মাতাল হলেও লোকটার চেহারায় স্পষ্ট ভীতি আর আতঙ্কের ছায়া দেখতে পাচ্ছে কেড্রিক। কিন্তু ওকে কিংবা ডরনিকে ভয় করছে না সে, ভীতু নয় লোকটা, আসলে পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কথাটা মনে হতেই চমকে উঠল কেড্রিক, অস্বস্তি ভর করল ওর ওপর। কাজটা হাতে নিয়ে ভুল হলো না তো?
ভিড় থেকে অশ্রাব্য গালিগালাজ ভেসে এল। বোঝা যাচ্ছে, জনতা কেড্রিকের নয়, বিশালদেহী লোকটার পক্ষে।
হঠাৎ গুঞ্জনের মাত্রা বেড়ে গেল, আলোড়ন দেখা দিল ভিড়ে। তার পর আচমকা নীরবতা নামল। চাপা কণ্ঠে পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল, সাবধান, বার্ট! ডরনি শ আসছে!
সহসা পাশে ডরনি শয়ের উপস্থিতি অনুভব করল কেড্রিক। আমার হাতে ওকে ছেড়ে দাও, ক্যাপন, নিচু কণ্ঠে বলল ডরনি, ব্যাটাকে শায়েস্তা করে দিচ্ছি।
সহজ কণ্ঠে জবাব দিল কেড্রিক। না! তুমি সরে যাও, শ। এটা আমার লড়াই, আমাকেই সামলাতে দাও!
কিন্তু তোমার কাছে পিস্তল নেই! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রতিবাদ করল ডরনি শ।
পিছিয়ে যাবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বার্টের মাঝে। ডরনি শয়ের উপস্থিতি তাকে থমকে দিলেও ভয় পায় নি। পিটার্সের মতো হার মানতে রাজি নয় ও সতর্ক দৃষ্টিতে একবার উরনি শ আরেকবার কেড্রিকের দিকে তাকাচ্ছে বাট। সহজভাবে এক কদম সামনে বাড়ল কেড্রিক। হাত বাড়ালেই এখন ওকে। ছুঁতে পারবে বার্ট।
শ এই লড়াইয়ের বাইরে, বার্ট, শান্ত কণ্ঠে বলল পল কেড্রিক। তোমার সঙ্গে আমার কোনওরকম শত্রুতা নেই, কিন্তু তোমাকে নিরাশ করব না। আমার সঙ্গে অস্ত্র ছিল না বলে লাগতে পারছ না-এ কথা মনে ঠাই দিয়ো না। অস্ত্র ছাড়াও লড়াই করা যায়। আমি মারপিট করতে চাই নি, তুমিই যখন সেধে লাগতে এসেছ-তা হলে আর দেরি কেন?
বার্টের চোখে সন্দেহ ফুটে উঠেছে। এ ধরনের ধোপদুরস্ত পোশাক পরা লোকদের হাতে হাওয়া থেকে পিস্তল উঠে আসে, বহুবার দেখেছে সে। নিরস্ত্র অবস্থায় কেড্রিক ওকে মোকাবিলা করতে আসবে, ভাবে নি!
তোমার কাছে নিশ্চয়ই লুকোনো পিস্তল আছে! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল বার্ট।
ঝট করে হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করল সে, সাথে সাথে নড়ে উঠল পল কেড্রিক। বাঁ হাতের প্রান্ত দিয়ে কোপ মারার ভঙ্গিতে আঘাত করল লোক্টার পিস্তল ধরা কজিতে। আরও একটু সামনে এগোল, পরক্ষণে শরীরের সব শক্তি এক করে আধমণি এক ঘুসি ঝেড়ে দিল প্রতিপক্ষের চোয়ালে। চোখ ধাঁধানো মাপা ঘুসি, ঘোড়ার পিঠে সপাং করে চাবুকের বাড়ি পড়ল যেন। পিস্তলের সঙ্গে পটকান খেয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ল বার্ট
সহজ ভঙ্গিতে সামনে ঝুঁকে বার্টের পিস্তল তুলে নিল কেড্রিক, ১৮৫১ মডেলের নেভী রিভলবার। বার্টের সামনে দাঁড়িয়ে জনতার ওপর সন্ধানী দৃষ্টি বোলাল ও। নিরাবেগ, কঠিন চেহারায় ওকে দেখছে প্রতিটি লোক। আবার রার্টের দিকে চোখ ফেরাল কেড্রিক। আস্তে আস্তে উঠে বসেছে লোকটা, প্রবল বেগে মাথা নাড়ছে। ডানহাতে ভর দিয়ে উঠতে গিয়ে হঠাৎ যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠল। বিস্ফারিত চোখে একবার হাতের দিকে তাকিয়ে কেড্রিকের দিকে চোখ ফেরাল বার্ট। আমার হাত ভেঙে দিয়েছ তুমি! বলল সে, গুঁড়িয়ে গেছে। এখন লাঙ্গল চালাব কী করে!
