গর্জে উঠল খড়ের গাদার রাইফেল। লরেড়োর মাথার কাছে স্টলের দেয়ালে খাবলা বসাল বুলেট। গুলির উৎস লক্ষ্য করে দ্রুত দুবার ট্রিগার টিপেই এক লাফে ফাঁকায় চলে এল লরেডো লাফিয়ে উঠল রাইফেলটা, আবার আগুন ঝরাল, কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো গুলিটা। অ্যাবি মিক্সাস যেখানে লুকিয়ে রয়েছে, সেই চালাটার নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ল শ্যাড, ছাদ লক্ষ্য করে গুলি করল পর পর দুবার।
খালি পিস্তল হোলস্টারে ভরে অন্য পিস্তলটা বের করে অপেক্ষা করতে লাগল লরেডো শ্যাড। একটু দূরে ককিয়ে উঠল ছাদের পাটাতন। স্টলের আড়ালে আড়ালে পলায়নপর মিক্সাসকে অনুসরণ করল ও। আচমকা পেছনের দরজা সশব্দে খুলে গেল, আলোর বন্যায়, ভেসে গেল আস্তাবলের অন্ধকার। দ্রুত এগিয়ে গেল লরেডো। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
শটগানঅলা লোকটার নাম স্লোয়ান। অ্যাাবি মিক্সাস দরজা গলে বেরিয়েই ওর মুখোমুখি হলো, মাত্র বিশ ফুট তফাত। কোমরের কাছ থেকে রাইফেলের ট্রিগার টিপল অ্যাবি। শ্লোয়ানের পাশে ওঅটর ট্রাফ ফুটো হয়ে গেল। একই সঙ্গে শটগানের বাঁ দিকের ব্যারের খালি করল স্লোয়ান।
অ্যাবির ঠিক কাঁধে লাগল গোলাটা, দরজার গায়ে আছড়ে পড়ল সে। ঝুলে পড়ল তার লম্বাটে চোয়াল, আতঙ্কিত। ঘাড়, কাঁধ রক্তে ভেসে যাচ্ছে, বিরাট একটা ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। রাইফেল উঁচিয়ে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করল অ্যাবি। এক কদম সামনে বাড়ল স্লোয়ান। বব ম্যাকলেনন, স্টলম্যান আর সেগালের মৃত্যুর কথা মনে পড়ছে। অন্য ব্যারেটাও খালি হলো। অগ্নিশিখা ছুটে গেল অ্যাবি মিক্সাসের দিকে।
নিহত ছিন্নভিন্ন মিক্সাস এলিয়ে পড়ল। ছিটকে পড়েছে তার মাথার পুরোনো টুপি। রক্ত আর বালিতে মাখামাখি হয়ে গেছে চোখমুখ।
গোলাগুলির পর অসহনীয় নীরবতা নামল। নীরবতা ভেঙে কথা বলল লরেডো শ্যাড। হয়েছে, স্লোয়ান! আস্তাবল থেকে বেরিয়ে এল সে। মিক্সাসের লাশের দিকে দৃকপাত করল না। ওর ভাইকেও আর ঝোলানোর কষ্ট করতে হবে না।
পাশাপাশি দাঁড়াল ওরা। স্লোয়ানের চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, অসুস্থ, মনে হচ্ছে ওকে। জীবনে এই প্রথম মানুষ হত্যা করল সে; এটাই শেষ। একটা সিগারেট তৈরি করার চেষ্টা চালাল, কিন্তু থরথর করে কাঁপছে হাত দুটো,। ওর কাছ থেকে তামাক আর কাগজ নিয়ে সিগারেট বানাল লরেডো শ্যাড। লজ্জিত চেহারায় মুখ তুলে তাকাল স্লোয়ান। আমি লোকটা আসলে ভীতু, বলল সে। কিন্তু ওই হারামজাদাকে দেখে মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল।
গম্ভীর চেহারায় ওর দিকে তাকাল টেক্সান। এ-ই ভালো, বলল ও। সিগারেট শ্লোয়ানকে দিল। ধরো, বলল, দুএক টান দিলেই চাঙা, বোধ করবে। ভাবছি কেড্রিক কী করছে।
কোনও আওয়াজই নেই এখন পর্যন্ত।
রাস্তার উল্টো দিকে একটা ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াল পিট লেইন। সব ঠিক আছে? চিৎকার করে জানতে চাইল।
হ্যাঁ, স্লোয়ানের সঙ্গী পাল্টা জবাব দিল। মিক্সাস ভাইদের আর খুঁজতে হবে না। আর কখনও ওদের চেহারা দেখা্যাবে না এদিকে।
রাস্তা বরাবর এগিয়ে গিয়ে সেইন্ট জেমস-এ ঢুকল ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। বিশাল লবি জনশূন্য ফাঁকা গহ্বরের মতো লাগছে। তামাক আর চামড়ার গন্ধ ভাসছে বাতাসে। বুড়ো ক্লার্ক ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। আজকের দিনটা একদম শান্ত, বলল সে। কোথাও কেউ নেই। কদিন হলো, মারপিট, গোলাগুলি সব বন্ধ!
