আরও এক গ্লাস মদ ঢালল ফেসেনডেন। কেড্রিক ব্যাটাই নষ্টের গোড়া, ভারি গলায় বলল ও, লোকটা ওদের দলে যোগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার কেটে পড়া উচিত ছিল।
কীথ কোথায়?
সে আর ফিরবে না।
নতুন কণ্ঠস্বর, শুনে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল ওরা। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। মুচকি মুচকি হাসছে ডরনি শ! হাসি মুখেই সামনে এসে বারের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল। কীথ আর আসছে না, বলল সে। সন্ট ক্রিকের পাড়ে পিস্তল বের করতে গিয়েছিল সে।
নীরব কামরায় ভয়ানক শোনাল উরনির কথাগুলো। টেবিলের এক লোক নড়েচড়ে বসল, ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে আপত্তি জানাল চেয়ারটা। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাল ফেসেনডেন, মদের গ্লাসে চুমুক দিল। এখান থেকে ভাগতে হবে, জলদি!
কিছুক্ষণ আগে দেখলাম মেয়েটা ফিরে এসেছে, হঠাৎ বলে উঠল বারটেন্ডার। সামান্থা ফক্স। সেও কি ওদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে?
মুখ তুলে তাকাল ডরনি শ, জ্বলজ্বল করছে, চোখের তারা। হঠাৎ বিষণ্ণতা ভর করল সেখানে। মদের গ্লাস খালি করে সহজ পদক্ষেপে এগিয়ে গেল সে দরজার দিকে। কাছেপিঠে থেকো, ফেস, একটু আসছি আমি,হাসল সে, বুড়োর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসি।
ফেসেনডেনের দিকে তাকাল বারটেন্ডার। টাকা পেলে তোমাকে দেবে তো?
অন্যমনস্কভাবে মাথা দোলাল ফেসেনডেন। একশোবার! ডরনি চোর নয়। জীবনে কখনও অন্যের জিনিস না বলে ছোঁয় নি ছেলেটা। চুরি-চামারিতে ও বিশ্বাস করে না। কখনও গাল দিতে কিংবা মিথ্যে বলতেও দেখি নি। কিন্তু তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে, তোমাকে খুন করতে পারবে।
নাটকের যবনিকাঁপাত ঘটেছে। কাজ শেষ। কৈটে পড়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। ফেসেনজেন জানে, এখন বিদায় নেয়া উচিত; কিন্তু তবু কেন যেন অনীহা বোধ করছে! আরও এক গ্লাস মদের ফরমাশ দিল সে, বারটেন্ডার ঢেলে দিল। যেন অতল এক গহ্বরে পড়ল মুদটুকু, কোনও প্রতিক্রিয়া হলো না।
.
শহর সীমান্তে ঘোড়ার রাশ টেনে ধরল ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। একসঙ্গে কাজে নামব আমরা, শান্ত কণ্ঠে বলল ও, কথ, শ, বারউইক, দুই মিক্সাস আর ফেসেনডেনকে, চাই আমাদের। ওরা ছাড়াও আরও দুচারজন আছে, ওদের চেহারা চিনলেও নাম জানি না। যাই হোক, তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে, কোনওরকম ভুল যেন না হয়। পিট, ডাই রীড আর অন্য দুজনকে নিয়ে রাস্তার বাঁ দিক দিয়ে এগিয়ে যাও তুমি। অহেতুক ঝুঁকি নেবে না। সম্ভব হলে ওদের গ্রেফতার করবে। পরে বিচার হবে। যারা গম্ভীর কেড্রিকের চেহারা–দোষী, তাদের জন্যে দুধরনের শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে, দেশ ছাড়তে হবে, নইলে ঝুলতে হবে ফাঁসিতে। তবে দুই মিক্সাস আর ডরনি শকে ফাঁসিতেই ঝোলাব, বলল ও, ওর খুনী!
