ঘোড়ার পিঠে সারা শহর ঘোরাও ওকে, কর্কশ শোনাল কেড্রিকের কণ্ঠস্বর। সবাই দেখুক খুনীর চেহারা। তারপর ওর কজি আর বুড়ো আঙুল ব্যান্ডেজ করে ছেড়ে দাও!
ছেড়ে দেব? জানতে চাইল শাড়। পাগল হলে?
না। ওকে ছেড়ে দাও। এখান থেকে চলে যাবে ও, কেউ আর কখনও ওর চেহারা দেখবে না। বিশ্বাস করো, এখন বেঁচে থাকাটাই ওর জন্যে কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। কাঁধ ঝাঁকাল ও। এরকম লোক অনেক দেখেছি। ওদের ভয় পায় না এমন কারও পাল্লায় পড়লেই আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে। মোটামুটি ভালো পিস্তল চালাতে পারত বলে এতদিন নিজেকে কঠিন মানুষ ভেবে এসেছে। সে লোকজনও তাই ভেবেছে। কিন্তু আসলে ও কঠিন লোক নয়। কঠিন লোকের জয়-পরাজয় দুটোরই অভিজ্ঞতা থাকে। আগে হারতে হবে তোমাকে, তারপর ছিনিয়ে আনতে হবে জয়। হেরে যারা জিততে পারে তারাই আসলে কঠিন লোক মার খেয়ে জয় কী জিনিস বুঝতে হবে।
ইচ্ছে করলেই, শুষ্ক কণ্ঠে বলল কেড্রিক, তুমি একজনকে মেরে শুইয়ে দিতে পারো। কিন্তু মাটিতে পড়েও আবার উঠে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারলেই তাকে সত্যিকার কঠিন লোক ভাবা যায়। এতদিন বিপদের মুখে পড়ে নি বলে ডরনি শ বিরাট কিছু ভাবতে শুরু করেছিল নিজেকে। এবার নিজের অবস্থান বুঝতে পারবে।
আস্তে আস্তে ভিড় পাতলা হতে শুরু করল। দরজায় এসে দাঁড়াল সামান্থা ফক্স। ওর দিকে তাকিয়ে সহসা হেসে ফেলল কেড্রিক। সামান্থাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন বহু বছরের তৃষ্ণার্ত মরুভূমিতে জীবনের স্বাদ দিতে এসেছে এক পশলা বৃষ্টি।
সিঁড়ি বেয়ে নেমে ওর কাছে, এল সামান্থা। তারপর পিটের দিকে তাকাল। তোমার বোনটি ওপরে আছে, পিট। ওর সঙ্গে তোমার কথা বলা দরকার।
একটু ইতস্তত করল পিট লেইন, তারপর বলল, কিন্তু ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই না আমি।
সিগারেটে লম্বা করে টান দিয়ে ধোয়ার ভেতর দিয়ে চোখ ছোট করে পিটের দিকে তাকাল লরেডো শ্যাড। আমি কথা বললে আপত্তি আছে? জিজ্ঞেস করল সে। ওকে আমার ভালো লাগে।
পিট লেইনকে বিস্মিত মনে হলো। এত কিছুর পরেও? সিগারেটের মাথায় আগুনের দিকে তাকাল শ্যাড। কী জানো, গম্ভীর কণ্ঠে বলল ও, সবচেয়ে ভালো. ঘোড়াটিকে বশ করতে কিন্তু সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হয় সে।
তা হলে যাও, শ্যাডের গমন পথের দিকে তাকিয় রইল পিট, তারপর পিছু ডেকে বলল, ওকে বলো, ওর সঙ্গে পরে দেখা করব।
১৬. পর পর তিনটি সপ্তাহ কেটে গেছে
পর পর তিনটি সপ্তাহ কেটে গেছে, অ্যাল্টন বারউইকের খোঁজ নেই। একেবারে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে লোকটা। ঘোড়সওয়াররা বহুবার খুঁজতে বের হলো তাকে, প্রতিবারই ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল তারা।
