জেপসন যখন কথা বলছে, সারাক্ষণই তাকে দেখল ট্যাপ; আমার কাছে মনে হলো এই প্রথম জেপসনকে খানিকটা হলেও শ্রদ্ধা আর সমীহের চোখে দেখছে ও।
তোমার কিছু বলার আছে? ট্যাপকে জিজ্ঞেস করলেন বাবা।
শ্রাগ করল সে। কি বলব? ও-ই তো যা বলার বলে দিয়েছে-স্পষ্ট এবং সরাসরি। আমরা কথা বলছিলাম, অর্থপূর্ণ ভঙ্গিতে হাসল ট্যাপ। ব্যস, আর কিছু নয়।
রোজিটার দিকে ফিরলেন বাবা। তোমার কাছে কিছু জানতে চাইব আমরা, রোজ! তোমার আর টমের মধ্যে যাই ঘটুক, সেটা তোমাদের ব্যাপার। আমাদের যা বলার আছে: আবার যদি এরকম কিছু ঘটে, তাহলে ড্রাইভ ছেড়ে চলে যেতে হবে তোমাদের, সেটা যেখানেই হোক। টম একা যদি থেকে যেতে চায়, আমাদের অন্তত কোন আপত্তি নেই।
এবার ট্যাপের দিকে ফিরলেন বাবা, একেবারে নির্লিপ্ত দেখাচ্ছে মুখ। আমার ড্রাইভে একটা জিনিস কখনও সহ্য করব না-কোন ঝামেলাবাজ লোকের উপস্থিতি যথেষ্ট ঝামেলা করেছ তুমি, ট্যাপ, সম্ভবত ভবিষ্যতেও করবে। আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত খুনোখুনি ছাড়া থাকতে পারবে তুমি আর টম। সেটা হতে দেব না আমি। এবং এই ঘটনা নিয়ে দলের মধ্যে ভাগাভাগি হোক, তাও হতে দেব না।
আমি জানি বাবা কতটা পছন্দ করেন ট্যাপকে। এও জানি সিদ্ধান্তটা নিতে কতটা ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে ওঁকে।
ছয়দিনের রসদ পাবে, ট্যাপ, চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করলেন তিনি। আর একটা পূর্ণ ক্যান্টিন। তোমার নিজস্ব ঘোড়া আছে। আমি চাই এক ঘণ্টার মধ্যে চলে যাবে তুমি।
বিশ্বাস করতে পারছে না ট্যাপ, বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন বাবা ওকে চড় কষেছেন।
পরের বউকে ফুসলাবে এমন কোন লোকের দরকার নেই আমাদের! এটা ড্রাইভ হতে পারে, কিন্তু কয়েকটা পরিবার আছে এখানে, ড্রাইভের ভালমন্দের মত সবার মান-সম্মানও দেখতে হবে, আমাকে। বলেই ঘুরে দাঁড়ালেন বাবা, হেঁটে চলে গেলেন ওয়্যাগনের দিকে।
মিনিট খানেক পর ওয়্যাগনের কাছে চলে গেল ট্যাপ। নিজের জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করল।
দুঃখিত, ট্যাপ, বললাম আমি।
ঝট করে ঘুরে দাঁড়াল ও। গোল্লায় যাও তোমরা! শীতল সুরে বলল সে। তুমি আমার ভাই নও!
