একটা অ্যাপলুসা গেল্ডিং নিয়ে এগোচ্ছে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। ঘোড়াটার সামনের দিকে লালচে-ধূসর, পেছনে ধবধবে শাদার ওপর বৃষ্টির ফোঁটা আকৃতির ছোপ; চারটে পা-ই শাদা। শক্তিশালী, ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন ঘোড়, বুদ্ধিমান এবং সত।
রওনা হওয়ার জন্যে ওরা যখন একসঙ্গে মিলিত হচ্ছিল, অ্যাপলুসাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়েছে লরেডো শ্যাড, ঘুরে ঘুরে সপ্রশংস দৃষ্টিতে খুঁটিয়ে দেখেছে ঘোড়াটাকে।
ভাগ্যবান লোক তুমি; ফ্রেন্ড! দারুণ ঘোড়া! পেলে কোথায়? অবশেষে জিজ্ঞেস করেছে।
নাভাহো রেমুডা, নেয় পার্শ ওঅর হর্স এটা-রিজারভেশন থেকে যোগাড় করেছি।
আস্তে আস্তে জমায়েত হয়েছে সবাই। কেড্রিক লক্ষ্য করেছে, ওকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জরিপ করে নিয়েছে ওরা। ওর পশ্চিমা কায়দার পোশক-আশাক বিশেষত নিচু করে কোমরে ঝোলানো, উরুর সঙ্গে বাঁধা পিস্তলজোড়া ওদের নজর কেড়েছে। গতকাল নিউ অরলিন্স-এ কেনা তৈরি পোশাকে ওকে দেখেছিল ওরা। কিন্তু আজ আপন দলের মানুষ হিসেবে ওকে যাচাই করার সুযোগ পেয়েছে।
দীর্ঘ ঋজু শরীর কেড্রিকের। গতকালের পোশাকের মধ্যে শুধু কালো টুপি আর জুতোজোড়া অবশিষ্ট রয়েছে আজ। একটা ধূসর ঊলের শার্ট পরেছে, কালো সিল্কের রুমাল গলায় পেঁচিয়েছে। পরনের জিন্সের প্যান্টটাও কালো। সহজভাবে কোমরে ঝুলছে পিস্তলজোড়া, প্রয়োজনের মুহূর্তে হাতে উঠে আসবে।
সরাই উপস্থিত হলে কেড্রিক বলেছে, ঠিকাছে, চল!
স্যাডলে চেপে বসেছে ওরা, তারপর সবার ওপর একবার নজর বুলিয়েছে কেড্রিক। একহারা গড়নের ডরনি শ; বিশালদেহী পাই ফেসেনডেন; ছিপছিপে রুক্ষ চেহারার পয়েন্সেট; লম্বা চওড়া সোনালি চুলো লী গফ আর কুৎসিত ক্লন; দলের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য শক্তপোক্ত টেক্সান, লরেডো শ্যাঙ। এগোতে শুরু করেছে ওরা। আরও একবার ওদের জরিপ করেছে কেড্রিক। আর কিছু না হোক, এরা লড়াকু লোক। বার কয়েক ওর পিস্তলের দিকে তাকিয়েছে ডরনি শ।
ওগুলো কোল্ট নয় বলে মনে হচ্ছে?
ঠিক ধরেছ। পয়েন্ট ফোর-ফোর রাশান। চমৎকার জিনিস, সহজে নিশানা ভেদ করা যায়। মাথা দুলিয়ে সামনের ট্রেইলের দিকে ইঙ্গিত করে জানতে চেয়েছে কেড্রিক। এদিকে আগেও গেছ?
হ্যাঁ, বেশ কয়েকবার যেতে হয়েছে। নর্থ ফর্ক পেরিয়ে কিছুদূর গলে একটা ঝর্না আছে, ওখানে দুপুরে বিশ্রাম নেব আমরা। তারপর অনেক কটা গভীর ক্যানিয়ন আর একটা বড়সড় পাহাড় পার হতে হবে। ইন্ডিয়ান আর স্প্যানিশরা পাহাড়টার নাম দিয়েছে দ্য অরফ্যান। পাহাড়ের পরেই শুরু বুনে এলাকার, নিজের চোখেই দেখতে পাবে। ঝকঝকে শাদা দাঁত বের করে হাসল ডরনি শ। যেদিকে তাকাও, দেখবে একই চেহারা।
ডরনি, আচমকা জিজ্ঞেস করে বসেছে লী গফ, এবারও ম্যালপাই ক্যানিয়নের দিকে যাবে নাকি?
