ছেলেটা বলেছে; বর্মঅলা লোকটা প্রত্যেকটা মানুষকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে ওদের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছিল। একবার ঝোঁপের ভেতর সোজা ওর দিকে তাকিয়েছিল সে। প্রাণ ভয়ে কাদা হয়ে গিয়েছিল বাচ্চাটা। কিন্তু ওকে দেখতে পায় নি লোকটা, তা হলে বাঁচত না!
সেই থেকে গুলাটা নিয়মিত দেখা যাচ্ছে? প্রশ্ন লরেডো শ্যাডের।
হুঁ। কিন্তু আজ পর্যন্ত সওয়ারীর চেহারা দেখতে পায় নি কেউ। মাঝে মাঝে খুব দূরে আরোহীসহ ঘোড়াটা দেখা যায়; আবার অনেক সময় একাই দাঁড়িয়ে থাকে ওটা। ওটাকে দেখলেই খোদার নাম জপতে জপতে পালায় সবাই। উঠে গিয়ে আবার কফিপট নিয়ে এল বুড়ো। কিন্তু ঠিক আজই তোমরা এই গল্প শুনতে চাইলে দেখে অবাক হয়েছি, বলল সে।
একসঙ্গে বুড়োর দিকে তাকাল ওরা। কৌতূহল আঁচ করে আবার খেই ধরল এসক্যাভাদা। কয়েকদিন আগে শিকারে বেরিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি ক্যাকটাস আর মেসকিট ঝোপে কয়েকটা মৌমাছি ঘুর ঘুর করছে। ওদের মৌচাক কোথায় জানার ইচ্ছে হলো। পিছু নিলাম। এখান থেকে দক্ষিণে অনেকটা দূরে চলে গেলাম আমি।
একেবারে দক্ষিণে না, বলা যায় দক্ষিণ-পশ্চিমে। মৌমাছির পেছন পেছন সোজা হগব্যাকে পৌঁছে গেলাম। চেনো তো জায়গাটা?
পাঁচ ছশো ফুটের মতো উঁচু একটা রিজ হগব্যাক, প্রথম চারশো ফুট তো প্রায় খাড়া উঠে গেছে। রিজ বেয়ে উঠে মৌমাছিদের চাকের গুহাটা খুঁজতে গিয়ে একটা ক্লিফ-হাউস চোখে পড়ল। ঘরটা কিন্তু মানুষের তৈরি। বিশ একুশ বছরের বেশি হবে না ওটার বয়স।
যা দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি, আমার কোদাল-যেটা হারিয়ে গিয়েছিল। ওই ঘরে একটা তাকের ওপর রাখা ছিল। তো বুঝলাম কোদালটা হারায় নি, চুরি করেছিল কেউ। ঘরটা তল্লাশি করলাম আমি। চমৎকার গোছানো সব কিছু, খাবার কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব নেই। কেউ থাকে ওখানে, বাতিল জিনিসের নীচে লুকোনো একটা ব্রেস্টপ্লেট আর হেলমেটও দেখেছি আমি।
সত্যি?কেড্রিকের গলায় অবিশ্বাস।
নিশ্চয়ই! হাসল, এসক্যাভাদা, আরও আছে। দেখলাম মেঝের ওপর এক যুবকের লাশ পড়ে আছে। কয়েকদিনের পুরোনো। পুরোনো একটা স্প্যানিশ ছুরি গেঁথে আছে বুকে। বর্ম পরা স্প্যানিশের কাছে এই রকম একটা; ছুরি ছিল, আগেই বলেছি।
লাশ-যুবকের? হঠাৎ সামনে ঝুঁকে পড়ল কেড্রিক। বেমানান কিছু চোখে পড়েছে তোমার? যুবকের এক হাতের বুড়ো আঙুল কি কাটা ছিল?
বিস্মিত হলো এসক্যাভাদা। আশ্চর্য, জাদু জানো নাকি? হ্যাঁ, ছেলেটার এক হাতের বুড়ো আঙুল কাটা ছিল, অন্য হাতের অবস্থাও কাহিল-স্লিংয়ে বাঁধা ছিল। ডরনি শ! ঝট করে উঠে দাঁড়াল লরেডো শ্যাড ইয়াল্লা, ও যে ডরনি শ!
