স্ট্যানলি ঘণ্টি বাজানোর খানিক পরে নোঙরা চেহারার হোটেল ক্লার্ক এসে হাজির হলো খালি গায়ে।রূম? ঘুম জড়ানো স্বরে হাইয়ের ফাঁকে জিজ্ঞেস করল।
না। ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড কোথায়?
দুই তলায় দুইশো পাঁচ নম্বর রূমে খুঁজে দেখো। সে ফিরেছে বলে মনে হয় না। ঘুমাতে চলে গেল হোটেল ক্লার্ক। দোতলায় উঠে ম্যাক্স ব্র্যাণ্ডের ঘর খুঁজে বের করল স্ট্যানলি। নক করে কোনও সাড়া-শব্দ পেল না। দরজা লক করেনি ফ্রেইটার, জোরে নক করার ধাক্কাতেই ক্যাঁচকোঁচ শব্দ তুলে দরজা খুলে দিয়ে কর্তব্য সারল মরচে ধরা পুরানো কব্জাগুলো।
ঘরের ভেতর একনজর তাকিয়েই ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড এখনও ফেরেনি। বুঝতে পারল স্ট্যানলি। দরজা বন্ধ করে নিচে নেমে এসে বিল্ডিঙের সামনে বোর্ডওয়াকে দাঁড়াল। অপেক্ষা করাই ভাল, মাতাল ফ্রেইটার ঘুমাতে আসবেই। অপেক্ষার সময়টা পার করতে সিগারেট ধরাল ডেপুটি, মন দিয়ে আঁকার চেষ্টা করল রোসার নিখুঁত ছবি।
অনেকক্ষণ পর তৃতীয় সিগারেট সবে ধরাবে এমন সময় রাস্তার কোনা ঘুরে ম্যাক্স ব্র্যাণ্ডকে আসতে দেখল সে। বেঁটে একটা লোক। একহাত দাড়ির জঙ্গলে মুখ ঢেকে আছে। অল্প অল্প টলছে নেশার ঘোরে। ডেপুটির বিশাল দেহ হোটেলের দরজায় ঠেস দিয়ে আছে দেখে সামনে দাঁড়িয়ে মুখ তুলে তাকাল সে। চিনতে পেরে কুমড়োর হলুদ বিচিগুলো দেখাল। জড়ানো গলায় বলল, তোমাকেই খুঁজছিলাম, স্ট্যানলি, দারুণ। খবর আছে।
বলে ফেললো।
মাথা ঝাঁকিয়ে কথা শুরু করল মাতাল ফ্রেইটার। যা বলল তার মধ্যে নতুন কিছু নেই, ডেভিড মুরের কাছে এসব কথা আগেই শুনেছে স্ট্যানলি।
আর কোনও কথা বাদ পড়েনি তো, হতাশ গলায় জানতে চাইল, সে।
না। সেদিন বিকেলেই তো একলোকের সাথে গানফাইটে মারা গেল গ্যানন। আর কি কথা হতে পারে, তুমিই বলো?
ডেভিড মুর বলল, গ্যাননের সাথে দুবছর আগে তোমার পরিচয় হয়েছে। কিন্তু তুমি বলছ তিন বছর। কোনটা ঠিক? জ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল ডেপুটি।
আমার চেয়ে ডেভিড মুর বেশি জানে নাকি, নিজের বুকে টোকা দিল ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড। বড় লোক ইংরেজগুলোকে নিয়ে শিকারে গিয়েছিলাম যে, তখন আমার সাথে যেতে চেয়েছিল। আমি নিইনি। ফ্রেইটার উঁ দিয়ে ফুসফুসের বাতাস বের করায় সস্তা মদের গন্ধে এক পা সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলো স্ট্যানলি। তার একবছর পরে শাইয়্যানে গ্যাননের সাথে আবার দেখা হলো একটা সেলুনে। গ্যানন আর তার সঙ্গী..
