বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের কৌশল সম্পর্কে কেড্রিকের আগ্রহ প্রবল হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় ও, গৃহযুদ্ধে অংশ নেয়। একাধিক লড়াইতে সফলতার মধ্য দিয়ে ওর বহুদিনের শিক্ষা আর চিন্তাভাবনা বাস্তব ভিত্তি লাভ করে তবে অসংখ্য যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রচুর মানুষ হত্যা করার পরও নিষ্ঠুর পাষণ্ড হয়ে যায় নি।
একটা জায়গা থেকে একদল আউট-লকে উচ্ছেদ করার কাজটা প্রথম প্রথম সাধারণ মনে হয়েছিল, উত্তেজনা আর রোমাঞ্চের গন্ধ পেয়েছিল ও। তখন মনে হয়েছে মনের মতো একটা কাজ পাওয়া গেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সন্দেহ জাগছে, কাজটা নেয়া অদৌ ঠিক হয়েছি কি না। ডাই রীডের কথা আর মাস্ট্যাংবাসীদের হাবভাবে মনে হচ্ছে প্রথমে যেমন ভেবেছিল, ব্যাপারটা আসলে তত সহজ-সরল নয়। যাই হোক, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জায়গাটা নিজের চোখে দেখতে হবে, বুঝতে হবে, কোথায় কাদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে নামতে যাচ্ছে। আরেকটা কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, অচিরেই, সঙ্গীদের জেরার মুখোমুখি হতে হবে ওকে। যাকে যাকে খুন করা দরকার খুন করে পাওনা টাকা বুঝে নিয়ে চলে যেতে চাইবে ওরা, দেরি সইবে না।
শুধু লরেডো শ্যাডই সম্ভবত ওর লাইনে চিন্তা ভাবনা করছে। সুযোগ পেলে আজ একবার টেক্সানের সঙ্গে আলাপ করতে হবে, ভাবল পল কেড্রিক, বুঝতে হবে সে কী জানে, কতটুকু বোঝে। গতকাল ডরনি বলছিল, লরেডো শ্যাড দলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লোক; কেড্রিকেরও তাই মনে হচ্ছে। আত্মবিশ্বাসী বলেই ওর আচরণে এরকম সহজ একটা ভাব এসেছে। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলেই কেবল এতটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারে কেউ। কীভাবে বিপদের মোকাবিলা করতে হয় এই লোক সেটা জানে।
কফি শেষ করে উঠে দাঁড়াল কেড্রিক, ধীর পায়ে ঝর্নার ধারে এল, দুঢোক পানি খেয়ে দাড়াল সোজা হয়ে; এগিয়ে গেল ঘোড়র কাছে। ক্যাম্পে পৌঁছে জিনের বাঁধন ঢিল করে দিয়েছিল, ধীরে সুস্থে বাঁধতে শুরু করল। চমৎকার হাওয়া বইছে। ওরা চাপা কণ্ঠে কথা বললেও প্রায় প্রতিটি শব্দই
পরিষ্কার কানে আসছে ওর। প্রথম প্রশ্নটা ধরতে পারল না ও, কিন্তু ফেসেনডেনের জবাব স্পষ্ট শোনা গেল।
ওকে ঘটাতে যেয়ো না, ভরনি। সাত ঘাটের পানি খাওয়া লোক। এখন আমার মনে পড়েছে, ওর সঙ্গে আমার আগেও একবার মোলাকাত হয়েছে।
দাঁড়িয়ে আছে কেড্রিক, এতদূর থেকেও যেন ওদের উত্তেজনার আঁচ লাগছে।
ইনজুন টেরিটোরিতে ওর কাছ থেকে প্যাটারসনের গরু ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। পাত্তা পাই নি।
কী হয়েছিল? জানতে চাইল লী গফ, লড়াই?