শ? ভুরুতে ভাঁজ পড়ল এসক্যাভাদার, দুচোখ জ্বলজ্বল করছে। আরে, আশ্চর্য, সত্যি আশ্চর্য ব্যাপার! ওয়্যাগন ট্রেনের বেঁচে যাওয়া ছেলেটাই তো ডরনি শ!
কেড্রিকের চেহারায় চিন্তার ছাপ। ডরনি শ-মারা গেছে। ডরনি ওয়্যাগন ট্রেনের সেই ছেলেটা হলে তার গ্রাকে ভয় পাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু এত বছর পর সেই লোকের হাতেই মারা যাওয়া কিংবা ভূতের হাতে প্রাণ হারানো-যদি ভূত নামে কোনও পদার্থ আদৌ থাকে-পাগলেও বিশ্বাস করবে না। কিন্তু ব্যাপারটাকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়।
কপালের লিখন কেউ খণ্ডাতে পারে না, গম্ভীর কণ্ঠে বলল এসক্যাদা। ওই ছুরির হাত থেকে পালিয়েছিল ছেলেটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওটার ঘায়েই মরতে হলো।
উঠে দাঁড়াল কেড্রিক। আমাদের ওখানে নিয়ে যেতে পারবে, এসক্যাভাদা? হগব্যাকে?
পারব! বাইরে তাকাল এসক্যাভাদা। তবে এই বৃষ্টিতে নয়। আমার আবার গাঁটবাত আছে কিনা!
তা হলে ঘরটা কোথায় বলে দাও, বলল কেড্রিক। এখুনি যাচ্ছি আমি!
.
কোল মাইন ক্রিকের মুখ পার হচ্ছে ওঁরা, হঠাৎ ট্র্যাকের দেখা পেল লরেডো শ্যাড। সঙ্গে সঙ্গে লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল ও। ট্র্যাকের দিকে ইঙ্গিত করল। চমৎকার নাল লাগানো ঘোড়ার পায়ের ছাপ।
গ্রুলা! গম্ভীর কণ্ঠে বলল কেড্রিক। এই ছাপ চিনতে আমার ভুল হবে না।
এগিয়ে চলল ওরা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আগের মতোই মুষলধারে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টির ফোঁটায় বাদ্য বাজছে. ঘাড়ে, মাথায়। পিচ্ছিল হয়ে আছে ট্রেইল, বিপজ্জনক। অন্ধকার লাগছে চারদিক।
আশ্রয় নেয়ার মতো একটা জায়গা খোঁজা উচিত, বলল শ্যাড, এই বৃষ্টিতে ঘোড়া খুঁজে পাওয়া অসম্ভব!
কিন্তু সকাল হবার আগেই এ-সব ট্রাক মুছে যাবে। তা ছাড়া আমার বিশ্বাস, এসক্যাভাদা যে গুহাটায় ডরনির লাশ দেখেছে সেখানেই আমাদের আসামীকে পাব!
ডরনি ওখানে গেল কীভাবে?
আমার ভুল না হলে, মুখ থেকে বৃষ্টির পানি মুছল কেড্রিক, পরিচিত কারও সঙ্গে ডরনির দেখা হয়ে গিয়েছিল, সে-ই ওকে হাইডআউটে নিয়ে গেছে। ওর মা বাবাসহ ওয়াগন ট্রেনের যাত্রীদের হত্যাকারী গ্রুর রাইডারই এই পরিচিত লোক। বর্মটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে সব বুঝে ফেলে ডরনি-তাই মরতে হয়েছে।
কিন্তু, গজগজ করে উঠল শ্যাড, আমার কাছে খোলসা হচ্ছে না। একটা ঘোড়া এতদিন বাচে কীভাবে?
বাঁচে না! এতগুলো বছরে কমপক্ষে গোটা দুয়েক গ্রা মরে ভূত হয়ে যাবার কথা। লোকটা সম্ভবত ইন্ডিয়ান আর মেক্সিকানদের গ্রুলাভীতিকে কাজে লাগিয়ে ওদের নিজের পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। যা হোক, কেবিনে পৌঁছুলেই আমাদের সমস্ত জিজ্ঞাসার জবাব মিলবে।