এই জিনিস পশ্চিমে তেমন চোখে পড়ে না, পছন্দ করে না কেউ; কিন্তু বেশ কয়েকবার এগুলো ব্যবহার করতে হয়েছে কেড্রিককে, চমৎকার কাজ দেয়। অতিরিক্ত গুলি থাকায় প্রায়ই বিশেষ সুবিধে লাভ করেছে ও। ভালো মার্কসম্যানের হাতে পড়লে পয়েন্ট-ফোর-ফোর-রাশানের মতোই নির্ভুল লক্ষ্য ভেদ করতে পারে।
তবে যে কোনও জিনিস ব্যবহারের উপযুক্ত সময় এবং স্থান আছে; এ দুটো পিস্তল বিশেষ অবস্থার জন্যে তুলে রেখেছে ও। সাবধানে পিস্তল দুটো আবার কাপড় জড়িয়ে ব্যাগের একেবারে তলায় লুকিয়ে রাখল কেড্রিক। কোমরে ঝোলাল পয়েন্ট ফোর-ফোর রাশানজোড়া। উইনচেস্টারটা বের করে সাফ করার পর গুলি ভরে নিল। তারপর বিছানায় বসে গানবেল্ট খুলে শোবার আয়োজন করবে, হঠাৎ মৃদু টোকা পড়ল দরজায়।
এসো, বলল কেড্রিক। শত্রু হলে তোমার চেহারাটা একবার দেখতে চাই।
চোখের পলকে দরজাটা খুলেই আবার বন্ধ হয়ে গেল। দরজার সামনে কেড্রিকের মুখোমুখি দাঁড়াল আগন্তুক, লম্বায় পাঁচ ফুট ইঞ্চিচারেক হবে, চওড়াও বিশাল; মেদহীন পেশীবহুল শরীর; প্রশস্ত বাদামি মুখটা দেখে মনে হয়, গাছের গুঁড়ি কুঁদে বের করা হয়েছে; ছোট করে ছাঁটা কালো চুল সেঁটে আছে খুলির সঙ্গে; মোটাসোটা গর্দান চওড়া কাঁধের সঙ্গে মিশে গেছে। কোমরের বাম দিকে একটা পিস্তল ঝোলানো, হাতে চিকন কিনারার টুপ। ঘোরাচ্ছে।
এক লাফে উঠে দাঁড়াল কেড্রিক। ডাই! প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটল যেন কামরায়। ডাই রীড! তুমি এখানে!
হাহ? তা হলে তুমিই আমাদের এত বিপদের কারণ?
আমি? ইঙ্গিতে ডাই রীডকে চেয়ারে বসতে বলল কেড্রিক। কীভাবে?
ভালো করে ওকে জরিপ করল ওয়েলশম্যান ডাই রীড, তারপর চেয়ারে বসে হাঁটুর ওপর বিশাল থাবা রেখে সামনে ঝুঁকে এল। ঈষৎ বাকানো পেশীবহুল পা দুটো এক নজর দেখল কেড্রিক।
তুমি বারউইকের দলে যোগ দিতে আস নি? ঘর বাড়ি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করার কাজ নাও নি? অনেক বদলে গেছ তুমি, পল, নষ্ট হয়ে গেছ!
তুমি ওদের একজন? বারউইকরা যে জমির মালিকানা দাবী করছে। সেখানে থাকে?
