কী যেন বলতে চাইল ডরনি শ, কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বের হলো না ওর। ডেরিঞ্জার আঁকড়ে ধরে পকেটের ভেতর থেকেই ট্রিগার টিপল সামান্থা ফক্স। পিস্তল মোটামুটি ভালোই চালাতে জানে ও, কিন্তু এই রকম অবস্থান থেকে আগে কখনও গুলি করে নি। প্রথম গুলিটা ডরনি শয়ের কান উড়িয়ে দিল; দ্বিতীয়টি গিয়ে ঢুকল পাঁজরে; তিন নম্বরটা পাশের টেবিলের কাঠে আশ্রয় নিল।
বিস্ময়ে আর্তনাদ করে উঠল ডরনি শ। এক লাফে দরজা গলে করিডরে ছুটে গেল। সামান্থার দিকে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্যু লেইন। আরে, আশ্চর্য! পকেট থেকে ডেরিঞ্জারটা বের করে আনল সামান্থা, ওটার দিকে তাকাল সে। ওটা দিয়ে মেরেছ ডরনি শকে! লোকের কানে যাক একবার কথাটা! গলা ছেড়ে হাসতে শুরু করল স্যু লেইন, অজান্তে সামান্থাও যোগ দিল সে হাসিতে।
সিঁড়ি বেয়ে নীচে এসে দরজার কাছে পৌঁছে কান স্পর্শ করল ডরনি শ। হাঁপাচ্ছে। যেন বহুদূর কোথাও থেকে দৌড়ে এসেছে। হাতে রক্ত দেখে মুখ বেঁকে গেল তার। বিস্ময়ের চোটে বুঝতেই পারল না কখন রাস্তার দিকের সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসেছে পল কেড্রিক। দরজা খুলতেই সামনে ওকে দেখে অধিক-শোকে-পাথর অবস্থা হলো তার। মুহূর্তের জন্যে বরফ হয়ে গেল। পরমুহূর্তে হাত বাড়াল পিস্তলের দিকে। কিন্তু তার আগেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। ওই এক মুহূর্তের দ্বিধার সুযোগ নিয়েছে পল কেড্রিক, ঝাপিয়ে পড়েছে ডরনির ওপর। ডরনির পিস্তলের দিকে বাড়ানো হাতের কজি ডান হাতে আঁকড়ে ধরল ও, হ্যাচকা টানে ঘুরিয়ে দিল তাকে, তারপর সর্ব শক্তিতে ঠেলে দিল দেয়ালের দিকে, ছাড়ল না হাতটা। দড়াম, করে দেয়ালের গায়ে, বাড়ি খেলো ডনি শ। পরক্ষণে শ্বাসনালীর ওপর বেমক্কা রদ্দা খেয়ে মুখ হাঁ হয়ে গেল তার।
হাতাহাতি মারপিটে আনাড়ি ডরনি শ। এরকম ঘুসি খেয়ে ওর চেয়ে বিশালদেহী লোকেরও জ্ঞান হারানোর কথা, স্বভাবতই বাতাসের জন্যে হাঁসফাস শুরু করল সে। দেয়ালের গায়ে ওকে ঠেসে ধরল পল কেড্রিক। ডরনি, ক্ষিপ্র লোকের মুখোমুখি হলে কী করব, একবার জিজ্ঞেস করেছিলে, এবার জবাব পেয়েছ নিশ্চয়ই!
বাম হাতে ডরনির গালে একটা প্রচণ্ড চড় কষাল কেড্রিক। রাগে দুঃখে ককিয়ে উঠল দুর্ধর্ষ গানম্যান। কেড্রিকের হাতের বাঁধন আলগা করার চেষ্টা করল। আরও জোরে দেয়ালের সঙ্গে তাকে ঠেসে ধরল পল। শার্টের কলার জাপটে ধরে চটাশ চটাশ আরও দুটো চড় কষাল। তুমি একটা সস্তা দরের খুনী, চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। আগেই এক দফা মার হজম করেছ দেখছি। এবার শেষ ডোজ দিচ্ছি তোমাকে।
ডরনির শার্ট দুহাতে টান মেরে ফড়ফড় করে ছিড়ে ফেলল পল। এখানে তোমার রাজত্ব চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দিতে যাচ্ছি আমি, ডরনি। তোমার আসল চেহারা আজ দেখবে সবাই-সস্তা, ভীতু খুনী। খামোকা এতদিন সবাই
ভয় করছিল! ডরনিকে আবার থাপ্পড় লাগাল কেড্রিক। তারপর ওকে দেয়ালের ওপর। আছড়ে ফেলে পেছনে সরে এল।
ঠিক আছে, শ, তোমার সঙ্গে পিস্তল আছে! বের করো!
