ভেবে চিন্তে মাঠে নেমেছে ওরা, বুঝলে! খাস জমি কেনার ছমাস আগে নোটিশ জারি করার নিয়ম। ওরা নোটিশ জারি করিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এমন জায়গায় আর এত ছোট ছোট হরফে যে, কারও চোখে পড়ার উপায় নেই। এবং সত্যি সত্যি তিনমাস যাবার আগে কারও চোখে পড়ে নি। পরে, নেহাত ঘটনাচক্রে, দেখতে পেয়েছে একজন এখন গায়ের জোরে আমাদের তাড়ানোর চেষ্টা করছে ওরা, যাতে জায়গাটা বিনা বাধায় ওদের হাতে যায়। আর জলাভূমির কথা বললে, দেখলৈ বুঝবে, জায়গাটা আগাগোড়া মরুভূমি। দুএক জায়গায় সামান্য পানি আছে, ওখানেই যা একটু ফসল ফলে।
মাথা দোলাল ডাই রীড, ছোট ডটঅলা পাইপটা থেকে ছাই ঝাড়ল। ওদের মোকাবিলা করব, সে টাকা আমাদের নেই। আমাদের সঙ্গে উকিলও নেই: কাজে লাগতে পারে তেমন মানুষ একজনই আছে, এক খবরকাগজঅলা, কিন্তু খালিহাতে তাকে ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে ফায়দা কী?
ভার হয়ে আছে ডাই রীডের চেহারা। ওদের সঙ্গে পেরে ওঠা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। শয়তানদের টাকার অভাব নেই, প্রচুর গুণ্ডা-পাণ্ডা ভাড়া করেছে। কিন্তু দেখো, ওদের অনেকের রক্তে আমাদের মাটি লাল হবে, রক্ত দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে ওদের। আমরা চেষ্টা করব যাতে শুধু ভাড়াটে গানহ্যান্ডরা নয়, দুএকটা রুই কাতলাও মারা পড়ে। ওদের সঙ্গে থাকলে তোমাকেও ছাড়া হবে না, বয়!
ভাবছে, কেড্রিক। তুমি একেবারে উল্টো কাহিনী শোনালে। আমাকে একটু ভাবতে হবে। আর হ্যাঁ, কাল আমরা চেহারা দেখাতে যাচ্ছি ওখানে, এই সুযোগে জায়গাটা নিজের চোখে দেখব।
ঝট করে তাকাল ডাই রীড। ওদের সঙ্গে যেয়ো না! ওখানে গেলে কাউকে জ্যান্ত ফিরতে দেব না, ঠিক করেছি আমরা!
শোনো, ডাই! সামনে ঝুঁকে এল কেড্রিক। আপাতত তোমাদের এই পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হবে। আমরা কেবল শক্তি দেখাতে যাব ওখানে, হুমকি দেব, ব্যস; কিন্তু, কথা দিচ্ছি, আমাদের তরফ থেকে একটা গুলিও ছোড়া হবে না। আমরা যাব, ঘুরে ফিরে চলে আসব। গোলাগুলি হলে সেজন্যে তোমার লোকেরাই দায়ী থাকবে। তুমি জলদি যাও, ওদের শান্ত করো। ওদের বল আমাকে একবার জায়গাটা দেখার সুযোগ দিতে।
আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল ডাই রীড। বাব্বাহ, এদ্দিন পর তোমাকে দেখে কী যে খুশি হয়েছি বোঝাতে পারব না। অবস্থা অন্যরকম হলে আগের মতো তোমাকে বাড়ি নিয়ে নিজের হাতে খাওয়াতাম, তাস খেলতাম। আমার বউকে দেখলে অবাক হয়ে যেতে তুমি!।
তুমি বিয়ে করেছ? বলো কী। কেড্রিকের কণ্ঠে অবিশ্বাস! আমার মোটই বিশ্বাস হচ্ছে না।
দাঁত বের করে হাসল ডাই রীড। বিয়ে করেছি এবং খুব সুখে আছি, পল, হঠাৎ বিষণ্ণ হয়ে গেল তার চেহারা। ঘর-দোর বাঁচাতে পারলে আরও অনেক দিন সুখে থাকতে পারতাম। তা বোধ হয় আর হলো না। তবে একটা কথা জেনে রাখো, খোদার কসম বলছি, আমাকে না মেরে কেউ আমার জমি কেড়ে নিতে পারবে না। আর একা মরব না আমি, কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যাব!
