কাগজের ভাঁজ খুলল স্ট্যানলি। মেয়েলি হাতের লেখা। চিঠিটায় লেখা আছে:
গ্যানন,
রলিন্স।
হুবার্ট ফেরিসে। মধ্য সেপ্টেম্বরে কাজটা হবে, বলেছে মাসের প্রথমেই আসতে হবে তোমাকে। হেয়েস হোটেলে উঠবে। অনেক মজা হবে তখন।
লরা।
চিন্তিত চেহারায় থুতনি ডলল স্ট্যানলি। এ ধরনের মেয়েদের আপত্তিকর অবস্থায় পাকড়াও করে প্রায়ই কোর্টে চালান দিই আমরা। কিন্তু লরা নামটা আগে শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।
আমিও মেয়েটাকে খুঁজে পাইনি, বলল জোসেফ ওয়েন। যাই হোক হুবার্টকে আমার দরকার, দুটো বুলেট পায় সে আমার কাছে। তুমি বলেছ দুইবার তোমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে হুবার্ট। কিন্তু তুমি ওকে খুঁজছ সেটা সে কি করে জানবে?
বুদ্ধি খাটাও, ডেপুটি। সবাই বলাবলি করছে ফেরিস পোস্ট অফিস থেকে হুবার্টই চিঠিটা সরিয়েছে। কিন্তু হুবার্ট জানে কাজটা অন্য কারও। সেসময় স্টোরে যারা ছিল তাদের মধ্যে আমার নামও আছে। জুলসবার্গের সেই ঘটনার পর যদি সে পেপার পড়ে থাকে আমার নাম পরিচিত ঠেকবে তার কাছে, ডাক্তারের ভাতিজার নাম ফলাও করে ছাপা হয়েছিল। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে না পারার মত বোকা না হিউ হবার্ট।
হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল স্ট্যানলি ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে। তারপর মাথা নেড়ে বলল, হিউ হুবার্ট আওয়াজ করে জানান দিয়ে আসত না।
কেবিনের সামনে ঘোড়া থেকে নামল আগন্তুক, চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ডেপুটি, ভেতরে আছ?
বাড স্যাণ্ডক্রীকের গলা চিনতে পারল স্ট্যানলি। এসো, বাড।
দরজা খুলে কেবিনের ভেতরে ঢুকল উত্তেজিত র্যাঞ্চহ্যাণ্ড। কে যেন গতকাল রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে খুন করেছে বিলি বেঞ্চলিকে!
০৭.
সকালে রলিন্স জেলের একটা সেল থেকে বেরিয়ে এল শহরের সবচে নামকরা লইয়ার, জ্যাক হিগিনস। উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে, বন্দী হুপারের। স্বীকারোক্তি নিতে পারেনি সে।
ফিফথ স্ট্রীট পেরিয়ে মারফি বিল্ডিঙের দোতলায় নিজের অফিসে চলে এল সে। ছোট দুকামরার অফিস। জেলের উল্টোদিকে। রিসেপশনে ঢুকে থমকে দাঁড়াল। গত তিনদিনে আমূল বদলে গেছে ঘর দুটোর চেহারা।
গুড মর্ণিঙ, আঙ্কল জ্যাক, হাসিমুখে বলল রোসা হিগিনস। বাবা মারা যাওয়ায় তিন দিন আগে একমাত্র চাচার কাছে চলে এসেছে সে।
কেউ এসেছিল, রোসি?