গিয়ার কাঁধে ফেলে ঘোড়ার কাছে চলে এল সে। চার্লি হীথ এগিয়ে গেল ওর দিকে, মিনিট দুয়েক কথা বলল দু’জনে, তারপর ক্যাম্পে ফিরে এসে আগুনের কাছে বসে পড়ল হীথ। স্যাডলে চেপে ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেল ট্যাপ এডলে।
ভোরের আলো ফুটতে যাত্রা করলাম আমরা।
নদীর পানি কমে যাচ্ছে, প্রায় কর্দমাক্ত, ঘঘালাটে হয়ে গেছে এখন। ধীর গতিতে এগোচ্ছি আমরা, গরুগুলোকে সতেজ ঘাস খাওয়ার সুযোগ দিচ্ছি চলার মধ্যে, যদিও ঘাস খুব পাতলা এবং ছোট ছোট।
যাত্রার শুরু থেকেই যথেষ্ট লোক ছিল না আমাদের। তারওপর রাস্টি বুচার্ডের মৃত্যু আর ট্যাপ চলে যাওয়ায় খারাপ হয়েছে অবস্থা। ওয়াগন যাত্রা করার আগে টেরই পেলাম না যে আরও একজন নেই দলের মধ্যে।
ইলেন অটম্যান। কোন এক ফাঁকে পনিতে স্যাঙল চাপিয়ে ট্যাপের পিছু নিয়েছে ও।
মিসেস অটম্যান সমানে বিলাপ করছে। টিমকে বেশ বিষণ্ণ মনে হলো, কিন্তু সবাই আমরা ট্যাপকে একা চলে যেতে দেখেছি; এবং গত কয়েকদিন ধরে ইলেনের সঙ্গে তেমন কোন কথাবার্তা হয়নি ট্যাপের, সেটাও খেয়াল করেছে সবাই। দৃশ্যত, তারপরও ট্যাপকে অনুসরণ করেছে ইলেন। এরচেয়ে বোকামি কল্পনাও করা যায় না।
পালের একেবারে পেছনে আছেন বাবা। সান, তুমি আর কার্ল স্কাউটিংয়ে যাবে, কাছাকাছি যেতে চিন্তিত স্বরে বললেন আমাকে। দেখোত পানি খুঁজে পাও কিনা। মনে হয় না পেকোসের এপাশে পানি পাওয়া যাবে। সমানে মাসট্যাঙ পন্ডস, যদ্দর মনে পড়ে ওঁগুলোর ব্যাপারে তেমন কিছু বলেনি ট্যাপ।
পালের আগে আগে এগিয়ে চললাম আমরা, কিন্তু আশান্বিত হওয়ার মত কিছু দেখতে পাচ্ছি না। ঝর্নাগুলো ক্ষীণ হয়ে এসেছে, কোথাও কোথাও ফোঁটার আকারে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকটা ক্ষুদ্র ওঅটরহোল রয়েছে বটে, কিন্তু পানি এত কম যে বড়জোর দু’একটা গরু তেষ্টা মেটাতে পারবে। প্ৰেয়ারিতে গুটিকয়েক মেস্কিট জন্মেছে-জীর্ণ দশা ওগুলোর, প্রায় গুলোর আকারে বেড়ে উঠেছে।
ঠাণ্ডা সকাল তেতে উঠছে ক্রমশ। উঁচু একটা জায়গায় উঠে এসেছি আমরা, যথেষ্ট বাতাস থাকার কথা এখানে, অথচ একটুও নেই। ঘাড়ের ঘাম মুছে কালের দিকে তাকালাম আমি। ট্যাপ থাকলেই বোধহয় ভাল হত।
হয়তো। কিন্তু ট্রেভেন ওকে তাড়িয়ে দিয়ে ঠিকই করেছে। দলের স্বার্থে এটাই উচিত ছিল।
শেষপর্যন্ত একটা পানির উৎস খুঁজে পেলাম আমরা। নদীর গভীর অংশ এটা, অন্য অংশ প্রায় শুকিয়ে এসেছে; কিংবা এমনও হতে পারে বৃষ্টির কারণে পানি জমেছে এখানে।
কি মনে হয় তোমার, কার্ল, চলবে?
যথেষ্ট, দূরের পাহাড়সারির দিকে তাকিয়ে আছে সে। হর্সহেডের আগে হয়তো এটাই পানির শেষ উৎস। এবার আমার দিকে ফিরল সে। ড্যান, পেকোসের পানি কিন্তু ক্ষারে ভরা। নদীর পানি অবশ্য তত খারাপ নয়। কিন্তু আশপাশে যত ওঅটরহোল আছে, সবই ক্ষারে ভরা। ওই পানি খেলে মরে যাবে গরুগুলো। যেভাবে তোক আটকে রাখতে হবে ওদের।
আচমকা রাশ টেনে ধরল সে। কিছু দূরে নালহীন ছয়টা, ঘোড়ার ট্র্যাক দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণে চলে গেছে। একেবারে তাজা ট্র্যাক, বড়জোর কয়েক ঘণ্টা আগের।