নীচের স্যালুনে, প্রায় আধ বোতল হুইস্কি শেষ করে ফেলেছে ফেসেনডেন, কিন্তু এখনও ব্যর্থতার গ্লানি কাটিয়ে উঠতে পারে নি। টেবিল থেকে এক প্যাকেট তাস তুলে নিল ও, নিপুণ হাতে শাফল করল। একটুও কাঁপল না হাত দুটো। আর যাই হোক হাতের ওপর কোনও প্রভাব ফেলতে পারে নি হুইস্কি।
বিরক্তির সঙ্গে কার্ড ছুঁড়ে ফেলে বারটেন্ডারের দিকে তাকাল ফেসেনডেন। ডরনি এত দেরি করছে কেন? দশমবারের মতো বলল সে, এখান থেকে চলে যেতে চাই আমি। এখানে থাকতে আর মন চাইছে না!
রাস্তার গোলাগুলির শব্দ পেলেও বারের কাছ থেকে নড়ল না সে। মাতাল কোনও কাউহ্যান্ডের কাণ্ড বোধ হয়, বলল বিরক্তির সঙ্গে।
তবু একবার খোঁজ নিলে পারতে, বলল বারটেন্ডার, স্যালুনে মারামারি হোক চাইছে না সে। তোমার দলের লোকও তো হতে পারে?
আমার কোনও দল নেই, সংক্ষেপে জবাব দিল ফেস আমি আর এসবে নেই। ইয়েলো বাটের খচ্চরটা কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছে আমাকে। আর ওদের সঙ্গে থাকার সাধ নেই। দোতলার করিডরে পায়ের আওয়াজ, ছন্দময় ভঙ্গিতে হাঁটছে কে যেন। হেসে মুখ তুলে তাকাল, ফেসেনডেন। খেয়াল করেছ, মিলিটারি কায়দায় হাঁটছে!
হঠাৎ, নিজের কথার অর্থ বুঝতে পারল ফেস, হাসি মুছে গেল ঠোঁট থেকে। বারে হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল। বারটেন্ডারের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। জানতাম! আমি জানতাম- গ্লাসের হুইস্কি গলায়, ঢালল সে তাই তো শহর ছাড়তে চাই নি!
বার থেকে সরে ঘুরে দু পা ফাঁক করে দাঁড়াল, ফেসেনডেন। বিশাল গ্রিজলি ভালুকের মতো লাগছে তাকে। কোমরের কাছে ঝুলছে দুহাত। দোতলার ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে আছে।
পায়ের আওয়াজ থেমে গেল, ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। ফেসেনডেনের দিকে তাকাল।
নীরবে কেটে গেল ঝাড়া একটা মিনিট। দম বন্ধ করে অপেক্ষা করছে দর্শকরা। ফেসের্নডেনই নীরবতা ভাঙল অবশেষে।
আমাকে খুজছ, কেড্রিক?।
তোমাদের একজনকে হলেই হলো। শ কোথায়? কীথ?