হাসল ক্লসন। যাবে না মানে! অন্য কেউ হলে অনেক আগেই হাল ছেড়ে দিত, কিন্তু আমাদের ডরনি হার মানার বান্দা নয়, তবে স্পষ্ট বোঝা যায় পশ্চিমা গানশ্লিংগারের থোড়াই পরোয়া করে মেয়েটা, তার নজর আরও ওপরে!
মেয়েটা কিন্তু দারুণ! গফের কণ্ঠে খোলামেলা প্রশংসা ঝরেছে। কিন্তু ভরনিকে তেমন পাত্তা দেয় না।
কে জানে স্বার্থ আছে বলেই এতদিন সম্পর্ক রেখেছে কি না, বাঁকা কণ্ঠে বলেছে পয়েন্সেট। কীথের জন্যে খবরাখবর মেয়েটার কাছ থেকেই হয়তো যোগাড় করে ও। কোথায় কী ঘটছে কিছুই তো তার অজানা থাকে না।
স্যাডলে ঘুরে বসেছে ডরনি শ, কঠোর হয়ে উঠেছে লম্বাটে তীক্ষ্ণ চেহারা। চোওপ! শীতল কণ্ঠে বলেছে সে।
আড়ষ্ট হয়ে গেছে পয়েন্সেট, নিখাদ বিষ মেশানো দৃষ্টিতে ডরনির দিকে তাকিয়েছে, কিন্তু পাল্টা জবাব দেয় নি। লোকটা এত দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়েছে, না দেখলে কেড্রিকের বিশ্বাস হত না। দুর্ধর্ষ কঠিন লোক পয়েন্সেট, কারও তোয়াক্কা করে না। অথচ সেও সযত্নে এড়িয়ে গেছে ডরনি শকে। মনে রাখার মতো ব্যাপার।
বেলা গড়িয়ে চলল। দলের সদস্যদের ওপর নজর রাখছে পল কেড্রিক। উরনি শর প্রতি আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে সবাই, লক্ষ্য। করল ও। এমনকী, বিশজন মানুষের হত্যাকারী ফেসেনডেনও এড়িয়ে চলছে। তাকে।
দুপুরে নর্থ ফর্কের ঝর্নার ধারে ক্যাম্প করল ওরা। সাধারণত কাউ-ক্যাম্পগুলোয় যেমন খোশ গল্প চলে, এখানে ত! হলো না। রূঢ় এবং মেজাজি লোক ওরা, গল্প গুজর করার মানসিকতা নেই। একমাত্র লরেঙে শ্যাডকেই কিছুটা সহজ মনে হলো, স্বাভাবিক আচরণ করছে ও। সবার মৌন সম্মতি পেয়ে রান্নার দায়িত্ব নিল ক্লসন। কারণ বুঝতে দেরি হলো না কেড্রিকের, চমৎকার রাধে লোকটা।
খাওয়ার ফাঁকে খতিয়ে নিজের অবস্থান বিচার করল, কেড্রিক। নিউ অরলিন্স-এ এই কাজের দায়িত্ব নিয়েছে ও; টাকা পয়সার খুব টানাটানি যাচ্ছিল তখন। ওকে এখানে আনার জন্যে জন গুন্টারই প্রয়োজনীয় টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এখন কাজ ছাড়তে গেলে টাকাগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। সেটা সম্ভব নয়। অথচ সঙ্গীদের দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে পড়া উচিত।
অসংখ্য যুদ্ধে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে অংশ নিয়েছে কেড্রিক। লড়াই করাই ওর পেশা; ছেলেবেলা থেকে কুশলী যোদ্ধা হিসেবে বেড়ে উঠেছে। ওর বাবা সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন, রণকৌশল নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন তিনি; বাবার দেখাদেখি পল কেড্রিকও সামরিক বিষয়ে ছোট বেলাতেই আগ্রহী হয়ে উঠে। বাবার কাছেই শিক্ষা লাভ করে ও, তা ছাড়া এক খবরকাগজের মালিকও ওকে অনেক কিছু শিখিয়েছে-কোনও এক শীতকালে ওদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল সে।