বসের কাছ থেকে একটা খবর নিয়ে ভোর বেলায় বক্স বিতে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখি ডোরওয়েতে বিলি বেঞ্চলি মরে পড়ে আছে। মাঝরাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে কে যেন তার বুক ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।
০৬
খুনী জোসেফ ওয়েন ছাড়া আর কেউ না, জেমস ওয়াটের ফোরম্যান বলল ডেপুটিকে। অন্যান্য কয়েকটা র্যাঞ্চেও এই একই কথা শুনেছে স্ট্যানলি। ওরা সবাই হিউ হুবাটের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া চিঠির ব্যাপারে বলাবলি করছে, বিলি বেঞ্চলির হত্যার খবর ওরা কেউ এখনও জানে না।
লিস্টটা আরেকবার দেখল স্ট্যানলি। পনেরোটা নাম আছে কাগজটায়। জোসেফ ওয়েনের নামও রয়েছে। ফোরম্যানের দিকে তাকাল। ওই লোকের কথা কেন মনে হচ্ছে তোমার?
কথার সাথে তার কাজের কোনও মিল নেই। নিজের পরিচয় দেয়। ক্যাটল বায়ার বলে, অথচ কেউ তাকে ক্যাটলের খোঁজ নিতেও দেখেনি। কখনও। কেউ জানে না লোকটা কোথকে এসেছে। কেউ যদি হয় তো ওই জোসেফ ওয়েনই ছদ্মবেশী হিউ হুবার্ট।
লোক্টা থাকে কোথায়?
ঠিক নেই, তবে জুয়ার টেবিলের ধারে কাছে। প্রায় সিক্সগান চালানোর সমানই দক্ষতা আছে তার কার্ড খেলায়।
পরের র্যাঞ্চটায় খানিকটা নিশ্চিত তথ্য পেল স্ট্যানলি, ওয়েন? কয়েকদিন আগে টম বুচারের কেবিনে গেছে সে। পথের হদিসও বাতলে দিল র্যাঞ্চার।
দ্রুতগতিতে সুইটওয়াটারের দক্ষিণ পাড় ধরে ডেভিলস গেটের দিকে ঘোড়া ছোটাল স্ট্যানলি। বিকেলে কেবিনটা চোখে পড়ল ওর। দেখে মনে হয় না কেউ থাকে। কোনও ঘোড়া বা জন মানুষের চিহ্ন নেই ধারে কাছে। কেবিন থেকে কিছুটা দূরে ঝোঁপের মধ্যে ঘোড়া বেঁধে হেঁটে এগুলো সে।
উইলো কাঠের কেবিন। দরজাটা নদীর দিকে। নক করতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল, হোলস্টার থেকে সিক্সগান বের করে ডানহাতে নিল। ওয়েনই যদি হুবার্ট হয়, ওকে দেখার সাথে সাথেই গুলি করবে লোকটা।
ভেতর থেকে নকের জবাব দিল না কেউ। দরজা ঠেলা দিয়ে খুলে ঘর খালি দেখল সে। তবে মানুষ বাস করে এখানে। বাঙ্কে পড়ে আছে রোল করা একটা ব্লাংকেট। স্টোভের লোহা ঠাণ্ডা হয়নি এখনও। পাশে। মেঝেতে পড়ে আছে চ্যালা কাঠ আর খাবারের একটা ঝুলি।
পুরো ঘর সার্চ করল স্ট্যানলি। ওর জানা হয়ে গেল জোসেফ ওয়েন এখানেই বাস করে। দেয়ালে জুলসবার্গ, কলোরাডোর লেবেল লাগানো একটা কোট ঝুলতে দেখল সে। একটা পকেটে খুঁজে পেল জোসেফ ওয়েনের নাম লেখা ওয়ালেট।
ওই কোটেরই ভেতরের একটা পকেটে যা খুঁজছিল পেয়ে গেল স্ট্যানলি। মাইলস সিটি, মনট্যানা থেকে হিউ হুবার্টের নামে লেখা হয়েছিল চিঠিটা। নিশ্চিত হয়ে গেল ডেপুটি, হুবার্ট ছাড়া এই চিঠি আর কারও দরকার হতে পারে না।