কীথ পটল তুলেছে। ক্যানিয়নে তুমি আমাদের বারটা বাজানোর পর সল্ট ক্রিকের ধারে ওকে খুন করেছে ডরনি শ। সে এখন কোথায়, জানি না।
আবার নীরবতা! পরস্পরকে জরিপ করল ওরা। চিমনি রক-এ তুমিও ওদের সঙ্গে ছিলে, ফেসেনডেন, বলল কেড্রিক, ওটা একটা অ্যামবুশ ছিল–গুপ্তহত্যার চেষ্টা। আরেক কদম সামনে বাড়ল কেড্রিক। পাশ ফিরে সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রাখল। ছয় ধাপ পর একটা ল্যান্ডিং, তার পর বাঁক নিয়ে নীচে নেমে এসেছে সিঁড়িটা।
দাঁড়িয়ে আছে ফেসেনডেন, ওর পেশীবহুল বিশাল দুই পা মৃদু কাঁপছে। চওড়া মাথা সামনে ঝুঁকে পড়েছে। ধেত্তের! বলেই পিস্তলের বাঁট আঁকড়ে ধরল সে।
চোখের পলকে দুটো পিস্তল খাপ, ছেড়ে বেরিয়ে এল, আগুন ঝরাল। সিঁড়ির মাথায় নিউওয়েল পোস্টের মাথা গুড়ো হয়ে গেল একটা বুলেটের ধাক্কায়; তারপর ছিটকে দেয়ালে গিয়ে বিরল সেটা। কেড্রিকের ঠিক কাঁধের পেছনে দেয়াল ফুটো করল অন্য বুলেটটা। আরও এক ধাপ নামল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। ট্রিগার টিপল পিস্তলের। গুলি খেয়ে পাই করে ঘুরল ফেসেনডের। হালকা পায়ে আরও চার ধাপ নেমে এল পল। ওকে লক্ষ্য করে দুদুবার ট্রিগার টিপল ফেসেনডেন। মাথা নিচু করে ঝাঁপ দিল কেড্রিক। দেয়ালের সঙ্গে মিশে গিয়ে উঠে দাঁড়াল। আবার গুলি করল ফেসেনডৈনের দিকে। একটা পা ভাজ হয়ে গেল তার; টক্কর খেলে বারের সঙ্গে।
দুবার গুলি খেয়েও মাথা ঠাণ্ডা রেখেছে সে। ভয়ঙ্কর। বারের গায়ে এক হাতে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল ফেসেনডেন, ডান হাত উঁচিয়ে ধরল, বুড়ো আঙুলে টেনে পেছনে নিয়ে এল পিস্তলের হ্যামার। সঙ্গে সঙ্গে বাঁ হাতের পিস্তল থেকে দ্রুত দুবার গুলি ছুঁড়ল কেড্রিক। বারের ওপর দিয়ে ঘষটে সোজা ফেসেনডেনের পাজরের নীচে ঢুকল একটা বুলেট। অন্যটা ফসকে গেল।
আবার গুলি করল ফেসেনডেন, লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। মরিয়া হয়ে উঠেছে সে, ডানহাতের পিস্তল হোন্টারে রেখে বাঁ হাতের পিস্তল দিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো ট্রিগার টিপল ফেসেনডেন। সময় নিয়ে, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখে পিস্তলটা ডান হাতে পাচার করল সে। বুঝতে পারছে, সময় ফুরিয়ে আসছে। বেপরোয়া ফেসেনডেন; কিন্তু নিরুত্তাপ। এক গ্লাস মৃদ দাও, বারটেন্ডারের উদ্দেশে বলল সে।
বারের পেছনে মুখ ঢেকে শুয়েছিল বারটেন্ডার। নড়ল না লোকটা। ল্যান্ডিংয়ের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে কেড্রিক, তাকিয়ে রয়েছে ফেসেনডেনের দিকে। তিন তিনবার গুলি খেয়েছে ফেসেনডেন-কাধে, পায়ে, বুকে–তারপরও দাঁড়িয়ে আছে; হাতে উদ্যত পিস্তল; বিরাট, অপরাজেয় মনে হচ্ছে তাকে।
পিস্তল উঠে এল, ওটার সঙ্গে সামনে ঝুঁকে পড়ল ফেসেনডেন। তুমি ডরনি হলে ভালো হত, বলল সে।
ট্রিগার টিপল কেড্রিক। বুকে লাগল গুলিটা। এক কদম পিছিয়ে গেল ফেসেনজেন, আরও এক কদম। পিস্তলটা হাত থেকে খসে পড়ল। বারের ওপর থেকে একটা গ্লাস তুলে নিল সে, মদ ঢালো! আদেশ করল। রক্তের বুদবুদু দেখা দিয়েছে ঠোঁটের কোণে।
পিস্তল হাতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল ক্যাপ্টেন কেড্রিক, ফেসেনডেনের দিকে এগিয়ে গেল। ডান হাতে পিস্তল তৈরি রেখে বাঁ হাতে একটা বোতল তুলে নিল ও, শূন্য, গাস ভরে দিল। তারপর আরেকটা গ্লাসে নিজের জন্যেও ঢালল।