প্যাট্রিক হলের পেছনে খোলা দরজায় একজন কাউহ্যাণ্ডকে এসে দাঁড়াতে দেখল সে। পরিস্থিতি বুঝে সময় নষ্ট করল না কাউহ্যাও। সিক্সগান হোলস্টার মুক্ত করে সজোরে নামিয়ে আনল জুয়াড়ীর মাথায়। কাটা কলাগাছের মত মেঝেতে আছড়ে পড়ল প্যাট্রিক হল।
পাশের ঘরটায় উঠেছি আমি। তোমাদের ঝগড়া শুনে দেখতে। এসেছিলাম কি হচ্ছে, ব্যাখ্যা দিল কাউহ্যাণ্ড।
অসংখ্য ধন্যবাদ, জুয়াড়ীর .৩৮ উবু হয়ে তোলার ফাঁকে বলল স্ট্যানলি।
ওর কি ব্যবস্থা করবে? কাউহ্যাণ্ড কৌতূহল প্রকাশ করল।
থাকুক পড়ে এখানে, জ্ঞান ফিরলে যে মাথা ব্যথাটা থাকবে সেটাই ওর শাস্তি, হাসল স্ট্যানলি। জুয়াড়ীকে জেলে ভরে রাখার মত কোনও তথ্য প্রমাণ ওর হাতে নেই, খামোকা ঝামেলা না বাড়ানোই ভাল। চলো, বিল, ক্লার্ককে বলে ওর জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে, কাউহ্যাণ্ডকে ঘর থেকে বেরতে ইশারা করল সে।
কাউহ্যাণ্ডের পাশে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় তিক্ত হাসল। মজার ব্যাপার হচ্ছে একজন সন্দেহভাজন আরেকজনের হাত থেকে তাকে বিপদমুক্ত করেছে। ফ্রাই প্যানের বিল লেপম্যানও স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা সাতজন রাইডারের একজন।
১০.
লবিতে এসে অ্যাডাম বেঞ্চলিকে রেজিস্টার খাতায় সই করতে দেখল ডেপুটি। লইয়ার অ্যাডামের কাঁধে হাত দিয়ে নরম গলায় সান্ত্বনা দিচ্ছে। তুমি বিশ্রাম নাও, অ্যাডাম, আমরা সবকিছু সামলে নেব।
মাথা নাড়ল অ্যাডাম। তার বাদামী চোখ জোড়া জ্বলছে। লাগেজ খুলে গানবেল্ট কোমরে ঝুলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পর স্ট্যানলিকে দেখতে পেল সে। শেরিফের সাথে কথা বলব আমি। শহরে আছে?
হাতের ইশারায় পথ দেখাল স্ট্যানলি। দুজনে হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে বোর্ডওয়াক ধরে হাঁটতে শুরু করল। অ্যাডাম যথেষ্ট লম্বা, তারপরও ডেপুটির কাঁধ সমান মাত্র। পরনের টাউন স্যুট লম্বা ট্রেন জার্নিতে আভিজাত্য হারিয়েছে। পার আর বুট দেখে বোঝা যায় র্যাঞ্চার।
চুপচাপ হাঁটছিল ওরা কার্বন কাউন্টি জার্নালের সাংবাদিক স্যাম গারউড এসে জোটার আগ পর্যন্ত। লেকটা অ্যাডামের দিকে প্রশ্নবান ছুঁড়তে শুরু করল। কে খুন করেছে বলে তুমি মনে করো, অ্যাডাম?
চোয়াল শক্ত হয়ে গেল অ্যাডামের, জবাব না দিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল।
দমবার পাত্র নয় সাংবাদিক। হিউ হুবার্ট লোকটা কে বলে তুমি মনে করো, অ্যাডাম?
থমকে দাঁড়িয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল অ্যাডাম, তোমার কি ধারণা?
এখানে প্রশ্ন করতে এসেছে সাংবাদিক, জবাব দিতে নয়। অ্যাডামের কথা গায়েই মাখল না সে। জোডির খবর জানো? প্যাট্রিক হল ওর কাছে কত টাকা পায়? প্রতিবেশীদের সাথে কোনও গোলমাল ছিল তোমার, বাবার?