ওঠ, আস্তে করে বলল কেড্রিক। আমার দোষ নেই, তুমিই গায়ে পড়ে লাগতে এসেছিলে।
উঠে দাঁড়াল বার্ট। পিস্তলটা বাড়িয়ে ধরল কেড্রিক। সিক্স-শুটারের মালের ওপর দিয়ে কেড্রিকের দিকে তাকাল বার্ট। কেড্রিক মুচকি হাসল।
ধরো, হোলস্টারে ঢোকাও। জানি, আমার ভয় পাবার কিছু নেই। আর যাই হও, অন্তত পেছন থেকে গুলি করার মতো খারাপ তুমি নও।
ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল কেড্রিক। হাঁটতে শুরু করল। সেইন্ট জেমস-এর সামনে এসে থামল। কাগজ তামাক বের করে সিগারেট রোল করতে শুরু করল, মৃদু কঁপছে আঙুলগুলো।
দারুণ! ডরনি শয়ের নরম গলা। কৌতূহলী দৃষ্টিতে কেড্রিককে মাপছে সে। জীবনে এই প্রথম দেখলাম! এক থাপ্পড়ে কাজ সারা!
কীথকে সঙ্গে নিয়ে জন গুন্টারও হাজির হয়েছে। উঁত বের করে হাসল গুন্টার। আমরাও দেখেছি। এমন হলে আর কাউকে মারতে হবে না। টম স্মীথের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আমার। ওল্ড বীয়ার ক্রিক টম ট্রেইলে খালিহাতে বহু গুণ্ডা পাণ্ডাদের মোকাবিলা করেছে। ও কখনও অস্ত্র ব্যবহার করত না।
লোকটা পিস্তল কেড়ে নিয়ে গুলি করত যদি? জিজ্ঞেস করল কীথ।
কাঁধ ঝাঁকাল কেড্রিক, কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না। সুযোগই পেত না, শান্ত কণ্ঠে বলল ও, তবে তারও ওষুধ আছে।
রাতে ওরা তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে, পল, জানাল জন গুন্টার। ডরনিকে দিয়ে শ্যাড, ফেসেনডেনসহ সবাইকে খবর দিয়েছি। কাল একবার ওখানে যাচ্ছ তোমরা। কাজটা শুরু করা আরকি। চার-পাঁচজন সঙ্গী নিয়ে একটা চক্কর মেরে আসবে। যাতে ওরা বুঝতে পারে, মিথ্যে হুমকি দেই নি আমরা।
মাথা দোলাল কেড্রিক। আরও কিছু সময় গুন্টারের সঙ্গে আলাপ করে বিদায় নিয়ে হোটেলে নিজের কামরায় চলে এল ও। আসলে, ভাবল কেড্রিক, পশ্চিম এখনও আগের মতোই আছে;, সব কিছু এখনও চোখের পলকে ঘটে যায় এখানে।
একে একে কোট, ওয়েইস্ট কোট, ভেস্ট, বুট খুলে ফেলল কেড্রিক। শুধু প্যান্ট পরে বিছানায় বসল। ব্যাগটা খুলল টেনে নিয়ে। একটু খুঁজতেই বেরিয়ে পড়ল চকচকে দুটো হোলস্টার আর গানবেল্ট; দুই হোলস্টারে দুটো পয়েন্ট ফোর-ফোর রাশান পিস্তল, রুশ সেনাবাহিনীর জন্যে বিশেষ ফরমাশে স্মীথ অ্যান্ড ওয়েসন তৈরি করেছিল এগুলো; এই মুহূর্তে বাজারের সেরা অস্ত্র। যত্নের সঙ্গে পিস্তলজোড়া পরখ করে আবার হোলস্টারে ঢোকাল কেড্রক, তার পর হোলস্টারে ভরে একপাশে সরিয়ে রাখল। এবার ব্যাগ থেকে গানবেল্ট আর হোলস্টারসহ আরও দুটো পিস্তল বের করল। পয়েন্ট-থ্রি-সিক্স ক্যালিবারের ওয়েলশ টুয়েলভূ-শট-নেভী-পিস্তল। দেখতে হুবহু ফ্রন্টিয়ার কোল্ট কিংবা পয়েন্ট-ফোর-ফোর-রাশানের মতোই।