মিস্টার ফ্রান্সিস। জানতে চেয়েছে তুমি তার ব্যাংকের বোর্ড অত ডিরেকটরে থাকতে রাজি আছ কিনা।
তাকে হ্যাঁ বলে দাও।
কার্বন কাউন্টি জার্নাল থেকে একটা টেলিগ্রাম এসেছে। ওরা,–জিজ্ঞেস করেছে তুমি হুপারের হয়ে কেস লড়বে কিনা।
ওদের না বলে দাও,ভেতরের অফিসে ঢুকে পড়ল জ্যাক হিগিনস। টেবিলের ওপর ফুলদানীতে একগুচ্ছ ফুল দেখে চওড়া হাসি ফুটল তার ঠোঁটে। চেয়ারে বসে পড়ে ভাবল অফিসটা আর চেনাই যায় না। মাত্র তিনদিন হলো এসেছে রোসা, এরইমধ্যে একশো একটা কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। ভাতিজির বিয়ে হয়ে যাবে ভেবে মন খারাপ হয়ে যাওয়ায় টাক চুলকাল বুড়ো লইয়ার। ভাল পাত্র খুঁজতে হবে।
দ্রুতগামী ঘোড়ার শব্দ শুনে চেয়ার ছেড়ে উঠে জানালার পাশে গিয়ে বাইরে তাকাল সে। ডেপুটি স্ট্যানলিকে শহরে ঢুকতে দেখে চিন্তায় পড়ে চাদি চুলকাল দ্বিতীয়বার। মাঝরাতে রওনা না হয়ে থাকলে এত সকাল সকাল শহরে পৌঁছতে পারত না ডেপুটি। লইয়ার জানে হুবার্টকে গ্রেফতার করতে ডেপুটিকে ফেরিসে পাঠিয়েছে শেরিফ। হিউ হুবার্ট নামে সত্যিই কি কেউ আছে? জ কুঁচকে মাথায় হাত বোলাল জ্যাক হিগিনস।
হুপার তার জবানবন্দী প্রত্যাহার করার পর হবার্ট লোকটার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে অনেকের মনে। আজ সকালে হুপার জানিয়েছে চাপের মুখে প্রাণ বাঁচাতে মিথ্যে বলেছে সে। তারপরও হুপারের হয়ে কোর্টে দাড়াতে রাজি হয়নি জ্যাক হিগিনস।!
জানালার নিচে হিচর্যাকে ডেপুটিকে ঘোড়া বেঁধে নামতে দেখে আবার এসে চেয়ারে বসল সে।
.
সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত পায়ে কেউ উঠে আসছে, শুনতে পেয়ে টেবিলে স্থূপ। হয়ে থাকা কাগজপত্রের ওপর থেকে চোখ তুলল রোসা হিগিনস। সশব্দে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখল বিশালদেহী ডেপুটি স্ট্যানলিকে। চিনতে অসুবিধা হলো না, শহরের সবাই গত কয়েকদিন ধরে এই লোকের কথা বলাবলি করছে। রলিন্সে এলে জেরাল্ড স্ট্যানলিকে না চিনে উপায় নেই, মনে মনে বলল রোসা।
লইয়ারের অফিসে বহু আকাঙ্ক্ষিত মেয়েটাকে দেখতে পেয়ে মুহূর্তের জন্য কেন এসেছে ভুলে গেল স্ট্যানলি। বোকার মত তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর হাত দিয়ে গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শ নিয়ে লাজুক হাসল।
নীরবতা ভাঙল রোসা, আঙ্কল জ্যাকের কাছে এসেছ?
হ্যাঁ, জরুরী কথা আছে।
বলে ফেলো, গলার আওয়াজ পেয়ে নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছে লইয়ার।
তোমার ক্লায়েন্ট বিলি বেঞ্চলিকে খুন করা হয়েছে, ঘুরে দাঁড়িয়ে গভীর চেহারায় বলল স্ট্যানলি।
বাধা না দিয়ে ডেপুটির কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনল জ্যাক হিগিনস। তারপর ভাতিজির দিকে তাকাল। রোসি, দুটো টেলিগ্রাম লিখে এখনই পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ধীরে ধীরে টেলিগ্রামের বক্তব্য বলে গেল লইয়ার, রোসা লিখল। প্রথম টেলিগ্রামটা অ্যাডাম বেঞ্চলির জন্য, দ্বিতীয়টা হেফটন লাইভ স্টক কোম্পানীতে ওমাহা, নেব্রাস্কায়।