পারো, ক্লান্ত স্বরে বলল স্ট্যানলি। ভার্জিনিয়ায় একটা চিঠি পাঠাতে হবে। লোকের নাম জানি শুধু, ঠিকানা জানি না। পুলিশ চীফকে লিখতে হবে খোঁজ নিতে বলে।
ডেপুটির কাছ থেকে একটা কাগজের টুকরো নিয়ে নামগুলোর ওপর চোখ বোলাল রোসা। কাজ হবে মনে হয়?
বোধহয় হবে। দুবছর আগে ভার্জিনিয়া থেকে আসা পার্টির জন্য। হফের কাছ থেকে ঘোড়া ভাড়া করেছিল গ্যানন উইলিস। আমার কপাল ভাল হফ কথাটা এতদিন পরেও মনে রেখেছে!
পুলিশ চীফ হান্টারদের খুঁজে বের করলে তারপর?
গ্যানন উইলিসের সঙ্গীর চেহারা কেমন ছিল জিজ্ঞেস করবে। হফের ওখানে লোকটা আসেনি। গ্যাননের সঙ্গী ছিল সম্ভবত হবার্ট। শিকার করতে চার্লি রবিনসন আর নেলসন আর্চারকে বেশিদূর নিয়ে। যায়নি ওরা, কারণ স্টোরের লেজার অনুযায়ী মাত্র দশদিনের রসদ নিয়েছিল ভার্জিনিয়ান হান্টাররা। এলক শিকারে র্যাটস্নেক মাউন্টিন বা উইও রিভার রেঞ্জে যায়নি, গিয়েছিল ফেরিস রেঞ্জ বা সেমিনো মাউন্টিনে।
চিঠি লেখা শেষ করল রোসা। মুক্তোর মত হস্তাক্ষরে একবার চোখ। বুলিয়ে রোসাকে ধন্যবাদ দিয়ে অফিস থেকে বেরল স্ট্যানলি। দ্রুত পায়ে হেঁটে পৌঁছে, গেল রেল ডিপোতে।
জ্যাক হিগিনস উকিলের কালো কোট পরে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে–আছে প্ল্যাটফর্মে। দূরের রেলওয়ে ট্রাকের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ তার। অ্যাডাম বেঞ্চলির সাথে এই পরিস্থিতিতে দেখা করার দায়িত্ব ঘাড়ে এসে চাপায় অস্বস্তি বোধ করছে লইয়ার। ট্রেন লেট, ডেপুটি পাশে এসে দাড়ানোয় বলল সে।
অ্যাডাম আসছে জানি, কিন্তু জোডিও কি এই ট্রেনেই আসবে? আলাপ চালানোর খাতিরে জানতে চাইল ডেপুটি। অ্যাডামকে উইলের ব্যাপারটা বলবে?
যতক্ষণ না বলে পারা যায় বলব না, টাক চুলকাল হিগিনস। তাছাড়া অ্যাডামকে চিনি, সে এসব ব্যাপারে কোনও কথা তুলবে না, ট্রেন থেকে নেমেই খুঁজতে শুরু করবে বাবার খুনীকে।
ওকে দেরি করিয়ে দেয়ার চেষ্টা কোরো। ভার্জিনিয়ায় পুলিশ চীফের কাছে চিঠি পাঠানোর ব্যাপারটা খুলে বলল স্ট্যানলি।
ওদের চারপাশে লোক গমগম করছে। কেউ এসেছে পরিচিতদের রিসিভ করতে, কেউ এসেছে ট্রেন ধরার জন্য। পরিচিত বুড়ো ব্যাগেজম্যানকে দেখতে পেয়ে কদিন আগের কথা মনে পড়ল স্ট্যানলির। সেদিনও একই ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল ও, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।
ল্যারামি থেকে পাচজন পালিয়েছিল, বাকি চারজনের কোনও খবর? জানো? গতকালের পেপারে দেখলাম ওদের তিনজন ধরা পড়েছে, বলল। লইয়ার, স্পাইক হান্না এখনও পলাতক। তাকে শেষ দেখা গেছে ওয়ার্ম স্প্রিংসের কাছে।
প্ল্যাটফর্মের এককোণে প্যাট্রিক হলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল, স্ট্যানলি। জোডির জন্য অপেক্ষা করছে লোকটা, নাকি পালিয়ে যেতে চায় ট্রেনে উঠে? প্যাট্রিক হল জানে তাকেও সন্দেহ করা হবে। জানে রলিন্সে কিরকম জনপ্রিয় ছিল বিলি বেঞ্চলি–মানুষজনের মুখে নিশ্চয়ই। শুনেছে। ভালমত খেয়াল করে দেখল ডেপুটি, লোকটার কাছে প্ল্যাটফর্মে কোনও মালপত্র নেই, ব্যাগেজ এখনও হোটেলেই আছে তো?
