রাস্তার মোড়ে ক্রস আর্ম লাগানো টেলিগ্রাফের খুঁটিটা দেখছে। কার্বনের, মতই এখানেও কয়েকজনের হাতে দড়ির ফাঁস!
দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াও তোমরা! কাঠের গুঁড়ি হাতে তেড়ে আসার সময় চেঁচাল কয়েকজন দুদিক থেকে।
জবাবে ওদের মাথার একফুট ওপর দিয়ে শুভেচ্ছা পাঠাল। কনস্টেবল। স্ট্যানলি গুলি করল পায়ের কাছে।
হাউমাউ কান্নার আওয়াজ ভেসে এল সেলের ভেতর থেকে। গলা ছেড়ে বিলাপের ফাঁকে ফাঁকে কাদছে হুপার। চেঁচিয়ে হুমকি দিতে শুরু করল রাস্তায় দাঁড়ানো সশস্ত্র লোকগুলো।
স্ট্যানলি বুঝতে পারছে এভাবে ওদের বেশিক্ষণ আটকে রাখা যাবে। কোনও অপরাধবোধ নেই লোকগুলোর, ছোটবেলা থেকে যা স্বাভাবিক বলে জানে তাই করতে এসেছে। অপরাধীর মুখ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে ঝুলিয়ে দেয়াকে খারাপ কিছু মনে করে না ওরা। খেপে ওঠার আগ পর্যন্ত সাধারণ ভালমানুষ সবাই। হুপারের মত একটা খুনীকে বাঁচাতে ওদের খুন করতে পারবে না কনস্টেবল বা সে।
আসছে ওরা! এড ম্যাকলিন চেঁচাল ডেপুটির উদ্দেশে।
স্ট্যানলির দিকের লোকজন গুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তেড়ে আসার হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু আসছে না। ওরা চায় ডেপুটি ব্যস্ত থাকুক, তাহলে কনস্টেবলকে সাহায্য করতে পারবে না। এড ম্যাকেনলির শটগান গর্জে উঠেছে আওয়াজে বুঝল স্ট্যানলি। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল কয়েকজন।
দমেনি লোকগুলো, কাঠের গুঁড়ি কনস্টেবলের দরজায় সশব্দে আঘাত করায় কেঁপে উঠল জেলহাউস। দরজা অক্ষত আছে, ভেঙে পড়ার শব্দ হয়নি। আরেকবার! গুড়িসহ পিছিয়ে যেতে যেতে চেঁচাল কয়েকজন।
ওর দিকের লোকগুলো এক পাও এগোয়নি। ওদের মাথার ওপর দিয়ে জানালার দিকে তাকাল স্ট্যানলি। মেয়েটা নেই, বোধহয় ভয় পেয়ে সরে গেছে। ড্রাগ স্টোরের সামনে হিচর্যাকের ওপর চোখ পড়তে দেখল ওর স্যাডল চড়ানো স্ট্যালিনও গায়েব!
.
গুঁড়ি দিয়ে কনস্টেবলের দরজায় চারবার আঘাত করা হলো। বোল্ট আটকে আছে, কিন্তু ভাঙতে শুরু করল দরজার কাঠ। চারবার আগুন উগরেছে এড ম্যাকেনলির শটগান। চার-পাঁচজন গালি দিয়ে খোঁড়াতে, খোঁড়াতে পিছিয়ে গেছে, কিন্তু চলে যায়নি।
অন্যদিকের দরজায় হুমকি ধামকি ছাড়া অন্যকিছুর মোকাবিলা করতে হচ্ছে না স্ট্যানলিকে, কিন্তু কনস্টেবলকে সাহায্য করতেও যেতে পারছে না সে। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে শটগান টেনে নিলেই এক পা এগিয়ে আসে লোকগুলো, শটগান তাক করলেই আবার পিছিয়ে যায়। ভয় দেখানোর জন্য একটা গুড়ি লক্ষ্য করে গুলি করল স্ট্যানলি। মুখ খিস্তি করে পিছিয়ে গেল লোকগুলো, কিন্তু এখনও তুলে ধরে আছে গুঁড়িটা।
কারা যেন আসছে! চেঁচিয়ে উঠল একজন।
স্ট্যানলিও শুনতে পেয়েছে শব্দটা। দ্রুতগতিতে এদিকে ছুটে
