সিগারেট ধরাল লরেডো শ্যাড। কঠিন কাজ, বলল ও, তবে আমি বোধ হয় একটা সূত্র পেয়েছি।
কী? চোখ তুলে তাকাল কেড্রিক।
গ্রুলার ব্যাপারে বারউইক কখনও কিছু বলেছে?
না, আমি অন্তত, শুনি নি। ওর সামনে ঘোড়াটার প্রসঙ্গ উঠেছিল একবার, কিন্তু সে কোনওরকম কৌতূহল প্রকাশ করে নি।
আগে থেকে সব কিছু জানে বলেই হয়তো চুপ মেরে ছিল, বলল শ্যাড। প্রথম থেকেই লোকটা আমাকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছিল।
চোখ তুলে লরেডোর দিকে তাকাল সামান্থা। হয়তো ঠিকই বলেছ। কিন্তু পিট আর স্যু লেইন বারউইকেরই সৎ-ছেলেমেয়ে, ওরা ঘোড়াটার সম্পর্কে কিছু জানে না কেন? কিছু জানলে একমাত্র ডরনি শই জানত।
উঠে দাঁড়াল পল কেড্রিক। তা হলে দেখা যাচ্ছে একটা পথই খোলা আছে আমাদের সামনে, বলল ও, ঘোড়াটার ট্র্যাক খুঁজে বের করে ট্রেইল করতে হবে, লরেডো। পুরোনো কোনও ট্র্যাক রেছে নিয়ে দেখতে হবে ওটা আমাদের কোথায় নিয়ে যায়।
.
তৃতীয় দিনে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। সারা সপ্তাহ ঠাণ্ডা হিম হাওয়া দিচ্ছিল, আকাশ ঢেকেছিল কালো মেঘে। বৃষ্টি নামবে সবাই জানত। বর্ষাতির ভেতর কুঁকড়ে গেছে লরেডো, গ্লাভস পরা হাতে তালি বাজাল, বিড়বিড় করে উঠল, সেরেছে! বিরক্তির সঙ্গে বলল ও, সব ট্রাক মুছে সমান হয়ে যাবে।
পুরোনোগুলো তো বটেই, সায় দিল কেড্রিক। যা হোক, এ-পর্যন্ত অন্তত ডজনখানেক ট্র্যাক অনুসরণ করেছি আমরা, লাভ তো হলো না। সবগুলো ট্র্যাক হয় পাথরের মাঝে উধাও হয়েছে, নয়তো বালির সঙ্গে মিশে গেছে।
ক্যানিয়ন ধরে খানিকটা এগোলে এসক্যাভাদার কেবিন, বলল লরেডো শ্যাড। চল ওখানে গিয়ে গলা ভিজিয়ে আসি। এই সুযোগে একটু আগুনও পোহানো যাবে।
চেনো নাকি তাকে?
হ্যাঁ, বিশ্রাম নেয়ার জন্যে একবার ওর ওখানে থেমেছিলাম। আধা স্প্যানিশ আধা উতে লোকটা। কঠিন মানুষ। সেই কবে এখানে আস্তানা গেড়েছে আর যায় নি। ওর কাছে হয়তো কোনও খবর মিলে যেতে পারে।
ক্যানিয়নের অভ্যন্তরে পথ পিচ্ছিল। তুমুল বৃষ্টির মাঝে ক্যানিয়নের লালচে দেয়াল কালো দেখাচ্ছে। চোখের সামনে কেউ বৃষ্টির ফোঁটায় বোনা পর্দা টাঙিয়ে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পাহাড়ের এক কোণে বুড়োর কেবিনে পৌঁছুতে পৌঁছুতে ভিজে কাক হয়ে গেল ওরা, ঠাণ্ডায় হি-হি করে কাঁপছে। ঘোড়া দুটোর অবস্থাও তথৈবচ। খিদেয় নাড়িভুড়ি হজম হবার যোগাড়।
দরজা খুলে ওদের ভেতরে ঢুকতে দিল এসক্যাভাদা। গাল ভরা হাসি উপহার দিল। তোমাদের দেখে খুশি হলাম, বলল সে। তিন সপ্তাহ হলো মানুষের চেহারা দেখি নি।
বর্ষাতি খুলে বসে পড়ল কেড্রিক আর লরেডো শ্যাড। ওদের কড়া হুইস্কি মেশানো কফি দিল এসক্যাভাদা। আগে শরীর গরম করে নাও, বলল সে। এখুনি আবার বেরোবে না নিশ্চয়ই? ঠাণ্ডা থেকে এসে হুইস্কি খেলে আরাম লাগে, যদি না আবার বাইরে যাও। বাইরে গেলে সব উত্তাপ চামড়া ঠেলে বেরিয়ে আসে, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এজন্যেই হুইস্কি খেয়ে বাইরে গিয়ে মারা যায় লোকে।
আশপাশে কখনও একটা গ্রস্না মাস্ট্যাং দেখেছ তুমি, এসক্যাভাদা? বুড়োর দিকে তাকিয়ে আচমকা জিজ্ঞেস করে বসল লরেডো শ্যাড।
ওদের দিকে তাকাল বুড়ো, দৃষ্টিতে বিদ্রূপ মেশানো কৌতুক তোমরা আবার ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করো না তো?
