মাথা ঝাঁকাল স্ট্যানলি। শেরিফকে শ্রদ্ধা করে সে, জানে বিনা কারণে সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠেনি রস লেম্যান। শহরের লোকজন কি হুপারকে ছিনিয়ে নিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর কথা ভাবছে?
শেরিফ ঘোড়া দাবড়ে শহরের বাইরে চলে যাবার পর একজন কনস্টেবলকে সর্বক্ষণ অফিসে থাকতে বলে রাস্তায় বেরিয়ে এল সে। ডেভিড মুরের সেলুনে যাওয়ার পথে হেয়েস হোটেল চোখে পড়তেই মনে পড়ে গেল গ্যানন উইলিসকে লরা নামের মেয়েটা মধ্য সেপ্টেম্বরে এই হোটেলে উঠতে বলেছিল। সিদ্ধান্ত বদলে হোটেলে ঢুকল স্ট্যানলি। জিজ্ঞেস করায় ক্লার্ক জানাল লরা নামের কেউ এই হোটেলে থাকেনি কখনও।
হোটেলের বাররূমে ঢুকে দেখল একটা টেবিলে বসে ফিসফিস করে কথা বলছে কয়েকজন। ডেপুটির ওপর চোখ পড়তেই অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে চুপ হয়ে গেল সবাই। ওদের মধ্যে র্যাফটার ক্রসের স্যাণ্ডি পেকোসও আছে। টেবিলের ধারে এসে দাঁড়িয়ে স্ট্যানলি বলল, গোপনীয় কিছু না হলে আমাকেও বলতে পারো।
না, না, গোপন কিছু না, তাড়াহুড়ো করে বলল স্যাণ্ডি পেকোস। ল্যারামি জেল ভেঙে বেরনো আসামীদের ব্যাপারে কথা বলছিলাম আমরা।
লোকটা মিথ্যে বলছে স্পষ্ট বুঝতে পারল স্ট্যানলি। শেরিফ ঠিকই বলেছে, সেলুন আর বারগুলোয় বসে কোনও একটা পরিকল্পনা আঁটছে লোকজন।
স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা রাইডারদের কয়জন শইরে আছে খোঁজ নিতে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এল সে। একটা সেলুনে দেখল ম্যাভরিক প্লামারকে। ঘণ্টাখানেক আগে দেখেছে বিল লেপম্যানকে। পকেট থেকে লিস্টটা বের করে তিনটা নামের পাশে নখ দিয়ে দাগ দিল স্ট্যানলি।
দুটো লিভারি বার্ন ঘুরে জস হারমার আর জুডাস অ্যাডলারের ঘোড়া দেখতে পেল। তারমানে ওরা এখনও শহরে আছে।
হারমার আর ফিরে যাবে না, তথ্য যোগাল বাচাল সহিস। রলিন্সে আসতে বাধ্য করায় বসের ওপর খেপে আছে। বলেছে এই অপমান সহ্য করে চাকরি করা যায় না।
আরও কয়েক জায়গায় খোঁজ নিয়ে লিস্টের সবগুলো নামের পাশে নখ দিয়ে চিহ্ন দিল স্ট্যানলি। স্যাণ্ড ক্রীকের সাত রাইডারের একজন ছাড়া বাকি কেউ ফিরে যায়নি। ম্যাক্সওয়েল হোটেলের ডাইনিং রূমে খাওয়ার সময় লইয়ার আর রোসাকে তদন্তের অগ্রগতি জানাল সে।
তাহলে কি দাঁড়াল ব্যাপারটা? টাক চুলকাল জ্যাক হিগিনস। কিলরন হার্পার ফিরে গেছে। লু মেয়ার আর জস হারমার অপমানিত বোধ করায় কাজ ছেড়ে দিয়েছে। লুমেয়ার চলে গেছে দক্ষিণে, হারমার শহরেই আছে। আরও আছে ম্যাডরিক প্লামার, স্যাণ্ডি পেকেসি, বিল লেপম্যান আর জুডাস অ্যাডলার।
প্যাট্রিক হলকেও হিসেব থেকে বাদ দিয়ো না। হাসল স্ট্যানলি।
হ্যাঁ, মুখ শুকিয়ে গেল লইয়ারের। এখনও অ্যাডামকে কিছু বলিনি, কিন্তু কালকে বলতে হবে। ফিউনারালের পরেই আলাপ করতে আসবে অ্যাডাম।
তুমি শেষকৃত্যে যাবে না? রোসা জিজ্ঞেস করল স্ট্যানলিকে।
যাওয়া উচিত, স্ট্যানলি বলল, দেখি পারি কিনা। র্যাঞ্চারের সম্মানে সকাল দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সমস্ত দোকানপাট। সবাই ওখানে গেলে শহর খালি হয়ে পড়বে, আমার এখানেও থাকা উচিত।
.
