কনস্টেবল ওকে আসতে দেখেছে, দরজা খুলে দিল সে। বিস্মিত কণ্ঠে বলল, তোমাকে শবযাত্রায় দেখেছি বলে মনে হচ্ছে, ডেপুটি!
কথা বাড়াবার সুযোগ দিল না স্ট্যানলি। শটগান লোড করো, এড, অ্যামুনিশনের বাক্স খুলে হাতের কাছে রাখো। কার্বনের মত একই ঘটনা এখানে ঘটাতে চাইছে কিছু লোক।
বেআইনী কিছু যাতে না ঘটে সেজন্যেই আমাকে চাকরি দেয়া হয়েছে। হাতের তালুতে থুতু দিয়ে চাপড় মারল কনস্টেবল। র্যাক থেকে শটগান হাতে নিয়ে দুটো ট্রিপল এ শেল ভরল দ্রুত হাতে। অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে না গেলে বাকশট ব্যবহার করবে না।
সিডার স্ট্রীট কাভার দাও তুমি, বলল স্ট্যানলি, আমি ফিফথ স্ট্রীটের দিকে নজর রাখব।
দুদিকের দরজাতেই ওপরের অংশে মোটা শিক আছে লিঞ্চিও মবকে বাধা দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার সুবিধার্থে। নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে ফাঁকা রাস্তাটা দেখল ডেপুটি। উল্টোদিকের বিল্ডিঙের দোতলায় জানালা দিয়ে রোসাকে একপলকের জন্য দেখতে পেল সে।
কই আমার তো মনে হয় না কিছু ঘটবে, খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে বলল কনস্টেবল।
হওয়া শুরু হয়ে গেছে, সাবধান, এড! ফিফথ স্ট্রীটে আশেপাশের গলি থেকে একদল লোককে বেরিয়ে আসতে দেখে সতর্ক করল স্ট্যানলি। উত্তর দিক থেকে দ্রুত, নিঃশব্দ পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে ওরা অমোঘ নিয়তির মত। সংখ্যায় পঞ্চাশজনেরও বেশি। সশস্ত্র লোকগুলো পরিচিতি প্রকাশের ভয়ে মুখোশ পরে আছে।
দুটো দরজাই বন্ধ, জেলহাউসে ঢোকার আর কোনও পথ নেই। জানালাগুলো দেয়ালের অনেক উঁচুতে, মোটা শিক দেয়া।
রাস্তার মোড়ে এসে দুভাগ হয়ে গেল নীরব লোকগুলো। দুদরজার সামনে অবস্থান নিল। কেউ কেউ পরিচয় ঢাকার জন্য মুখের নিম্নাংশে রুমাল বেঁধেছে। ওর দিকের লোকগুলোর মধ্যে অন্তত ছয়জনকে চিনতে পারল স্ট্যানলি। মুখোশ পরা থাকলেও লাল শার্টের কারণে বিল লেপম্যানকে চিনে ফেলল।
সিডার স্ট্রীটের দিক থেকে একটা কণ্ঠস্বর চেঁচিয়ে বলল, দরজা খুলে দাও, এড ম্যাকলিন, হুপারের সাথে কথা আছে আমাদের।
জবাবে দরজার গ্রিলের ভেতর দিয়ে শটগানের নল বের করে লোকগুলোর মাথার দুফুট ওপর দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ল কনস্টেবল। অবিচল কণ্ঠে সাবধান করল, পরের বার হাত কেঁপে গেলে কিন্তু তোমাদের গায়ে লাগবে।
সিডার স্ট্রীটে ভীড় করে থাকা লোকগুলো নিচু স্বরে গালি দিয়ে দুএক ফুট পিছালেও স্ট্যানলির দিকে জড় হওয়া লোকগুলো এগুলো।
ওরা ভেবেছে ভেতরে কনস্টেবল একাই আছে। লোকগুলো যখন দরজা থেকে ফুট দশেক দূরে, গ্রিলের ভেতর দিয়ে শটগান বের করে ট্রিগার টানল স্ট্যানলি। উঁচুতে গুলি করার ঝুঁকি নিল না সে। রাস্তার উল্টোদিকে লইয়ারের অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে উৎসুক চোখে কাণ্ডকারখানা দেখছে বোসা। লিঞ্চিঙ মবের একফুট সামনে ধুলো ওড়াল ট্রিপল এ ছররা।
চমকে উঠে পিছিয়ে গেল লোকগুলো। একজন মাতাল ফাটা গলায় জানতে চাইল, তোমার সাথে আরও কেউ আছে, এড?!
