ওর দিকে তাকিয়ে আছে ফেসেনডেন। তুমি খুব ভালো মানুষ, কেড্রিক, আস্তে আস্তে কথাগুলো উচ্চারণ করল সে। আমিও ভালো-কিন্তু আমরা দুই পক্ষে পড়ে গেছি।
এসো পান করি, গ্লাস উঁচু করে ধরল পল কেড্রিক, গ্লাস ছোঁয়াল দুজন। বাঁকা চোখে গ্লাসের ওপর দিয়ে কেড্রিকের দিকে তাকাল ফেসেনডেন।
ডরনির কাছ থেকে সাবধান, পরামর্শ দিল সে, কেউটের মতো ভয়ঙ্কর লোকটা। কথা আটকে যাচ্ছে, ভুরু কোঁচকাল ফেসেনডেন, গ্লাস, তুলল। মদ গলায় ঢালতেই বিষম খেলো সে। বিশাল ডান হাত কেড্রিকের দিকে বাড়িয়ে দিল। তারপরই হুমড়ি খেয়ে পড়ল মেঝেতে। পিস্তল হোলস্টারে রেখে সামনে। ঝুঁকল কেড্রিক, ধরল বাড়িয়ে দেয়া হাতটা। হাসল ফেসেনডেন, তারপর প্রশান্তিতে চোখ বুজল।
১৫. ইয়েলো বাট-এর উদ্দেশে
কেড্রিক সহ সবাই ইয়েলো বাট-এর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ার পর অস্থির হয়ে উঠল সামান্থা। এরপর কী হতে যাচ্ছে? ফ্রেড র্যানসাম পারবে কিছু করতে? কী হবে আসন্ন তদন্তের ফলাফল? এখানে মামার ভূমিকাকে কোন্ দৃষ্টিতে দেখা হবে?-অসংখ্য প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলল ওকে।
মাস্ট্যাংয়ের ধূসর পাথুরে ভবনের একটা ডেস্কের ড্রয়ারে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে মামার কাগজপত্র; ওর বিভিন্ন দলিলও রয়ে গেছে ওখানে। বারউইকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে হলে কিংবা মামাকে অপবাদের হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে ওগুলো লাগবে। চট করে সিদ্ধান্ত নিল সামান্থা। ঘোড়ায় চেপে রিমের উল্টোদিকের হাইডআউট থেকে বেরিয়ে পড়ল। ওল্ড মরমন ট্রেইলে পৌঁছে দক্ষিণে বাঁক নিল, ভোর হচ্ছে, বহুদূর থেকে ভেসে আসা গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
ট্রেইল ছেড়ে সল্ট ক্রিক ওঅশের নিচু অংশে চলে এল সামান্থা; কিছুক্ষণ এগোনোর পর, ডরনিশয়ের হাতে কীথ যেখানে মরতে যাচ্ছে, সেই জায়গাটা পেছনে ফেলে আবার দক্ষিণে রওনা হলো। কোনওভাবে একবার শহরে পৌঁছুনো গেলেই ঝামেলা চুকে যাবে, ভাবছে ও। বারউইক ছাড়া আর কাউকে হেডকোয়ার্টারে আশা করছে না। এই লোকটা কদাচিত চেয়ার ছেড়ে নড়ে।
ইয়েলো বাট থেকে পরাজিত গানম্যনরা ফিরতে শুরু করার কিছুক্ষণ আগে মাস্ট্যাংয়ে পৌঁছুল সামান্থা। রাস্তা ধরে এগোল ও। হেডকোয়ার্টারের পেছনের দরজায় চলে এল। তারপর ঢুকে পড়ল নিঃশব্দে এতটা সাবধানতার প্রয়োজন ছিল না। অল্টন বারউইক ঘরে নেই। পুরোনো সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় এসে অ্যাপার্টমেন্টের তালা খুলল সামান্থা। মামার সঙ্গে এখানে থাকত ও। ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দিল।