ওদের মাথার ওপরে দুইশো পঁচ নম্বর রুমের জানালা থেকে গর্জে উঠল একটা সিক্সগান। বাড়িঘরের দেয়ালে প্রচণ্ড শব্দটার প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যাওয়ার আগেই হাঁটু ভাঁজ হয়ে স্ট্যানলির পায়ের কাছে পড়ে গেল ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড। একপলক তাকিয়েই ডেপুটি বুঝতে পারল মারা গেছে। হতভাগ্য বাচাল ফ্রেইটার।
সিক্সগান হাতে দৌড়ে রূমিঙ হাউসের ভেতরে ঢুকল সে। একেকবারে চার ধাপ সিঁড়ি টপকে উঠে এল দোতলায়। এবারও দুইশে পাঁচ নম্বর রূমে কাউকে দেখতে পেল না। বাতাসে ভাসছে পোড়া করডাইটের গন্ধ। কাজটা কার বুঝতে পারছে সে, কিন্তু কোন্ নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে হিউ হুবার্ট? চেষ্টা করেও লোকটাকে এখন আর ধরা যাবে না, এতক্ষণে নিশ্চয়ই পেছনের গলি দিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে সে। স্যাণ্ডক্রীকের সাতজন রাইডারদের মধ্যে হয়তো হুবার্টও একজন।
তিক্ত মনে নিচে নেমে এল স্ট্যানলি, শেরিফের অফিসে গিয়ে ডিউটিরত দুজন কনস্টেবলকে পাঠিয়ে দিল লাশ ফার্নিচার স্টোরের মালিকের কাছে পৌঁছে দিতে।
০৯.
বাকি রাত আর ঘুমাল না, শেরিফের সাথে আলোচনা করে কাটিয়ে দিল। সকালে ক্লান্ত কণ্ঠে বলল, গ্যানন আর তার সঙ্গী… কি বলতে চেয়েছিল ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড? গ্যাননের সঙ্গী বাড লরেন্স বা হুপার হতে পারে না। ওদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় এই কাউন্টিতে আসার সাহসই পেত না ওরা। তার মানে দাঁড়ায় গ্যাননের সঙ্গী যে লোকটা শিকারী দলের সাথে যেতে চেয়েছিল সে-ই সম্ভবত হিউ হুবার্ট।
হতে পারে,শেরিফের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ম্যাক্স ব্র্যাণ্ডের আততায়ী চায়নি গ্যাননের সঙ্গী সম্পর্কে তাকে কথা বলার সুযোগ দিতে। গত দুবছরে হান্টি পার্টির সাথে কারা গেছে খোঁজ নাও। গ্যাননকে ভাড়া করেছিল তেমন একজন হান্টারকে খুঁজে বের করতে পারলে গ্যাননের সঙ্গীর চেহারা সুরত কেমন জানা যাবে।
দ্রুত পায়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এল স্ট্যানলি, খিদেয় পেট জ্বলছে, কিন্তু নাস্তা করার ধৈর্য নেই তার।
দুবছর আগে শহরের একমাত্র হোটেল ছিল হেয়েস। ওখানেই আগে গেল ডেপুটি। মিস্টার হেয়েস ধুলোয় মোড়া কাভারের একটা লেজার বের করে দিল। দুবছর আগে সেপ্টেম্বর আর অক্টোবর মাসে শিকারে যাবার উদ্দেশ্যে কারা হোটেলে উঠেছিল লেজার উল্টেপাল্টে দেখল স্ট্যানলি।
আরেকটা স্টোরের লেজার ঘেঁটে আরও দুজনকে পাওয়া গেল। যারা শিকারের রসদ কিনেছে দুবছর আগে। হোটেল লেজার থেকে পাওয়া নামগুলোর মধ্যেও আছে এদের নাম। ভার্জিনিয়া হতে আগত চার্লি রবিনসন আর নেলসন আর্চার।
লিভারি বার্নেও খোঁজ নিল স্ট্যানলি। বার্নের মালিক শেরিফ আর। শেরিফের ভাইরা। ওখানে কোনও তথ্য পেল না সে, কিন্তু হফের বার্নের খাতায় গুরুত্বপূর্ণ একটা এন্ট্রি চোখে পড়ল। ছুটতে ছুটতে লইয়ারের অফিসে ঢুকল সে। অফিসে রোসা ছাড়া আর কেউ নেই। আঙ্কল জ্যাক অ্যাডাম বেঞ্চলিকে রিসিভ করতে গেছে, হাসল রোসা বিধ্বস্ত ডেপুটিকে দেখে, আমি কোনও সাহায্য করতে পারি?