তোমার ভাইকে সেজন্যেই র্যাঞ্চে পাঠাচ্ছ? কণ্ঠস্বরে কেন যেন হতাশ মনে হলো রোসাকে।
না। আরও কি যেন বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেল অ্যাডাম।
ওর মনের কথা বুঝে ফেলল লইয়ার। মাথা নেড়ে বলল, ভাবছ ক্যাটলগুলোর প্রেমে পড়ে যাবে জোডি। কিন্তু আমার মনে হয় না কাজ হবে।
অত নিশ্চিত হয়ো না, হাসল অ্যাডাম। জোডির বয়স যখন দশ ছিল তখনকার একটা স্মৃতি মনে আছে আমার। বজ্রপাতে একমাসের বাচ্চা রেখে মারা গিয়েছিল একটা গরু। বাচ্চাটাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বোতলে করে দুধ খাইয়ে বড় করেছিল জ্যোডি। ঘটনাটা ও ভুলে যেতে পারে, আমি ভুলিনি। হয়তো মনের গভীরে এখনও ক্যাটল ভালবাসে ও।
তুমি ছাপ্পান্ন হাজার ডলার হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছ, অ্যাডাম। বড়ধরনের ঝুঁকি। গরুগুলো পেয়েই বেচে দেবে জোডি, জুয়া খেলে প্যাট্রিক হলের মত কারও কাছে খুইয়ে বসবে সব।
তুমি বুঝতে পারছ না, মিস্টার হিগিনস, আমার যা কিছু আছে তা জোডিকে আমি দেব না কেন! অসহায় ভঙ্গিতে শ্রাগ করল অ্যাডাম।
কিন্তু আমি বুঝেছি, হঠাৎ বলে উঠল রোসা। মেয়েটার দৃষ্টিতে উষ্ণতা দেখতে পেল অ্যাডাম। টাকা বা সম্পত্তির কথা ভাবছ না তুমি, ভাবছ শুধু জোডির কথা। ওর ভালর জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে রাজি আছ। তুমি।
মেয়েটা ওর মনের কথা বুঝে ফেলায় লজ্জায় বাচ্চাছেলের মত দুগাল লাল হয়ে উঠল অ্যাডামের। রোসার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে লইয়ারের উদ্দেশে বলল, জোডির সাথে আমার চুক্তির কাগজপত্র তৈরি করে ফেলো, মিস্টার হিগিনস। আমি বাকবোর্ড ভাড়া করে ফিরে এসে সই করে দেব।
.
হেয়েস হোটেলের লবিতে জোডির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করল অধৈর্য প্যাট্রিক হল। একঘণ্টা পরেও যখন ফিরল না, জোডির খোঁজ করতে চেয়ার ছাড়ল সে। একের পর এক বারে খুঁজে দেখল। পোন্ড রূমে ঢোকার আগে ওকে পাশ কাটাল একটা বাকবোর্ড। পেছনে,স্যাডল। চড়ানো অবস্থায় বাধা আছে একটা ঘোড়া। বাকবোর্ডের রাস ধরে আছে অ্যাডাম বেঞ্চলি, পাশে জোডি। দাড়ি গোঁফ কামানোয় বাচ্চা ছেলের মত দেখাচ্ছে তাকে।
প্যাট্রিক হল ওদের থামানোর জন্য হাঁ করার আগেই ওকে পেরিয়ে গেল বাকবোর্ড। দ্রুতগতিতে ছুটছেফেরিসের পথে। পেছন থেকে তাকিয়ে রইল প্যাট্রিক হল।
১৪.