পরদিন সকাল দশটায় শহরের ছোট্ট গির্জায় প্রার্থনা করতে আসা মানুষজনের জায়গা হলো না। পঞ্চাশ মাইল দূর থেকেও এসেছে কেউ কেউ। গির্জার সামনে ট্রেনের মত লম্বা লাইন হলো ক্যারিজ আর ওয়াগনের। লাশ কবরস্থানে নেয়ার পথে নীরবে অনুসরণ করল সবাই। মিছিলের শেষে শেরিফের ছোট ভাইয়ের পাশে ঘোড়া হাঁটিয়ে এগুলো স্ট্যানলি।
জিম লেম্যান আর্মি স্কাউট ছিল। গত বছর একটানা একশো সত্তর মাইল ঘোড়া ছুটিয়ে মীকার ম্যাসাকারের খবর রলিন্সে বয়ে এনেছিল সে। অবিশ্বাস্য কাণ্ডটা ঘটানোয় সারা দেশের খবরের কাগজগুলো ওকে নিয়ে আরও অনেক অবিশ্বাস্য গল্প ফেঁদেছে। শেরিফের তিন ভাইয়ের মধ্যে জিমের নাম ডাকই সবচে বেশি।
কবরস্থানে যাওয়ার পথে ওরা দেখল দুপাশের রাস্তার সব দোকানপাট বন্ধ। বালির ওপর অশ্ব খুরের মৃদু শব্দ ছাড়া চারদিকে অন্য কোনও আওয়াজ নেই।
ফিফথ স্ট্রীটে শবযাত্রা পৌঁছুনোর পর কালো হুড দেয়া ক্লোক পরা এক মহিলা ডেপুটির দৃষ্টি আকর্ষণ করল হাত নেড়ে। হুডে চেহারা ঢেকে থাকায় মহিলাকে চিনতে পারল না ডেপুটি, জিম লেম্যানকে হাতের ইশারায় এগিয়ে যেতে বলে বোর্ডওয়াকের পাশে ঘোড়া থামাল।
তুমিই ডেপুটি স্ট্যানলি? নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল মহিলা।
তিরিশ হবে না বয়স, আন্দাজ করল স্ট্যানলি। মহিলা যথেষ্ট সুন্দরী। কাছ থেকে দেখে চিনতে পেরে বলল, তুমি রেল লাইনের উল্টোধারে দাঁড়িয়ে আছ, মার্গারিট।
রলিন্সে অলিখিত নিয়ম হচ্ছে যেসব মেয়েরা দুনিয়ায় আদিমতম–পেশা বেছে নিয়েছে তারা রেল ট্র্যাকের এদিকে আসবে না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার না থাকলে এ সিডার স্ট্রীটে কেন এসেছে, ভাবল স্ট্যানলি।
সেলুনের লোকজন মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে শেরিফকে সরিয়ে দিয়েছে হিপারকে জেল ভেঙে বের করে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য, সময় নষ্ট না কিরে তথ্যটা দিয়েই নিজের গন্তব্যে পা বাড়াল পতিতা।
পরিস্থিতি বুঝতে সময় লাগল না স্ট্যানলির। কবরস্থান শহর থেকে একমাইল উত্তরে। সবাই যাচ্ছে সেখানে র্যাঞ্চারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে, খালি শহরে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে উন্মত্ত মাতালরা!
১১.
কবরস্থানে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে ড্রাগস্টোরের সামনের হিচর্যাকে ঘোড়া বাঁধল স্ট্যানলি। পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেল পাথরের জেল হাউসে।