তৃতীয় সপ্তাহের শেষ দিন, বিকেল। স্টেজ কোচ থেকে নামল তিনজন যাত্রী। সঙ্গে সঙ্গে সেইন্ট জেমস-এ যার যার নির্ধারিত কামরায় পৌঁছে দেয়া হলো তাদের। ঘণ্টাখানেক পর, ওরা যখন ডিনারে বসেছে, ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক দরজা ঠেলে ডাইনিং রুমে ঢুকল; ওকে দেখে তিনজনের একজন উঠে দাঁড়াল। দীর্ঘদেহী, ধোপদুরস্ত পোশাক পরনে; জুলফির কাছে পাক ধরেছে চুলে। কেড্রিকের উদ্দেশে দুহাত বাড়িয়ে দিল সে। এই যে, পল! কদ্দিন পর দেখা! জেন্টলমেন, এর নাম পল কেড্রিক যার কথা এতক্ষণ বলছিলাম। আমরা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। পল–এ মিস্টার, এডগারটন আর এ হলো মিস্টার কামিংস।
কামিংস ছোটখাট মানুষ, মোটা, সপ্রতিভ চেহারা; এডগারটন র্যানসামের মতো লম্বা চওড়া, বিশাল একজোড়া ধূসর গোফ শোভা পাচ্ছে তার নাকের ডগায়। পল-কে স্বাগত জানাল ওরা। আসন গ্রহণ করল কেড্রিক। সাথে সাথে বিস্তারিত জানতে জেরা শুরু করল দুজন। শান্তকণ্ঠে স্পষ্ট করে নিউ অরলিন্সে কোম্পানির সঙ্গে যোগ দেয়া থেকে শুরু করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করল কেড্রিক।
বারউইক নিখোঁজ? গোঁফঅলা এডগারটনের প্রশ্ন? খুনটুন হয় নি তো? বোধ হয় না, জবাব দিল কেড্রিক। হাওয়া হয়ে গেছে লোকটা। বিপদ দেখলে সটকে পড়া তার বরাবরের অভ্যেস বলে শুনেছি। বারউইক পালিয়ে যাবার পর মিস সামান্থা ফক্স আর তার মামা, জন গুন্টারের কাগজপত্র থেকে প্রায় সব কিছুই জানতে পেরেছি আমরা। কিন্তু বারউইকের অধিকাংশ কাগজপত্র উধাও হয়ে গেছে।
উধাও হয়েছে? জানতে চাইল এডগারটন। গেল কোথায়? কীভাবে?
মিস ফক্স জানিয়েছে, ডরনি শয়ের মুখোমুখি হওয়ার আগে ঘরে ঢোকার সময় অফিস কামরার সামনে দিয়ে গেছে সে, তখন সব কিছু গোছানো ছিল। কিন্তু পরে ভিড় কমে যাবার পর আমরা অফিসে ফিরে সব কিছু তছনছ অবস্থায় পেয়েছি। তার মানে কেউ তল্লাশি চালিয়েছে কিংবা ইচ্ছে করে ওভাবে ফেলে গেছে।
বারউইক ফিরে এসেছিল বোঝাতে চাচ্ছ? ওই সময় ওখানেই ছিল সে?
তা ছাড়া আর কে হবে বলো? সামান্থা-মনে, মিস ফক্স-জানিয়েছে, সেফের কমবিনেশন বারউইক ছাড়া আর কেউ জানত না। ব্যবসা দেখাশোনার সমস্ত দায়িত্ব তার ওপরই ছিল। কেড্রিকের দিকে তাকাল কামিংস। তুমি বলছ ডরনি শই কীথকে খুন করেছে, কাজটা যে তুমিই করোনি কীভাবে বুঝব? ফেসেনডেনকে হত্যা করার কথা নিজের মুখেই তো স্বীকার করলে।
হ্যাঁ, তা করেছি। সবার সামনে ফেয়ার ফাইটে আমার হাতে মারা গেছে ফেসেনডেন। কিন্তু কীথ মারা যাবার পর তার লাশও দেখি নি আমি।