আসছে কয়েকটা ঘোড়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল ওদের। ছয়জন অশ্বারোহী, প্রত্যেকের হাতেই উদ্যত সিক্সগান কবরস্থানের দিক থেকে আসছে। স্ট্যানলি হঠাৎই বুঝতে পারল জানালায় রোসাকে দেখতে পায়নি কেন, বুঝতে পারল ওর ঘোড়াটা হিচর্যাক থের্কৈ কেন উধাও হয়েছিল।
ভাগো এখান থেকে, মাতালের দল! কাছে এসে গর্জে উঠল শেরিফের দুই ভাই, জিম আর নেলি। মীকার ম্যাসাকারে অসামান্য বীরত্ব দেখিয়েছিল জিম। গোটা শহরের আদর্শ সে। জিম লেম্যানের দিকে আঙুলও তাক করবে না রলিন্সের কেউ।
কাঠের গুঁড়িগুলো মাটিতে ফেলে নিমেষে আশে পাশের গলিতে ঢুকে গা ঢাকা দিল পঞ্চাশ-ষাটজন লোক, চেহারা ঢেকে রাখতে ব্যস্ত সবাই। স্ট্যানলি সিদ্ধান্ত নিল কাউকে বিচারে দাঁড় করাবে না। রক্ত যা ঝরেছে ওদের নিজেদেরই ঝরেছে।
দরজা খুলে জিম লেম্যানকে ঢোকার পথ করে দিল কনস্টেবল। গভীর চেহারায় ভেতরে ঢুকে করিডরের দরজা খুলে হুপারকে দেখল জিম। তোমার মত খুনীকে বাঁচাতে আমরা ফিউনারাল ছেড়ে এখানে আসিনি, হুপার, বলল সে মাথা নেড়ে। এসেছি এড আর স্ট্যানলির যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য।
ডেভিড মুর এক পা এগিয়ে স্ট্যানলির দিকে তাকাল। জিম ঠিকই। বলেছে, জ্যাক হিগিনসের ভাতিজির মুখে যা শুনলাম তাতে মনে হয়েছিল তোমাদের বিপদ হতে পারে।
অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ড্রাগস্টোরের সামনে দাঁড়াল স্ট্যানলি। সিডার স্ট্রীটের শেষ মাথায় ধীরে ঘোড়া ছুটিয়ে রোসাকে আসতে দেখল। ঘোড়া চড়ায় অনভ্যস্ত পরিশ্রান্ত চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, যে কোনও মুহূর্তে জ্ঞান হারাবে ওয়াইয়োমিঙে নতুন এসেই ইতিহাস গড়া মেয়েটি।
দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে ঘোড়াটাকে থামাল স্ট্যানলি। দুহাত বাড়িয়ে রোসাকে নামিয়ে আনল। গম্ভীর গলায় বলল, অসংখ্য ধন্যবাদ, রোসা।
না, না, এমন আর কি, লজ্জায় লাল হয়ে স্ট্যানলির কাছ থেকে। এক পা সরে দাঁড়াল বোসা।
অফিসে যাবে, না হোটেলে?
হোটেলে।
একসাথে হেঁটে ম্যাক্সওয়েল হোটেলে ঢুকল ওরা। রোসা পাশে থাকায় রাস্তায় প্যাট্রিক হলকে কখন পাশ কাটিয়ে এসেছে খেয়াল করেনি স্ট্যানলি। কিন্তু ডিপোতে ট্রেন থামার শব্দে মাথার ভেতর সতর্ক ঘণ্টি বেজে উঠল ওর।
রোসাকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এল। ডিপোর। কাছাকাছি পৌঁছে-বোর্ডওয়াকে জুয়াড়ীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। লোকটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এইমাত্র পৌঁছুনো ক্যাটল ট্রেনের দিকে।
ক্যাটল নামাতে শুরু করেছে বক্স বির কাউহ্যাণ্ডরা। ছাপ্পান্ন হাজার ডলারের ক্যাটল, আপনমনে বলল স্ট্যানলি। কার? অ্যাডাম, না জোডির? জুয়াড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখল চেহারায় চতুর হাসি ফুটে উঠেছে লোকটার।
১২.
ম্যাক্সওয়েল হোটেলে সাপার টেবিলে লইয়ারের সাথে স্ট্যানলি আলাপ শুরু করল। রোসা এখনও ঘর ছেড়ে বেরয়নি, এলে তখন খাবারের অর্ডার দেয়া হবে।