কেন-আমি-একথা তোমার মনে হলো কেন?
পল-কে আমি দেখেছি তো! ওকে কাছে পেতে চাইবে না এমন মেয়ে আছে? এতগুলো লোকের মধ্যে ও-ই সেরা।
আমি জানতাম, কর্নেল কীথকে তোমার পছন্দ।
আবার রক্ত ছলকাল সুর চোখেমুখে। আমি-আমিও তাই ভেবেছিলাম। আসলে পল কেড্রিক আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলেই ওর প্রতি এতটা ঝুঁকে পড়েছি আমি। তা ছাড়া এখান থেকে দূরে কোথাও যেতে চাই আমি-সেটাও একটা কারণ। এই জন্যেই আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে পিট।
ভাই কোনওদিন বোনকে ঘৃণা করতে পারে না। তুমি ফিরে গেলে ও সত্যিই খুব খুশি হবে।
ওকে চেনো না, তাই এ-কথা বলছ। অ্যাল্টন, বারউইকের সঙ্গী না হয়ে আর কেউ হলে
তার মানে বারউইককে আগে থেকেই চিনতে তোমরা?
চিনতাম মানে? ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল লেইন। তুমি জানো না? পিট বলে নি? বারউইক তো আমাদের সৎ-বাবা!
অ্যাল্টন বারউইক? হতবাক সামান্থা ফক্স।
হ্যাঁ, ওই লোকটাই আমাদের বাবাকে খুন করেছিল। আমরা প্রমাণ পাই নি। পরে মা-ও সন্দেহ করতে শুরু করে তাকে, তাই আমাদের নিয়ে তার কাছ থেকে পালায়। কিন্তু আমাদের পিছু ছাড়ে নি বারউইক। মায়ের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল আমরা জানতে পারি নি, এক রাতে বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসে নি। অন্য এক পরিবারের কাছে বড় হয়েছি, আমরা।
করিডরে কাঠের পাটাতন ককিয়ে উঠল। রূঙ্গে সঙ্গে চুপ হয়ে গেল ওরা, কান পাতল।
শহরের রাস্তা থেকে বন্দুকের প্রচণ্ড গর্জন ভেসে এল। দৃষ্টি বিনিময় করল ওরা। নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গেছে। একটু বিরতি, তারপর আবার ভেসে এল, গুলির আওয়াজ। আস্তে করে খুলে গেল দরজাটা। দোরগোড়ায় ওদের মুখোমুখি দাঁড়াল ডরনি শ।
সামান্থা ফক্স আর স্যু, লেইনকে একসঙ্গে দেখে অবাক হলো সে। উজ্জ্বল বাদামি চোখে দ্বিধার ছায়া পড়ল, পালা করে দুজনের দিকে তাকাল।
তারপর স্যু লেইনের ওপর স্থির হলো তার দৃষ্টি। তুমি এবার কেটে পড়তে পারো, বলল সে। কীথ অক্কা পেয়েছে।
কী? সন্ত্রস্ত সুঢোক গিলল। ওকে ওরা মেরে ফেলেছে?