নিশ্চিত হবার জন্য দ্রুত পায়ে হেঁটে ডিপো থেকে বেরিয়ে এল সে। ম্যাক্সওয়েল হাউসে ঢুকে ক্লার্ককে জিজ্ঞেস করল, প্যাট্রিক হল হোটেল ছেড়ে দিয়েছে? ক্লার্ক মাথা নাড়ানোয় বলল, আমার চাবিটা অন্য প্যান্টের পকেটে রয়ে গেছে, জেস, পাস কীটা দাও।
ক্লার্কের কাছ থেকে পাস কী নিয়ে দোতলায় উঠে এল স্ট্যানলি। নিজের দরজায় ব্যবহার না করে প্যাট্রিক হলের ঘরের তালা খুলে ফেলল। ওর ঘরের দুটো ঘর পরের এই রূম থেকে ডেনভারের জুয়াড়ীকে বেরতে দেখেছে সে, ঘর চিনতে অসুবিধা হলো না।
বিছানার পাশে খোলা লাগেজ এলোমেলো পড়ে আছে মেঝেতে। চেয়ারের ওপর একটা কোঁচকানো শার্ট আর টাই। ড্রেসারের ওপর একটা কাগজের বাক্সে রাখা আছে কাফ লিঙ্ক, স্টাড আর টাই পিন। চলে যাবার ইচ্ছে থাকলে এসব এভাবে ফেলে রাখত না প্যাট্রিক হল।
পুরো ঘর ভালমত সার্চ করল স্ট্যানলি। সন্দেহজনক কিছু না পেলেও মন থেকে খুঁতখুঁতে ভাবটা দূর করতে পারল না। গুরুত্বপূর্ণ যা। কিছু নিজের সাথেই রাখবে জুয়াড়ী।
ট্রেন রলিন্সে পৌঁছে গেছে কাজে ব্যস্ত ডেপুটি টেরও পায়নি। দরজা। খুলে যাওয়ার শব্দও শুনতে পেল না সে। সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে এসেছ?
চমকে উঠল পেছন থেকে প্যাট্রিক হলের প্রশ্নে। অপ্রস্তুত চেহারায় ঘুরে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়ল।
সময় নষ্ট করছ, আমার লুকানোর কিছু নেই, রাগে লাল চেহারায় বলল জুয়াড়ী।
ড্রেসারের ওপর চোখ আটকে গেল স্ট্যানলির। জিনিসটা ঘরে ঢুকেও দেখেছে, তাৎপর্য বুঝতে পারেনি তখন। আঙুল তুলে ড্রেসারের ওপর রাখা বাক্সটা দেখাল। তুমি বলেছিলে .৪৫ ক্যালিবারের সিক্সগান নেই তোমার।
ঠিক। মাথা দোলাল বিস্মিত প্যাট্রিক হল।
কিন্তু ছিল, গম্ভীর গলায় বলল ডেপুটি, নাহলে .৪৫ ক্যালিবারের বুলেটের বাক্স তোমার কাছে কেন?
একসময় ছিল। এখন এটা ব্যবহার করি, কোটের ভেতর হাত ঢুকিয়ে একটা .৩৮ বের করে কক করল সে। তারপর লক্ষ্যস্থির করল। ডেপুটির মাথায়। অনধিকার প্রবেশ করেছ, তোমাকে খুন করলেও কারও কিছু বলার নেই।
স্ট্যানলি বুঝতে পারেনি লোকটা ড্র করবে। অবাক হলেও তার চেহারায় কোনও ছাপ পড়ল না। খুন করতে পারো, তবে পার পাবে না। সবাই মনে করবে তোমার সম্বন্ধে আমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু জেনে ফেলেছিলাম সেজন্যই খুন করেছ।