বুড়োর কথা শেষ হওয়া মাত্র বাইরে থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে এল…আবার…আবার। শটগানের দুটো কানফাটা গর্জন, তারপর নীরবতা।
কানখাড়া করে রইল দুজন। কিন্তু আর কোনও শব্দ পাওয়া গেল না। খানিক পরু-পিট লেইনের প্রশ্ন আর কৃষকের জবাব শোনা গেল। মাথা ঝাঁকাল ক্লার্ক। হ্যাঁ, সেই পুরোনো মাস্ট্যাং, বলল সে। কদিন ধরে ভাবছিলাম ওহাইওতে ফিরে গেলাম নাকি! একদম ঠাণ্ডা মেরে গিয়েছিল সব-গোরস্থানের মতো!
করিডর ধরে এগিয়ে গিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে এল ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। ভাঙাচোরা সিঁড়ি ভেঙে পেছনের ঘাসে ছাওয়া। উঠোনে এসে দাঁড়াল। একটা পুরোনো মরচে ধরা টিউবওয়েল আছে এখানে প্রখর সূর্যের আঁচে দগ্ধ হচ্ছে হোটেলের পেছনের দেয়াল।
টিউবওয়েলের দিকে এগিয়ে গেল কেড্রিক, চাপ দিল। প্রথমে আপত্তি জানাল ওটা, বহুদিনের অব্যবহারে মরচে পড়ে গেছে; অবশেষে কাজ হলো, কাঠের গামলায় ছলাৎ করে পড়ল পানির ধারা। কিছুক্ষণ পানি তুলল কেড্রিক, তারপর ক্যান্টিন, ভরে নিল। পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি, ঢক ঢক করে পান করল, ও, একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার খেলো।
দালান-কোঠার পেছনে খানিকটা দরে কাঠ চেরাই করছে এক কাঠরে। কুড়োলের ফলায় রোদের প্রতিফলন চোখে পড়ল ওর। কাঠের গায়ে আঘাত হানল ওটা। কেড্রিক জানে, একটু পরে আওয়াজ শোনা যাবে। কিছুক্ষণ ওদিকে তাকিয়ে রইল পল। হাত দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দালান-কোঠার পেছনে পেছনে মাস্ট্যাং-স্যালুনের দিকে পা বাড়াল।
সাবধানে এগোচ্ছে ও, মুহূর্তের জন্যেও থামছে না, সমগ্র অস্তিত্ব সতর্ক। এখন পয়েন্ট ফোর-ফোর রানজোড়া কোমরে ঝুলিয়েছে ও। ওগুলোর ছোঁয়া স্বস্তি জোগাচ্ছে। প্রয়োজনের মুহূর্তে চট করে হাতে উঠে আসবে।
মাস্ট্যাং-স্যালুনের পেছন-দরজায় বহুদিন রঙ পড়ে নি, রোদ আর বৃষ্টির অত্যাচারে কাহিল অবস্থা। কবজার দিকে তাকাল ও, জং ধরে গেছে, খুলতে গেলে শব্দ হবে। হঠাৎ দোতলায় ওঠার বাইরের দিকের সিঁড়িটা দেখতে পেল ও। ঘুরে পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে এল কেড্রিক। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে করিডর ধরে এগোল।