বিছানা ককিয়ে উঠতে পারে এই ভয়ে ওঠার সাহস হলো না কেড্রিকের। ফস করে একটা দেশলাই জ্বলে উঠল। মোমবাতি জ্বালাল খুনী। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ কথা বলে উঠল লোকটা। কেড্রিক, আমি জানি তুমি এখানে আছ। ঘরের মেঝেতে পানির দাগ দেখতে পাচ্ছি। এ-ঘরে একটা পাথুরে দেয়ালের পেছনে আছি আমি, টেবিল হিসেবে ব্যবহার করি এটাকে। সুতরাং বুঝতেই পারছ, আমার গায়ে গুলি লাগাতে পারবে না। কিন্তু ওই ঘরে কোনও আড়াল নেই। তো; কী করতে হবে বুঝতেই পারছ, পিস্তল ফেলে মাথার ওপর দুহাত তুলে লক্ষ্মী ছেলের মতো বেরিয়ে এসো। নইলে একটানা গুলি শুরু করব আমি,ঘরের এক ইঞ্চি জায়গাও বাদ দেব না!
দুঘরের মাঝখানে একটা আড়াআড়ি খুঁটির সাহায্যে পর্দাটা ঝোলানো, পর্দার ওপর দিয়ে ও-পাশের ঘরের ছাদ দেখা যাচ্ছে। এ-ঘরটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক উঁচু। সম্ভবত একটা বেরিয়ে থাকা পাথর কিংবা কোনও গুহাকেই দেয়ালে ঘিরে নিয়েছে খুনী। কয়েকটা ভারি সিডার কাঠের বীম দেখা যাচ্ছে, সিলিং বসানোর জন্যে ওগুলো লাগানো হয়েছিল, এখন আর সিলিংয়ের চিহ্ন নেই। এ-ঘরেও ও-রকম বীম থাকা উচিত।
নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল কেড্রিক। হঠাৎ নড়াচড়ার শব্দ পেয়েই গুলি করল ও।
পাশের কামরা থেকে হাসির শব্দ ভেসে এল। জানতাম গুলি করবে! তা একটা পিস্তল তো এখন খালি! অন্যটা ফেলে এবার বেরিয়ে এসো! উপায়। নেই, কেড্রিক!
জবাব দিল না পল। মাথার ওপর হাত তুলে দিয়েছে ও, বীম খুঁজছে। হঠাৎ আলতো ছোঁয়া লাগল হাতে। হ্যাঁ, আছে। পাশের ঘরের, বীমের উচ্চতা দেখে কৃত ওপরে লাফ দিতে হবে হিসেব করে নিল ও।
বীমটা পুরোনো হলে! ওর ভার সইতে পারবে তো? কিন্তু ঝুঁকিটা নিতেই হচ্ছে।
লাফ দিল কেড্রিক। বীম আঁকড়ে ধরল ওর হাত-নিঃশব্দে টেনে নিজেকে ওপরে তুলল। আলোকিত পাশের ঘরের অভ্যন্তর দেখা যাচ্ছে। কিন্তু খুনীর অবস্থান বুঝতে পারল না কেড্রিক।
আবার কথা বলল লোকটা। নাহ, আর সময় দিতে পারছি না; কেড্রিক। বেরিয়ে এসো! নইলে গুলি করল! জলদি পিস্তল ফেলে দাও!
অখণ্ড নীরবতা নামল কামরায়।
আচমকা পিস্তলের কানফাটা আওয়াজে, খানখান হলো নীরবতা। গুলি করছে খুনী! অবিরাম! একটা সিক্স-গান খালি হলো। তারপর আরও, একটা পিস্তল খালি করল সে। খোদাই মালুম লোকটার কাছে কটা পিস্তল আছে! ওর মতিগতি বোঝারও উপায় নেই। আবার সযত্নে ছটা গুলি করল সে! দেয়ালে বাড়ি খেয়ে কৈড্রিকের ঠিক মাথার কাছ দিয়ে ছুটে গেল একটা বুলেট!