না, বলল কেড্রিক, কিন্তু তার সাথে এর কী সম্পর্ক?
গ্রুলাটা এই অঞ্চলের একটা কিংবদন্তীর নায়ক, কমপক্ষে তিরিশ-চল্লিশ বছর কিংবা তারও আগের গল্প। ওটাকে মৃত্যু আর বিপদের প্রতীক হিশেবে দেখে সবাই।
কেড্রিকের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল লরেডো শ্যাড। কেড্রিক জানতে চাইল, ঘোড়াটা সম্পর্কে কদূর জানো তুমি? ওটা জ্যান্ত। আমরা দুজনই দেখেছি।
আমিও দেখেছি। বলল বুড়ো এসক্যাভাদা। একটা চেয়ারে বসে ওদের দিকে তাকিয়ে হাসল সে। মাথা ভর্তি পাকা চুল উস্কোখুস্কো, কিন্তু দুচোখে যেন তারুণ্যের দীপ্তি। একবার দুবার নয়, বহুবার। কিন্তু আমার কোনও বিপদ হয় নি, কোদাল হারানোকে বিপদ বললে অবশ্য ভিন্ন কথা।
চেয়ার টেনে লাকড়ির স্তুপের কাছে গেল সে। কয়েকটা লাকড়ি ঠেসে দিল আগুনে। বহুদিন আগে ঘোড়াটার কথা প্রথম শুনি আমি। বর্ম পরা এক স্প্যানিশ লোকের গল্প বলত বুড়োরা, ইঁদুররঙা ঘোড়াটা সে-ই হাঁকিয়ে বেড়াত, পাহাড় থেকে আসত আবার পাহাড়েই হারিয়ে যেত।
অনেকদিন আগে ওরই মতো বর্ম পরা এক লোক নাকি ইন্ডিয়ানদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাত। এ-হচ্ছে তারই প্রেতাত্মা। পনের ষোল বছর আগেও, ধরতে গেলে নিত্যদিনই কারও না কারও মুখে একবার শোনা যেত ওই কাহিনী। তারপর হঠাৎ যেন নতুন করে প্রাণ পেল সেটা!
মানে আবার নতুন করে চালু হয়েছে? কেড্রিক জানতে চাইল।
হ্যাঁ সল্ট ক্রিকের ধারে, ইন্ডিয়ান-আক্রমণে একটা ওয়্যাগন ট্রেন ধ্বংস হওয়ার পর এর শুরু। ওই হামলায় নারী-শিশুসহ ওয়াগন ট্রেনের প্রতিটি যাত্রী খুন হয়েছিল। কিন্তু ছোট একটা ছেলে পালিয়ে বেঁচে যায়, চার পাঁচ বছর বয়স ছিল তার। হামাগুড়ি দিয়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে একটা ঝোঁপের ভেতর আশ্রয় নিয়েছিল সে। তার মুখেই শোনা গেছে, বর্ম পরা শাদা চামড়ার একজন লোক গ্রুলার পিঠে ইন্ডিয়ানদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল।
গাঁজাখুরি, বলল শ্যাড, অবশ্য এত বড় দুর্ঘটনার পর উল্টাপাল্টা কিছু দেখলে বাচ্চাটাকে দোষ দেয়া যায় না।