এনভেলপ খুলে চিঠিটা পড়ল সে। বাড লরেন্স লিখেছে টাকা ধার চেয়ে। ফাঁসির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এডমণ্ড হুপার সত্যি কথাই বলেছে প্রাণের ভয়ে। ওয়েনই তাহলে হুবার্ট, আর কোনও সন্দেহ থাকল না স্ট্যানলির মনে। এখানেই অপেক্ষা করতে হবে ওকে, খুনীটাকে জীবিত ধরার চেষ্টা করতে হবে।
কাজটা সহজ হবে না। সিক্সগানে হুবার্টের হাত ভয়ঙ্কর চালু। মরার আগমুহূর্ত পর্যন্ত লড়বে লোকটা। সে জানে লিঞ্চিও মবের হাতে মারা না পড়লেও কোর্টে তার ফাঁসি হবে। কার্বনে লরেন্সের কপালে কি ঘটেছে এতদিনে নিশ্চয়ই জেনে গেছে সে।
কেবিন থেকে বেরিয়ে একশো গজ দূরে আরেকটা ঝোঁপের আড়ালে ঘোড়া বেঁধে ট্র্যাক মুছতে মুছতে কেবিনে ফিরে এল স্ট্যানলি। দরজা বন্ধ করে দিল, তারপর সিক্সগানটা হাতে নিয়ে দরজার দিকে মুখ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই ওর।
.
বাইরে সন্ধের ছায়া নেমে এল, তবু ফিরল না জোসেফ ওয়েন। লোকটা শেষ পর্যন্ত ফিরবে কিনা সন্দেহ দেখা দিল স্ট্যানলির মনে। এই এলাকায় খবর বাতাসের আগে ছোটে। ডেপুটি শেরিফ তাকে খুঁজছে জেনে যায়নি তো জোসেফ ওয়েন ওরফে হুবার্ট? সেক্ষেত্রে বাকি জীবন অপেক্ষা করলেও আসবে না আর লোকটা। কাউন্টি ছেড়ে পালিয়ে যাবে মালপত্র ফেলে রেখে।
রাত নামতেই বেশ ঠাণ্ডা পড়ল। স্টোভে আগুন জ্বেলে হুবার্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ঝুঁকি নিল না স্ট্যানলি, কট থেকে ব্ল্যাংকেট এনে চাদরের মত করে গায়ে জড়াল। সারারাত অপেক্ষা করবে সে। সবাই বলেছে। জুয়া খেলার বদঅভ্যেস আছে ওয়েনের। হয়তো মাঝরাত করে ফিরবে লোকটা।
জুয়ার ব্যাপারটা মনে আসতেই ডেপুটির চিন্তার মোড় ঘুরে গেল। রলিন্স থেকে আসার পথে প্যাট্রিক হল নামের এক লোকের সাথে আলাপ হয়েছিল গতকাল। চেহারা-পোশাক দেখেই বোঝা যায় জুয়াড়ী। কোটের নিচে লোকটার বাম বগলের কাছটা উঁচু হয়ে ছিল। সম্ভবত ছোট ক্যালিবারের কোনও হ্যাণ্ডগান।
চমৎকার চেহারার একটা মেয়ে বগি থেকে নামার কিছুক্ষণ পর ট্রেন থেকে এই লোককে নামতে দেখেছে সে। অন্যমনস্ক ডেপুটির চিন্তাসোত অন্যদিকে ঘুরে গেল অজান্তে। মেয়েটা কে? ওরকম কালো মায়াবী চোখ আর চুড়ো করে বাঁধা মেঘের মত কালো চুল আগে কখনও দেখেনি সে। রলিন্সে ফিরে আবার তাকে দেখতে পাবে কিনা আনমনে ভাবল স্ট্যানলি। মেয়েটা অপূর্ব-..। নদীর তীরে একটা অস্বাভাবিক শব্দ ওর চটকা ভেঙে দিল। হুবার্ট
কেবিনে ঢোকার আগে চারপাশ পরখ করে দেখছে? লোকটা স্ট্যানলির ঘোড়াটা খুঁজে পেলে তার সামনে দুটো পথ খোলা থাকবে। ঘোড়া নিয়ে সরে পড়তে পারে সে, অথবা ঘোড়ার মালিকের মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্য আসতে পারে সিক্সগান হাতে।