কোনও কিছুতে হাত পড়েছে বলে মনে হলো না। জানালার পর্দাগুলো টেনে রেখে গিয়েছিল, তেমনি আছে। নিঝুম কামরা। ধুলোর হালকা আস্তরণ পড়েছে আসবাবপত্রের ওপর, পর্দার ফাঁক গলে ঘরে ঢুকে পড়া রোদে চকচক করছে। ট্রাংকের কাছে চলে এল সামান্থা। ইস্পাতে মোড়া একটা বাক্স বের করল ওটা থেকে। এই বাক্সেই সব কাগজপত্র আছে। বাক্সটা খোলার চেষ্টা করা হয়েছে, তেমন কোনও আলামত নেই। ট্রাংকের নীচ থেকে পুরোনো একটা পার্স বেরিয়ে এল এবার। চব্বিশটা স্বর্ণমুদ্রা ছিল ওটায়, বের করে হাতের পার্সে রাখল সামান্থা।
অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে এরপর কিম্ভুতকিমাকার একটা পুরোনো আমলের পিস্তল পাওয়া গেল ট্রাংকে। পিস্তলটা বের করে পাশের টেবিলে তুলে রাখল। পয়েন্ট-টু-টু ক্যালিবারের একটা ডেরিঞ্জারও বেরুল। বাবার দেয়া শেষ উপহার। অস্ত্রটা পকেটে রাখল ও।
চট করে এবার পাশের কামরায় চলে এল সামান্থা। দ্রুত সহজ ভঙ্গিতে মামার ডেস্ক তল্লাশি করল। একটু খুঁজতেই পাওয়া গেল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। এখনও কেউ ওগুলো স্পর্শ করে নি। ওরা হয়তো ভেবেছে এসব। কাগজের আর প্রয়োজন নেই কিংবা পরে সংগ্রহ করা যাবে। কাগজপত্র গোছগাছ করছে সামান্থা, এমন সময় বাড়ির পাশে ঘোড়ার খুরের শব্দ উঠল। পেছনের সিঁড়ির কাছে থামল একটা ঘোড়া।
সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাজ রেখে দাঁড়িয়ে পড়ল সামান্থা ফক্স এ ঘরের একটা জানালার পর্দা কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে আছে। স্যাডলের সঙ্গে কাপড়ের ঘর্ষণের মৃদু আওয়াজ হলো। সওয়ারী যেই হোক, ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমেছে। এবার স্পারের ঝুনঝুন শব্দ ভেসে এল। পা বাড়িয়েছে আগন্তুক। তারপর নীরবতা।
ও, তুমি?
চমকে ঘুরে দাঁড়াল সামান্থা। চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে স্যু লেইন। হ্যাঁ, জবাব দিল ও, আমার কিছু জিনিস রয়ে গিয়েছিল, নিতে এসেছি। তুমি স্যু, তাই না?
জবাব না দিয়ে মাথা দুলিয়ে জানালার দিকে ইঙ্গিত করল মেয়েটা। কে এসেছে জানো?
না।
লরেন ফিরে এল বোধ হয়। গম্ভীর চেহারায় সামান্থাকে মাপল স্যু লেইন। ওরা কেমন আছে? সবাই ভালো? ইয়ে, মানে-পিটের সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছে?
হ্যাঁ, তোমার ওপর খেপে আছে ও।
একটু লাল হলো সুলেইনের চেহারা, কিন্তু উদ্ধত ভঙ্গিতে চিবুক উঁচু করে রাখল সে। জানি, কিন্তু আর কী আশা করেছিল ও, ওই মরা মরুতে ভিখেরীর মতো জীবন কাটাব? ওফ, বিশ্বাস করো, ঘেন্না ধরে গেছে আমার!
হাসল সামান্থা। আশ্চর্য! অথচ এখানে আমার কত ভালো লাগে। এ জায়গাটাকে আমি ভালোবাসি। যত দিন যাচ্ছে ততই ভাঁলো লাগছে। এখানে জীবন কাটাতে পারলে আর কিছু চাই না আমি।
পল কেড্রিকের সঙ্গে?
স্যুর চোখের তারায় ঈর্ষা খেলে গেল, সেই সঙ্গে দৃষ্টিতে কৌতূহলও ফুটে উঠল। মেয়েটা ওর চেহারা আর কাপড়চোপড় পরখ করছে, বুঝতে পারল সামান্থা।