দীর্ঘ নীরবতা। তারপর নড়াচড়ার আওয়াজ।
ঠিক হ্যায়, এখনও বেঁচে থাকলে ফের গুলি করছি আমি। তবে হার স্বীকার করতে রাজি থাকলে শেষ বারের মতো সুযোগ দিচ্ছি। তোমাকে জ্যান্ত পেলে আমারই লাভ।
আচমকা সরে গেল পর্দা। ফাঁকায় এসে দাঁড়াল অ্যাল্টন বারউইক। হাতে উদ্যত পিস্তল। গুলি করার জন্যে তৈরি।
.
কোনওরকম আওয়াজ দিল না পল কেড্রিক। ইতিউতি তাকাল বারউইক। তারপর ছুটে এল ভেতরে। ক্রোধে চিৎকার করছে। প্রথমে কেড্রিকের টুপি, তারপর বর্ষাতি ছুঁড়ে ফেলল বিছানার ওপর থেকে। বর্ষাতির সঙ্গে কেড্রিকের অন্য পিস্তলটাও পড়ল মেঝেতে, হোলস্টার থেকে বেরিয়ে বর্ষাতির সঙ্গে আটকে ছিল, কোনওমতে। হিংস্র চেহারায় ওটার দিকে তাকিয়ে রইল বারউইক একটানে সরিয়ে ফেলল বিছানাটা। রাগে উন্মাদপ্রায়। খাটের নীচে কেড্রিককে খুঁজল। কেড্রিক নেই বিশ্বাস করতে পারছে না। দিশেহারা চেহারা।
হঠাৎ থমকে দাঁড়াল বারউইক। আস্তে আস্তে স্তিমিত হলো ক্রোধের আগুন। দাঁড়িয়ে আছে সে, হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে বিশাল বুক। এখনও পিস্তল ধরে রেখেছে। চলে গেছে! চলে গেছে! নিকটাত্মীয় বিয়োগব্যথায় কাঁদছে যেন। অথচ এখানেই বাগে পেয়েছিলাম!
বীমের গা থেকে ছোট্ট একটা টুকরো ভেঙে নিল কেড্রিক। বারউইকের গাল, বরাবর ছুঁড়ে মারল। যেন মৌমাছির হুল ফুটেছে, চমকে উঠল লোকটা। ঘাড় কাত করে অকাল ওপর দিকে। দৃষ্টি বিনিময় হলো দুজনের। ধীর পায়ে পিছিয়ে গেল বারউইক, হাসছে। সত্যি চালু ছেলে তুমি, কেড্রিক! ধূর্ত! গবেট কীথের জায়গায় তোমাকে যদি পাশে পেতাম! লোকটা খালি বড় বড় বুলি কপচাত, ভেতরে কিছু নেই-ঠন ঠন!
যাক গে, লম্বা করে দম নিল বারউইক। এবার তোমাকে পেয়েছি। আমাকে অনেক জ্বালিয়েছ তুমি, সেজন্যে পস্তাতে হবে। মেঝে থেকে কেড্রিকের পিস্তল তুলে নিয়ে আরেকটু পিছিয়ে গেল সে। ঠিক হ্যায়, নেমে এসো এবার!
মেঝেয় নামল পল কেড্রিক। বিরক্তির সঙ্গে মাথা নেড়ে ওর পিস্তলের দিকে ইঙ্গিত করল বারউইক। ধাপ্পাবাজি রাখো! ওটা খালি। ফেলে দাও!
ব্যাপারটা কী, বারউইক? হঠাৎ জানতে চাইল কেড্রিক। এখানে কেন? বর্মটা কীসের জন্যে? ডরনি শয়ের এ-অবস্থা কেন?
আচ্ছা? এসব তুমি জানলে কীভাবে? অবশ্য এখন আর তাতে অসুবিধে নেই। তুমি তো বেঁচে থাকছ না! পিছিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল বারউইক। পিস্তল উঁচিয়ে কেড্রিকের দিকে সতর্ক নজর রাখছে। ব্যাপারটা খুবই সোজা। সোনার জন্যে, বাছা, সোনা! অনেক টাকার সোনা! ওয়্যাগন ট্রেনের ওপর হামলা চালানোর জন্যে ইন্ডিয়ানদের আমিই উস্কে দিয়েছিলাম। ওয়্যাগন ট্রেনের সোনা হাতাতে চেয়েছি। ডরনির এক বন্ধুর বাবা ছিল ওই সোনার মালিক!