তৈরি জবাব দিল কনস্টেবল। শেরিফ আর তার তিন ভাই এখন আমার সাথে। গুজব ছড়িয়ে দিয়ে আর যাকে হোক রস লেম্যানকে বোকা বানাতে পারোনি তোমরা।
তুমিও মিথ্যে বলে আমাদের বোকা বানাতে পারোনি, এড, ব্যঙ্গ করে বলল ভীড়ের সামনে দাঁড়ানো নেতা গোছের একজন। আমরা। জানি শেরিফ সালফারে গেছে। তার ভাইদের যেতে দেখেছি। শবযাত্রায়।
ওটা জেরাল্ড স্ট্যানলির ঘোড়াটা না? একজন আঙুল তুলে ড্রাগস্টোরের সামনে হিচর্যাকে বাঁধা ঘোড়াটা দেখাল। সে-ই বোধহয় কনস্টেবলের সাথে আছে!
চুপ হয়ে গেল লোকগুলো। এই নামটাকে ভয় পায় কাউন্টির আইন অমান্যকারীরা। ওরা ভেবেছিল সবার সাথে স্ট্যানলিও শবযাত্রায় গেছে।
আমরা তোমার সাথে লাগতে চাই না, স্ট্যানলি, উঁচু গলায় বলল একজন। আমরা চাই হুপারের মুখ খোলাতে। হুবার্টের খবর আদায় করেই ওকে তোমার হাতে তুলে দেব আমরা।
টম, দরজার শিকের মধ্যে শটগানের ব্যারেল নড়িল স্ট্যানলি, বাড়াবাড়ি করলে গুলি করতে বাধ্য হব।
মুখোশ পরে থাকার পরও ডেপুটি তাকে চিনে ফেলায় ভয় পেয়ে ভীড়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল টম সোরেনসন। নিচু গলায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করল লোকগুলো। ওরা স্বপ্নেও ভাবেনি জেরাল্ড স্ট্যানলির মুখোমুখি হতে হবে।
লোকগুলোর সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে করিডরের দরজা খুলে ভেতরে তাকাল ডেপুটি। ছাইয়ের মত ফ্যাকাসে মুখে উবু হয়ে কটে বসে আছে এডমণ্ড হুপার, দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে নামছে। আমাকে ওদের হাতে তুলে দিয়ো না, কতির গলায় বলল সে, ওদের ঠেকাও।
ডিসেম্বরে বিচারে তোমার ফাঁসি হবে। তবু আমি দেখব কোর্টরুমে। যাতে জীবিত পৌঁছুতে পারো, করিডরের দরজা বন্ধ করার আগে বলল স্ট্যানলি। ফিরে এসে দরজার শিকের পাশে দাঁড়িয়ে দেখল তর্কাতর্কি শেষ করেছে লোকগুলো। নেতা বদল হয়েছে, এখন আটজনের উপদলে ভাগ হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে তিনজন। কোত্থেকে যেন তিনটা কাঠের গুঁড়ি জোগাড় করে আনা হয়েছে।
দুটো গুঁড়ি এদিকের দরজা ভাঙার জন্য রেখে বাকিটা অন্য রাস্তায়। ভীড় করে থাকা লিঞ্চিঙ মবের ব্যবহারের জন্য দিয়ে এল কয়েকজন লোক।
জ্যাক হিগিনসের জানালার দিকে তাকাল স্ট্যানলি। অবাক চোখে, রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে রোসা। মাঝে মাঝেই ভয় মেশানো দৃষ্টিতে