ডাই রীড বিদায় নেবার অনেকক্ষণ পরেও বিছানায় বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল কেড্রিক। সামান্থাও কি এরকম কিছু বলতে চেয়েছিল? কোন্ পক্ষে আছে মেয়েটা? সবার আগে বিবাদের জায়গায় গিয়ে নিজের চোখে দেখা দরকার সব কিছু, তারপর আবার গুন্টারের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। মনে মনে লোকগুলোর চেহারা উল্টেপাল্টে দেখল,ও।
কীথ…নেকড়ের মতো হিংস্র ঠাণ্ডা চেহারা। বারউইকথলথলে চেহারা, তাতে কঠোর সর্বগ্রাসী কর্তৃত্বের ছাপ।
গুন্টার বন্ধুসুলভ অমায়িক চেহারা, কিন্তু পাশাপাশি প্রচ্ছন্ন ধূর্ততার ছাপ আছে না?
বাইরে থেকে টিনপ্যানি পিয়ানোর বাজনা ভেসে আসছে, মেয়েলি কণ্ঠের গান শোনা যাচ্ছে। জুয়ার টেবিলে চিপস পড়ার শব্দ হচ্ছে। কানে আসছে বুটের খটখট, স্পারের ঝুনঝুন-ক্রমাগত ঘুরে বেড়াচ্ছে লোকজন।
উঠে দাঁড়াল পল কেড্রিক। শার্ট গায়ে দিয়ে কোমরে গানবেল্ট বেঁধে নিল। তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে এল। করিডর ধরে পা বাড়াল লবির উদ্দেশে।
পাশের কামরার দরজা খুলে গেছে। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে দেখছে এক লোক!
ডরনি শ।
০৩. মরুভূমির অধিবাসীরা
মরুভূমির অধিবাসীরাই কেবল এমন শান্ত সকালের সঙ্গে পরিচিত। চারদিক নিঝুম। থেকে থেকে সিক্যাডা ডাকছে শুধু। নরম রোদে আরামদায়ক উষ্ণতা। দূরে, আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড় আর মেসা। এখানে সেখানে দলবদ্ধ মেঘের ছায়া।
ছজন অশ্বারোহী, রুক্ষ কঠিন ছয় জন মানুষ, স্যাডলে শব্দ তুলে ঘোড়া হাঁকিয়ে বিস্তৃত মরুভূমির প্রান্তে পৌঁছুল। প্রত্যেকেই যার যার ভাবনায় ডুবে আছে। ওরা সবাই পিস্তলবাজ, অতীতে মানুষ হত্যা করেছে, ভবিষ্যতেও একই উদ্দেশ্যে পিস্তল ব্যবহার করবে অনায়াসে। নিষ্ঠুর সময়ের কাছে মার খেয়ে ওদের অনেকেই দয়ামায়াহীন পাষণ্ড পরিণত হয়েছে, অবশিষ্টদের ভাগ্যেও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে। বন্দুকবাজদের এর হাত থেকে নিস্তার নেই।
অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে যারা বেঁচে থাকে তারা নিঃসঙ্গ মানুষ, এরাও ব্যতিক্রম নয়। এদের কাছে মানুষ মানেই সম্ভাব্য শত্রু, প্রতিটি ছায়া বিপদ। সতর্কভাবে ঘোড়া নিয়ে এগোচ্ছে ওরা; আচরণে সংযত, চোখে সাবধানী দৃষ্টি।
চিঁ-হিঁ-হিঁ করে ডেকে উঠল একটা ঘোড়া; আলগা পাথরে ঘষা খেলো একটা খুর; নড়েচড়ে আরাম করে স্যাডলে বসল কেউ, লম্বা করে দম নিল। আর কোনও শব্দ নেই কোথাও।