হ্যাঁ। গায়ে খেটে সেখানে ফসল ফলিয়েছি। এখন শয়তানের বাচ্চারা দূর করে দিতে চাইছে। কিন্তু তার আগে লড়াইতে নামতে হবে ওদের-আর, পল, ওদের দলে থাকলে তুমিও রেহাই পাবে না, কথাটা মনে রেখো।
চিন্তিত চেহারায় ডাই রীড়ের দিকে তাকাল কেড্রিক। চরমে পৌঁছেছে ওর সন্দেহ…এই লোক ওর পরিচিত। কেড্রিকের বাবা ওয়েলশ ছিলেন, মা ছিলেন আইরিশ-ডাই রীড ওদেরই বন্ধু। বাবার সঙ্গে দেশ ছেড়ে এখানে আসে ডাই রীড। মা আর বাবার যখন বিয়ে হয় বাবার সঙ্গেই কাজ করত ও। মাইকেল কেড্রিকের চেয়ে বয়েস ছোট হলেও তার বন্ধু হিসেবেই পশ্চিমে এসেছিল।
ডাই, আস্তে করে বলল কেড্রিক, স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, আজ এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, পুরো ব্যাপারটা সম্পর্কে সংশয় জেগেছে আমার মনে। আসলে কি জানো, যুদ্ধের কিছুদিন পর গুন্টারের সঙ্গে আমার পরিচয়, ওর অনুরোধে ওরই এক বন্ধুর গরু নিয়ে গিয়েছিলাম আমি। সেই বছর খুব গোলমাল যাচ্ছিল, ইন্ডিয়ানরা প্রায় প্রতিটি গরুর পালে হামলা চালাত, যত ইচ্ছে গরু কেড়ে নিত; আর ছিনতাইবাজরা চেষ্টা করত পুরো পালটাই ছিনিয়ে নিতে। কেউ কেউ ওদের জমির ওপর দিয়ে গরু যাচেছ বলে মোটা অংকের টাকা দাবী করত। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমি ইন্ডিয়ানদের, ওদের দাবী অনুযায়ী নয়, আমার ইচ্ছে মতো অল্প কটা গরু দিয়ে প্রায় বিনা লোকসানে গরুর পাল গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছিলাম।
সে কথা গুন্টার ভোলে নি, তা ছাড়া যুদ্ধে আমার কিছু সাফল্যের কথাও তার জানা ছিল। তাই আমার কাছে আবার একটা কাজের প্রস্তাব নিয়ে যায়। নিউ অরলিন্সে সে আমাকে এ কাজের প্রস্তাব দেয়, আমার কাছে তখন মোটেই খারাপ কিছু মনে হয় নি। গুন্টার আমাকে কী বলেছে শোনো।
ওর ফার্ম মানে, বারউইক গুন্টার অ্যান্ড কীথ, তিন হাজার সেকশন জমি জরিপের পর কেনার উদ্দেশ্যে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। ওরা হলফনামায় বলেছে জায়গাটা জলাভূমি, প্রায়ই এখানে বন্যা দেখা দেয়। ওদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেল ল্যান্ড অফিস ঘোষণা করেছে, ফসলের মৌসুমে যেহেতু জায়গাটা পানির নীচে থাকে এবং পরে জলসেচের প্রয়োজন হয়, তাই একে জলাভূমি হিসেবে বিক্রি করে দেয়া যায়।
গুন্টার আরও বলেছে, ওরা জমি কেনার কাজ শেষ করে এনেছিল, কিন্তু হঠাৎ একদল লোক ওখানে এসে জেঁকে বসেছে, কিছুতেই সরানো যাচ্ছে না, ওদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কাজ হয় নি। জায়গাটা ঝামেলামুক্ত করতে কিছু লোকের নেতৃত্ব দিতে হবে আমাকে। গুন্টার আমায় জানায়, স্কোয়ার্টারদের অধিকাংশ লোক গরু চোর, আউট-ল কিংবা দেশদ্রোহী। লড়াই ছাড়া ওদের উৎখাত করার অন্য কোনও উপায় নেই, সে জন্যেই আমাকে দরকার।
মাথা কঁকাল ডাই রীড়। ঠিকই বলেছে, লড়াই ছাড়া উপায় নেই; কিন্তু আমাদের মধ্যে চোর-ডাকাত পাবে না। না, ভুল হলো, পাইপ বরাবর কেড্রিকের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল সে, পাবে, নেহাত হাতে গোনা এক আধ জন। সব ঝুড়িতেই পচা ডিম থাকে। বলে চলল ডাই রীড। কিন্তু বাকি সবাই সৎ মানুষ, ঘর বানিয়েছি, ফসল ফলাচ্ছি।
আচ্ছা, হলফনামায় যে জায়গাটা জনবসতিহীন বলে উল্লেখ করেছে ওরা, সেটা তোমাকে বলেছে গুন্টার?…বলে নি। তা হলে শোনো। ওখানে চুরানব্বই সেকসন জমির ওপর ঘরবাড়ি আছে, ভাঙা-চোরা হতে পারে, কিন্তু তবুও ঘর।