আছড়ে পড়ল অ্যাডাম। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় দেখতে পেল না ওকে টপকে এক দৌড়ে করালে গিয়ে ঘোড়ায়। উঠে ছুটেছে আগন্তুক।
মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাঁপটায় জ্ঞান ফিরল অ্যাডামের। মাথায় হাত। বুলিয়ে চোখের সামনে এনে দেখল রক্তাক্ত হয়ে গেছে তালু। ওর ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে কুক আর করালের সেই লোকটা। রেস্টুরেন্টের মালিক স্টেশন মাস্টার কালকের আগে কোনও স্টেজ আসবে না দেখে বউকে নিয়ে রলিন্সে গেছে।
শুধু চামড়া ছড়েছে, ওকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে মন্তব্য করল, কুক।
কোথায় গেছে? চারপাশে তাকিয়ে দুর্বল কণ্ঠে জানতে চাইল অ্যাডাম।
ল্যানডারের রাস্তা ধরেছে। টেলিগ্রাফ লাইনটা থাকলে রঙ্গিসে খবর। পাঠিয়ে ওকে ধরার ব্যবস্থা করা যেত। আফসোস করল করাল ম্যান। কালকের স্টেজে খবর পাঠানোর আগেই কাউন্টি ছেড়ে পালাবে। লোকটা।
ওকে চিনতে পেরেছি আমি, উত্তেজিত স্বরে বলল কুক। তাই তো বলি ঢোকার পর থেকেই চেনা চেনা লাগছে কেন! ওর ছবি দেখেছি, রলিন্স পোস্ট অফিসের দেয়ালে সাঁটা ওয়ান্টেড পোস্টারে। পাইক হাননা!
ল্যারামি জেল ভেঙে পালানো পাঁচ অপরাধীর কথা মনে পড়ল। অ্যাডামের। ডেপুটি স্ট্যানলির হাতে ট্রেন ডিপোতে মরেছে একজন। তিনজন আবার ধরা পড়েছে, স্পাইক হান্নাই কেবল পালিয়ে বেড়াচ্ছে এখনও।
আমার দোষেই ব্যাপারটা ঘটল, বলল কুক। পরিচিত চেহারা দেখে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম রলিন্স পোস্ট অফিসে সে কাজ করে, কিনা। তখন থেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগছে লোকটা। তারপর ডেপুটির ব্যাজ পরা তোমাকে ঢুকতে দেখে মনে করেছে খেল খতম।
১৫.
অনেকক্ষণ হলো গোল্ডরূমে একটা টেবিল দখল করে বসে আছে প্যাট্রিক হল। স্টাড গেমের হাউসম্যানের আমন্ত্রণ আজ উপেক্ষা করেছে সে। ঝলমলে গোল্ডরূম সেলুনের সমস্ত আকর্ষণও আজ রাতে তার বিরক্তি দূর করতে পারছে না।