স্যাডলে ঘুরে বসে দীর্ঘদেহী টেক্সানের দিকে তাকাল পল কেড্রিক। চলো, শ্যাড, শান্ত কণ্ঠে বলল ও, আমরা চারজন রাস্তার ডানদিক ধরে এগোই। আমাদের ভাগে পড়ছে লিভারিস্ট্যাবল, সেইন্ট জেমস আর মাস্ট্যাং স্যালুন।
ঘাড় ফিরিয়ে আবার পিট লেইনের দিকে তাকাল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। পিট, বলল ও, অ্যালিসন কিংবা কেচামের সামনা-সামনি পড়ে গেলে দয়া করে ওদের ঘাটাতে যেয়ো না। ওদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা নেই।
লেইনের চেহারা গম্ভীর। আমি ওদের খুঁজছি না, ভারি গলায় বলল সে। কিন্তু সেধে লাগতে এলে ছেড়ে দেব না।
শহরে ঢুকল। ওরা। তারপর যার যার পথে এগোল। কেড্রিকের উদ্দেশে হাসল লরেডো শ্যাড, ওর চোখজোড়া বিষণ্ণ। আজ শয়তানও লেইনের সামনে দাঁড়ানোর আগে দুবাক্স ভাববে, শান্ত কণ্ঠে বলল সে। খুনের নেশা চোপছে ওর মাথায়। বোনের জন্যেই এত রাগ।
দুজন সামনাসামনি পড়ে গেলে কী ঘটবে ভাবছি।
না পড়লেই ভালো, বলল শ্যাড, মেয়েটা সত্যি সুন্দরী। টাকার প্রতি লোভ ছাড়া আর কোনও দোষ নেই।
অন্য দুজন সঙ্গী উদ্বিগ্ন চেহারায় নির্দেশের অপেক্ষা করছে। ওরা দুজনই কৃষক। একজনের হাতে একটা স্পেন্সর পয়েন্ট-ফাইভ-সিক্স; অন্য জনের হাতে শটগান। ওদের দিকে তাকাল শ্যাড ওরা রাস্তা কাভার দিক, কী বলা, পল? বলল ও, তুমি সেইন্ট জেমস-এ যাও, আমি লিভারি স্ট্যাবলে।
একটু ভাবল কেড্রিক। ঠিক হ্যায়, অবশেষে বলল ও, দেখো, বাবা, অনর্থক ঝুঁকি নিয়ে না যেন!
হাসল লরেডো শ্যাড। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাত নাড়ল। তারপর প্রশস্ত দরুজা গলে আস্তাবলে ঢুকে পড়ল। ভেতরে পা রেখে থামল ও। বাইরে নির্লিপ্ত তাচ্ছিল্যের ভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে ফণা তোলা গোখরার মতো ভয়ঙ্কর এবং প্রস্তুত টেক্সান। অ্যাবি মিক্সাসের সোরেল পনিটা আগেই দেখতে পেয়েছে ও। খুনী দুটো শহরেই আছে, সন্দেহ নেই। এক কদম সামনে বাড়ল ও। সঙ্গে সঙ্গে খড়ের গাদার আড়াল থেকে একটা রাইফেলের ব্যারেল মাথা জাগাল।
ঝাঁপ দিয়ে ডান দিকের একটা স্টলে ঢুকে পড়ল লরেডো শ্যাড, পিস্তল বেরিয়ে এসেছে হাতে। সোজা অপর মিক্সাসের ঘাড়ে গিয়ে পড়ল ও। প্রচণ্ড সংঘর্ষ হলো দুজনের ভারসাম্য হারিয়ে আছড়ে পড়ল মিক্সাস, গড়িয়ে চিত হলো। পিস্তল বের করতে করতে উঠে দাঁড়াল সে। ঝেড়ে এক লাথি কষাল লরেডো তার হাতে, চরকির মতো ঘুরতে ঘুরতে সাঁ করে দুই সারি স্টলের মাঝে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে পড়ল পিস্তলটা।
হিংস্র চিৎকার ছেড়ে পিস্তলের দিকে ঝাঁপ দিল বীন মিক্সাস। পিছলে ওটার কাছে পৌঁছুল। পিস্তল তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। স্টলের ঠিক মুখেই ঋজু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে লরেডো শ্যাড। ফাঁদে পড়া বেড়ালের মতো, ঘুরেই পিস্তল উঁচিয়ে ধরতে গেল মিক্সাস, সঙ্গে সঙ্গে ট্রিগার টিপল ও। প্রশস্ত আস্তাবলে বোমা ফাটার মতো শব্দ হলো। পর পর দুটো গুলি খেলো বীন মিক্সাস। একটা লাশ পড়ল মাটিতে।