না, আমি মেরেছি। সল্ট ক্রিকের ধারে। আমাকে আক্রমণ করতে যাচ্ছিল সে।
কীথ–মারা গেছে? প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেয়েছে স্যু লেইন।
অন্যরা? ওরা কোথায়? চট করে জানতে চাইল সামান্থা।
দ্রুত ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল ডরনি শ, কঠিন দৃষ্টি হানল সামান্থার দিকে। মেয়েটাকে নিয়ে কী করা যায় বুঝে উঠতে পারছে না যেন। বেশ কয়েকজন মারা গেছে, সহজ কণ্ঠে বলল ডরনি। আমাদের বারটা বাজিয়ে দিয়েছে ওরা। ওই কেড্রিক শালার জন্যেই! যেন কিছুই আসে যায় না এমনি নিরুত্তাপ কণ্ঠে কথা বলছে সে। কেড্রিক ওদের সঙ্গে নিয়ে ওত পেতে ছিল, কুত্তার বাচ্চাগুলোকে আমাদের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে, মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে সবাইকে! মাথা নেড়ে রাস্তার দিকে ইঙ্গিত করল ডরনি শ। এখন বোধ হয় শেষ পলিশ পড়ছে। ফেসেনডেন আর মিক্সাসরা দুভাই বেঁচে ছিল।
এখানেও আসরে ওরা; দৃঢ় কণ্ঠে বলল সামান্থা ফক্স। এর পর এখানেই আসবে।
জানি, মোটেই বিচলিত মনে হলো না ডরনি শকে। কেড্রিকই আসবে সবার আগে, হাসল সে, মরবেও সবার আগে।
সিগারেটের কাগজ আর তামাক বের করল ডরনি, কামরার চারদিকে নজর বোলাল। তারপর আবার তাকাল স্যু লেইনের দিকে। তুমি ভাগো। সামান্থার সঙ্গে আমার জরুরী কথা আছে।
নড়ল না স্যু। যা বলার আমার সামনেই বলো। এখানে থাকতে আমার ভালো লাগছে।
সিগারেট পেপারে জিভ ছুঁইয়ে বাঁকা চোখে স্যু লেইনের দিকে তাকাল উরনি শ। ভাবলেশহীন দৃষ্টি। কী বলেছি, শুনেছ, বলল সে, আমি জোর জবরদস্তি করতে চাই না।
অত, সাহস আছে নাকি! চেঁচিয়ে উঠল স্যু লেইন। এখানে মেয়েদের গায়ে হাত তুললে কী হবে ভালো করে জানো তুমি। আমাকে খুন করলে যদিও বা রেহাই পাবে, কিন্তু গায়ে হাত তোলা সইবে না কেউ-তোমার মতো খুনীও নিস্তার পাবে না।
পকেটের ডেরিঞ্জারটার কথা ভাবছে সামান্থা ফক্স। কোমরে অস্ত্রের কাছে হাত নামিয়ে আনল ও।
আচমকা কামানের আওয়াজের মতো গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দ ভেসে এল। তারপর উপর্যুপরি আরও কয়েকটা গুলির শব্দ। ফেসেনডেনের সঙ্গে চুড়ান্ত মোকাবিলা করছে কেড্রিক। কান খাড়া করে ব্যাপার কী বোঝার চেষ্টা করল ডরনি। এগিয়ে আসছে, বলল সে। আমি কেড্রিকের জন্যে অপেক্ষা করব, এখানে।
ও আসার আগেই ভাগো, নিজের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়ায় অবাক হলো সামান্থা। ওর সঙ্গে পারবে না তুমি। সবার মতো তোমার ভয়ে কেঁচো হয়ে যায়নি ও। স্রেফ মারা পড়বে, ডরনি!
সামান্থার দিকে তাকিয়ে কাষ্ঠ হাসি হাসল ডরনি শ। কেড্রিক মারবে আমাকে? হাহ! ড্রতে ডরনিকে হারানোর মতো বান্দা এখনও জন্মায় নি দুনিয়ায়, বুঝলে? সবার ক্ষমতা জানা আছে আমার। ফেসেনডেনের মতো লাৈক পর্যন্ত আমার সঙ্গে লাগার সাহস করে নি!
ঠাণ্ডা মাথায় পকেটে হাত ঢুকিয়ে ডেরিঞ্জারের বাঁট ধরল সামান্থা ফক্স। অস্ত্রের স্পর্শ আত্মবিশ্বাস জোগাল। আল্লার ওয়াস্তে চলে যাও, শান্ত কণ্ঠে বলল ও, আমরা তোমাকে আসতে বলি নি, তুমি এখানে থাকো, তাও চাই না।
নড়ল না, ডরনি শ। এখনও বড় বড় কথা? ধানাইপানাই ছাড়ো! এসো, আমার সঙ্গে যাচ্ছ তুমি।
তুমি যারে? আগুন ঝরল, সামান্থা, ফক্সের দৃষ্টিতে, দ্বিতীয়বার বলব না, আমি!