ক্যাটলগুলো নিয়ে বক্স বির পথে মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ এগিয়েছে কাউহ্যাণ্ডরা। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই ওদের পাশে পৌঁছে গেল বাকবোর্ড। নয়শো গরু আর বিশটা ষাড় নিজেদের ওড়ানো ধুলোতেই প্রায় চোখের আড়াল হয়ে আছে। ফেরিস আর সেমিনো রেঞ্জের ফঁক–দিয়ে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওগুলোকে।
তোমার কথামতই ধীরেসুস্থে যাচ্ছি, বাকবোর্ডের পাশে ঘোড়া ছুটিয়ে অ্যাডামের উদ্দেশে চেঁচাল ফোরম্যান ল্যারি। রাত নামার আগে ডেভিড মুরের র্যাঞ্চে পৌঁছুতে পারলে ভাগ্য ভাল বলতে হবে। পেছনের সারির পেট ফোলা গরুগুলোকে আঙুল তুলে দেখাল সে। পেটে বাচ্চা নিয়ে জোরে হাঁটতে পারছে না।
ওগুলোকে আলাদা করে ডেভিড মুরের র্যাঞ্চে রেখে যেয়ো, বুদ্ধি বাতলে দিল অ্যাডাম। জোডিকে দেখিয়ে বলল, আমার ভাই। রাঞ্চে থাকির্বে কয়েকদিন। র্যাঞ্চে ফিরে সবার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে, দিয়ে। ত্রুরা কেউ একবছরের বেশি চাকরি করেনি বক্স বিতে। জোডিকে কেউ চেনে না, নাম শুনেছে শুধু।
নড করে ঘোড়া বাকবোর্ডের পাশ থেকে সরিয়ে নিল ল্যারি। এগিয়ে যেতে যেতে জোডিকে গরুগুলো দেখাল অ্যাডাম। চমৎকার, তাই না!
গরু তো গরুই, নির্বিকার চেহারায় জবাব দিল জোডি।
ডেভিড মুরের র্যাঞ্চে পৌঁছে কুকের সাথে কথা বলল অ্যাডাম। কুক জানে বসের বন্ধু ছিল বিলি বেঞ্চলি। বেড়ার ভেতর গরুগুলো রাখতে দিতে আপত্তি করল না সে। দুশো গরু আলাদা করে রাখা হলো হোল্ডি ফেন্সে।
সন্ধের পর বাজার্ড গ্যাপে পৌঁছুল বাকবোর্ড। দীর্ঘক্ষণের নীরবতা ভেঙে অ্যাডাম জিজ্ঞেস করল, প্যাট্রিক হল তোমার কাছে কত পায়?
কত পায় বলেছে?
কিছু বলেনি। তোমার লেখা একটা নোট তার কাছে আছে জানিয়েছে, বাবার কাছে তোমার ঠিকানা জানতে এসেছিল। সে ভালমতই জানত আমার ঠিকানা, বলল জোডি, আমাকে চিঠিতে তাগাদাও দিয়েছে।
কত পায়?
তোমার জানার কোনও দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
জোর করল না অ্যাডাম, নোকটা মিথ্যে বলেছে কেন ভাবল চিন্তিত চেহারায়।
স্পূকি র্যাঞ্চে রাত কাটাল ওরা। সকালে পৌঁছে গেল স্যাণ্ড ক্রীকে। উপত্যকায় ফোঁটার মত দেখাচ্ছে অন্যান্য র্যাঞ্চের গরুগুলোকে। ওগুলোর সাথে ছেড়ে দেব আমাদেরগুলো, বলল অ্যাডাম, পরবর্তী রাউণ্ডআপে আলাদা করে নিলেই হবে, ওমাহা থেকেই ক্যাটলগুলো ব্যাণ্ডিঙ করিয়ে এনেছি।
ক্যান্টলিন র্যাঞ্চে পৌঁছুনোর রাস্তায় পড়ে বামে মোড় নিল ওরা। বেলা দশটার সময় পৌঁছে গেল বক্স বিতে। বাকবোর্ড ঘুরিয়ে জোডির কাছ থেকে বিদায় নিল অ্যাডাম। বাকবোর্ডের পেছনে স্যাডল চড়ানো ঘোড়াটাও দড়ির টানে ফেরিসের দিকে রওনা হলো। আজকে ফেরিসে বিশ্রাম নিয়ে কালকে রলিন্সে ফিরে যাবে সে, কেন যেন ওর মনে হচ্ছে বাবার খুনীকে খুঁজে পাবার পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে।
.
পরদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার জন্য বাবাকে ডাকল অলিভা বিউয়েল। তারপর ডাইনিঙ রূমের মই বেয়ে উঠে গিয়ে ট্র্যাপ ডোরে করাঘাত। করল। ব্রেকফাস্টের সময় হয়ে গেছে, অ্যাডাম, ঘুম থেকে ওঠো।