রাগে দুঃখে ভেউভেউ করে কাঁদার অবস্থা হয়েছে ডরনি শয়ের। চিৎকার করে দুই হাত এক সঙ্গে, পিস্তলের দিকে বাড়াল সে। খাপমুক্ত হলো পিস্তলজোড়া। কিন্তু গত কয়েক মিনিটের অবিশ্বাস্য ঘটনাবলী দিশেহারা করে দিয়েছে ওকে। ডরনি গুলি করার আগেই গর্জে উঠল কেড্রিকের পিস্তল, ডান হাতের বুড়ো আঙুলসহ পিস্তলটা উড়ে গেল। বাম হাতের পিস্তলের ট্রিগার টিপল ডরনি শ, ফসকে গেল গুলিটা। অট্টহাসি হাসল ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। সজোরে ডরনির কজি লক্ষ্য করে নামিয়ে আনল পিস্তলের ব্যারেল। গুঁড়িয়ে গেল গানম্যানের কজির হাড়। আঁতকে উঠে পিস্তল ছেড়ে দিল সে। দেয়ালের গায়ে ঢলে পড়ল ডরনি, কাঁপছে থরথর করে, শূন্য দুই হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। বাঁ হাতের কজি গুড়ো হয়ে গেছে, ডান হাতের বুড়ো আঙুল উধাও; গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসছে ক্ষতস্থান থেকে।
নির্দয়ভাবে আবার ডরনি শকে ধরল কেড্রিক, এক ধাক্কায় দরজা দিয়ে বের করে দিল। হোঁচট খেয়ে আছড়ে পড়ল বেচারা, কিন্তু টেনে হিচড়ে আবার ওকে দাঁড় করল কেড্রিক। ইতিমধ্যে ভিড় জমে উঠেছে রাস্তায়, আঁতকে উঠল ওরা। কিন্তু, সেদিকে খেয়াল নেই কেড্রিকের। জনতার সামনে দাঁড়িয়ে আছে পিট লেইন, ডাই রীড এবং লরেডো শ্যাড; দেশের ভয়ঙ্করতম গানম্যানকে
এভাবে নাজেহাল হতে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে। ডরনি শয়ের ঘোর্ডা কাছেই দাঁড়িয়েছিল, ওটার দিকে ইঙ্গিত করল পল কেড্রিক। ঘোড়ার পিঠে তুলে দাও ওকে উল্টো করে!
ঘুরতে যাচ্ছিল ডরনি, থাপ্পড় মারার ভঙ্গিতে হাত তুলল কেড্রিক, আত্মরক্ষার সহজাত প্রবৃত্তিরবশেই কুঁকড়ে গেল লোকটা হাসির রোল পড়ল ভিড়ে। যাও, ঘোড়ায় চাপো! বলল পল, ডাই, ঘোড়ায় উঠিয়ে ব্যাটার দুপায়ের গোড়ালি একসঙ্গে বেঁধে দাও!
মারের চোটে তালজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে ডরনি শ, কী ঘটছে বুঝতে পারছে না। মুখ তুলে তাকাল সে, সঙ্গে সঙ্গে হেডকোয়ার্টারের কাছাকাছি গ্রুলা, মাস্ট্যাংটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। ব্যস, যেটুকু সাহস অবশিষ্ট ছিল, তাও হারিয়ে ফেলল সে।
পিস্তলে নৈপুণ্য আর প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতা সবার কাছে আতঙ্কের বস্তুতে পরিণত করেছিল ডরনিকে। লোকে তাকে এড়িয়ে গেছে; কিংবা ওর মন যুগিয়ে চলার চেষ্টা করেছে। পল কেড্রিকের হাতে আজ প্রথম বেইজ্জত হয়ে গেল সে। এমন কিছু ঘটতে পারে স্বপ্নেও ভাবে নি। আত্মবিশ্বাসের পাহাড় ধসে পড়েছে তার।