র্যাঞ্চ জাহান্নামে যাক! অবুঝের মত চেঁচাল জোডি বেঞ্চলি, ওই গরুগুলো আমার টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। সব টাকা ফেরত চাই আমি। মনে রেখো, হিগিনস, একটা কানা কড়িও ছাড়ব না!
আমার কিছু করার বা বলার নেই, গম্ভীর স্বরে বলল লইয়ার। তোমার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। হলেও যে টাকা, তুমি চাইলেই পেয়ে যেতে তা নয়। কিন্তু এখন ব্যাপারটা আরও অনেক জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাকা পেতে তোমার দেরি হবে। হোটেলের ম্যানেজারকে গিয়ে বোলো তোমার বিল যেন সে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। সমস্ত ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর পাওনা টাকা কেটে রাখব আমি।
সিঁড়ির ল্যাণ্ডিঙে দাঁড়িয়ে যথেষ্ট শুনেছে প্যাট্রিক হল। নিঃশব্দে রাস্তায় নেমে এল সে, হেয়েস হোটেলে ঢুকে লবিতে বসল জোডির দেখা পাবার আশায়। বুঝে গেছে আপাতত ছোঁকরাকে মুচড়ে টাকাআদায় করা যাবে না। তবু দেনার কথাটা ওকে মনে করিয়ে দেয়া দরকার।
*
লইয়ারের অফিসে অ্যাডামের দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকল বাকি তিনজন। আমার মনে হয়, একটু আগে বলেছে সে, জোডি তাড়াতাড়ি পাওনা বুঝে পাবে তার একটা ব্যবস্থা করা যায়।
ভুরু কুঁচকে গেল জ্যাক হিগিনসের। ব্যাপার কি, অ্যাডাম, সব, ছেড়েছুড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছ নাকি?
না। আমার বুঝতে ভুল না হলে যা আমি চাই তা-ও পাওয়া যাবে। ওই ব্যবস্থায়।
একটা চেয়ারে রুগ্ন দেহটা এলিয়ে দিয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে বড়, ভাইয়ের দিকে তাকাল জোডি। মনে কোন চালাকি থাকলে ভুলে যাও, অ্যাডাম। আমি প্রাপ্য টাকা বুঝে নেবই।
তুমি জানো কারও সাথে বাটপাড়ি করা আমার স্বভাব নয়, রোসার ডেস্কের কোনায় বসে নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল অ্যাডাম। একটা সিগারেট রোল করে জিজ্ঞেস করল, খাও? জোডি সিগারেটটা নেয়ায়, ম্যাচ। জ্বেলে আগুন ধরিয়ে দিল। নিজের জন্য রোল করল আরেকটা সিগারেট। অবাক বিস্ময়ে অ্যাডামকে দেখছে রোসা। পশ্চিমে এই কদিনে বহু ধরনের মানুষ দেখেছে সে, কিন্তু তারা কেউ সামনে। দাঁড়ানো এই মানুষটার মত নয়। কিছু একটা আছে অ্যাডামের ভেতরে যেটা আর কারও নেই।
আমার একটা কথা রাখো, জোডি। র্যাঞ্চে ফিরে চলো, সমস্ত কিছুর অধিকার তোমার হাতে তুলে দেব আমি। শর্ত, না? ব্যঙ্গ ঝরে পড়ল জোডি বেঞ্চলির হাসিতে। আমি জানতাম চালাকি আছে।
কোনওচালাকি নেই। তুমি শুধু বক্স বিতে গিয়ে থাকবে। কয়েকদিন। কোনও কাজ করতে হবে না, সমস্ত দিক সামলাবে কাউহ্যাণ্ডরা।…
আমি রলিন্সের হোটেলে থাকলে তোমার এত অসুবিধা কিসের? সন্দেহ ফিরে এল জোডির চোখে।
অসুবিধা নেই, তবে বাবার ইচ্ছে পূরণ হোক সেটাই চাই। তোমাকে বেশিদিন র্যাঞ্চে থাকতে হবে না, কোনও কাজ করতে হবে। বিনিময়ে তুমি চাইলে আমি কাগজে লিখে সই করে দেব আমার কোনও সম্পত্তি চাই না।
চিন্তিত চেহারায় দাড়ি চুলকাল জোডি বেঞ্চলি। অ্যাডামের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে না সে, তবে সত্যি সত্যিই যদি কাগজে লিখে দেয় কোনও সম্পত্তি নেবে না তাহলে মন্দ কি! অ্যাডাম সম্পত্তি নেবে না জানলে ঝামেলা অনেক কম হবে। খুব দ্রুত গরুগুলো বেচে নগদ টাকা হাতে পাবে সে। কয়দিন থাকতে হবে? অবশেষে জিজ্ঞেস করল জোডি।
জবাবটা শুনে থতমত খেয়ে গেল লইয়ার আর রোসা। চেয়ারে বসে বড় ভাইয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জোডি।
নয়শো গরু আছে বক্স বির। পঞ্চাশটার বাচ্চা প্রসব হওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানে থাকবে তুমি। তারপর ওই পঞ্চাশটা বাচ্চা গরু ছাড়া আর সবকিছুই তোমার হয়ে যাবে।
তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি, অ্যাডাম? চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল লইয়ার। একমাসের মধ্যেই তো অন্তত দুশো বাচ্চা হবে হেফারগুলোর। আমি গরু চিনি না, তা-ও তো বুঝেছি ওগুলোর পেট দেখে। তাছাড়া সম্পত্তি জোডি পাবে তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। যদি প্রমাণ হয় খুনের সাথে সে জড়িত, তাহলে?
খবরদার, ফালতু কথা বলবে না, উকিলের দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠল জোডি। এইমাত্র যা বললে লিখে দেবে তুমি? জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে অ্যাডামের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সে। প্রস্তাবটা লোভনীয়। অবশ্যই, মাথা ঝাঁকাল অ্যাডাম। একটা দশ ডলা; নোট বের করে বাড়িয়ে ধরল ছোট ভাইয়ের দিকে। নাপিতের দোকানে চুলদাড়ি কেটে এসো। একঘণ্টা পর বাকবোর্ড ভাড়া করে রাস্তা থেকে তোমাকে তুলে নেব আমি।
কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে টাকাটা নিল জোডি, অফিস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে জানতে চাইল, সব আমার হয়ে গেলে তুমি চলবে কি করে?
দুবছর আগে আমাদের নিজেদের পঞ্চাশটা গরুও ছিল না। ঠিকমত র্যাঞ্চ চালালে আবার আমার সব হবে, হাসল অ্যাডাম। জোডি চলে যাবার পর আপন মনে বলল, কি ঘটে দেখি। প্যাট্রিক হল ওর কাছে টাকা পায়। আমি দেখতে চাই জোডিকে র্যাঞ্চে চলে যেতে দেখে লোকটি কি করে।
বিরক্তিতে মাথা চুলকাল জ্যাক হিগিনস। কি আর করবে, একবার র্যাঞ্চে গেছে জোডির খোঁজে। রাস্তা যখন চেনে আবার যাবে।
হয়তো একবার নয়, দুইবার গেছে।
প্রমাণ কোথায়? ভ্রূ কুঁচকাল চিন্তিত লইয়ার। দ্বিতীয়বার রাতে গিয়ে থাকলে তোমার বাবাকে সে-ই খুন করেছে। কিন্তু আইন চায় প্রমাণ।
খুনের জায়গায় সাধারণত যায় না খুনী। দেখি জোডির পেছন পেছন বক্স বিতে প্যাট্রিক হল যায় কিনা।