সামান্য। আমি তখন ল্যানো গানম্যান চাক গিবন্সের সঙ্গে থাকতাম। ওর স্বভাব ছিল গায়ে পড়ে ঝগড়া করা। আমার সঙ্গেও বেশ কয়েকবার গানফাইট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু আমি ঝামেলা এড়িয়ে গেছি। ঝগড়া করে টাকা হারানোর ঝুঁকি নেই নি। কিন্তু চাক একটা খচ্চর, কেড্রিক যখন ওকে রুখে দাঁড়াল, গরু দিতে রাজি হলো না, ওকে চ্যালেঞ্জ করে বসল
কফিতে চুমুক দিল ফেসেনডেন। অধৈর্যভাবে অপেক্ষা করছে সবাই। অবশেষে তর সইতে না পেরে লী গফ জানতে চাইল, তারপর?
কাঁধ ঝাঁকাল ফেসেনডেন। কেড্রিক বেঁচে আছে, দেখতেই পাচ্ছ।
মানে কীভাবে ঘটল ব্যাপারটা তাই জিজ্ঞেস করেছি।
খাপ থেকে পিস্তল বের করতে পারে নি গিবন্স। কেড্রিক কখন ড্র করেছে দেখতেই পাই নি আমরা; কিন্তু পরে দেখা গেল চাকের শার্টের বাঁ দিকের পকেটে একটা আধুলি দিয়ে ঢাকা যাবে, এত কাছাকাছি দুটো ফুটো।
এরপর আর কথা এগোল না। জিনের পেটি বাঁধার পেছনে আরও কিছু সময় ব্যয় করল কেড্রিক। তারপর ঘোড়া ছেড়ে দূরে সরে গেল, ক্যাম্পের চারদিকে একবার চক্কর মারল, চোখ বোলাল এদিক-ওদিক। চেহারায় চিন্তার ছাপ।
অভিজ্ঞতা ওকে শিখিয়েছে, কর্মস্থল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখার গুরুত্ব কতখানি। মাস্ট্যাং থেকে টেরিটোরি লাইন পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল রণাঙ্গনে পরিণত হতে যাচ্ছে অচিরেই, গোটা এলাকা সম্পর্কে ভালো করে জানার ওপরই হয়ত বাচামরা নির্ভর করবে। যে কোনও এলাকা সম্পর্কে জানার সুযোগ সাধারণত হাতছাড়া করে না ও।
আগেও বহু কঠিন লোকের কাছ থেকে কাজ আদায় করেছে কেড্রিক, তাই এই দলটাকে নিয়ে ভাবছে না। যদিও জানে, এই দলের লোকগুলো বিপজ্জনক, কিন্তু একসঙ্গে ওদের সামলানো তেমন কঠিন হবে না; তবে আলাদা আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সমস্যা দেখা দেবে। কারণ, ওরা একা থাকতেই পছন্দ করে, দলের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা থাকার কথা নয়। মাত্র। দুটো জিনিসে বিশ্বাস করে এরা, সিক্সগানে দক্ষতা এবং টাকা। এ দুটোর ওপর ভরসা করে বেঁচে আছে; মারাও যাবে।
ফেসেনডেন মুখ ভোলায় একদিক দিয়ে সুবিধে হয়েছে। ওর ব্যাপারে কারও মনে দ্বিধা থাকলে এখন তা দূর হয়ে যাবে। ও একজন পিস্তলবাজ জানার পর নির্দেশ মানতে আপত্তি করবে না; ভয়ে নয়, ওকে স্বগোত্রীয় একজন, ভেবেই ওর কথা শুনবে। ও উড়ে এসে জুড়ে বসেছে এমনটি ভাববে না।
বিশ্রাম নিয়ে আস্তে ধীরে আবার যখন ওরা পথে নামল, আগুনের হলকা, বইছে যেন চারদিকে, উত্তপ্ত হয়ে আছে মরুভূমি। দিগন্তে সামান্যতম আলোড়ন নেই, ধু-ধু চরাচর। দূরে একটা মেসার মাথার ওপর অবিরাম চক্কর দিচ্ছে একটা নিঃসঙ্গ শকুন-খাবার খুঁজছে। তীক্ষ্ণ নজরে চারদিক জরিপ করছে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। তবু হঠাৎ হঠাৎ বারান্দায় দেখা মেয়েটার চেহারা মনে পড়ে যাচ্ছে। সামান্থা ফক্স সুন্দরী। জন গুন্টারের ভাগ্নী হলেও, বোঝা যায়, মামার সব কাজে তার অনুমোদন নেই।