সাংবাদিকের ঘাড় ধরে ঠেলা দিয়ে বোর্ডওয়াক থেকে নামিয়ে দিল। অ্যাডাম। তোমার কিছু জানা থাকলে বলো, নাহলে দূর হয়ে যাও। আমার সামনে থেকে।
নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে বাধল স্ট্যানলির। আড়ামের। মত ভদ্র নম্র যুবক এভাবে বদলে যেতে পারে!
শেরিফকে অফিসেই পেল ওরা। ডেস্কের পেছন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হ্যাণ্ডশেক করল রস লেম্যান গম্ভীর চেহারায়। জানাল সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে খুনীকে পাকড়াও করার জন্য।
আমিও তোমাদের সাথে খুঁজব তাকে, বলল অ্যাডাম। আমাকে বিনা বেতনের ডেপুটি করো লোকটা ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত।
আড়চোখে অ্যাডামের উরুতে বাঁধা সিক্সগানের বাট দেখল লেম্যান, কি যেন ভাবল দুএক মুহূর্ত। তারপর বলল, যদি কথা দাও লোকটাকে চেনামাত্র খুন করবে না, ডেপুটি হতে পারো। আমাদের লোকবল কম, ভাল একজন ডেপুটি পেলে কাজের অগ্রগতি দ্রুত হবে।
আমি রাজি, গম্ভীর কণ্ঠে বলল অ্যাডাম।
তাহলে ডানহাত উঁচু করো।
অস্থায়ী ডেপুটি হিসেবে অ্যাডিমি বেঞ্চলিকে শপথ গ্রহণ করাল শেরিফ। একটা ব্যাজ তার বুকে সেঁটে দিয়ে বলল, যতক্ষণ এটা পরে থাকবে, আমার নির্দেশ মানতে হবে তোমাকে। আমার প্রহ্ম নির্দেশ হচ্ছে আজ সারারাত ভালমত ঘুমাবে তুমি। কাল থেকে আমার নির্দেশ মত খুনীকে খুঁজতে শুরু করবে।
আপত্তি করল না অ্যাডাম, মাথা ঝাঁকিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। একটা চেয়ার টেনে আরাম করে বসল স্ট্যানলি, সিগারেট ধরাল। শেরিফের ঘোড়া বাইরের হিচর্যাকে দেখে এসেছে তাই জিজ্ঞেস করল, তোমার ঘোড়াটা যাওয়ার পথে বানে রেখে যাব?
আমার আর ওই বেচারার কপালে বিশ্রাম নেই, ক্লান্ত চেহারায় হাসল রস লেম্যান। কে নাকি সালফার প্রিঙসে স্পাইক হানুনাকে দেখেছে। গুজবও হতে পারে, তবে যাওয়া উচিত।
রলিন্স থেকে দক্ষিণে যোলো মাইল দূরে সালফার স্প্রিঙস। হোয়াইট রিভার স্টেজ রুটের ঘোড়া ওখানে বদলে নতুন ঘোড়া সরবরাহ করে স্টেশনটা।
তোমাকে কে জানাল? জিজ্ঞেস করল স্ট্যানলি।
স্টেজ ড্রাইভার কার কাছে যেন শুনেছে আমাকে এসে বলল। তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আছে। কথায় কথায় বার্নে স্টেজ ড্রাইভার আমার ভাইকে জানিয়েছে সালফার স্প্রিংসে লরা নামের একটা মেয়ে কিছুদিন ছিল, খুবই নাকি সুন্দরী। এই লরাও আমাদের লরা হতে পারে।
হাত বাড়িয়ে রাইফেল আর হ্যাট তুলে নিল শেরিফ। আমি যাচ্ছি। তুমি খোঁজ নাও স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা সাতজন রাইডারের মধ্যে কজন এখনও শহরে আছে। কালকেই ফিরে আসার চেষ্টা করব। দরজায় পৌঁছে থমকে দাঁড়াল শেরিফ, চিন্তিত চেহারায় কাঁধের ওপর দিয়ে বলল, চোখ-কান খোলা রেখো, স্ট্যান। ঘণ্টাখানেক আগে ডেভিড মুরের সেলুনে গিয়েছিলাম। কি যেন বলাবলি করছিল লোকগুলো, আমাকে দেখেই চুপ হয়ে যায়। আমি চলে যাচ্ছি ভান করে ব্যাটউইঙের, এপারে চলে আসতেই আবার আলোচনা শুরু করে ওরা।