দুটো গুলিই কীথের কুঁড়ি ফুটো করে দিল।
ঝপাৎ করে সল্ট ক্রিকের পানিতে পড়ল সে। পিস্তলে গুলি ভরতে ভরতে তার জ্বলজ্বলে দুই চোখের দিকে তাকাল ডরনি শ। কীভাবে জানলে? বিষণ্ণ কণ্ঠে জানতে চাইল, তুমি কীভাবে জানলে?
১৪. সহকর্মীদের চেয়ে এগিয়ে আছে ফেসেনডেন
সহকর্মীদের চেয়ে এগিয়ে আছে ফেসেনডেন। বিশাল শরীর নিয়ে সহজ ভঙ্গিতে স্যাডলে বসে আছে। ঘোড়ার সাথে তাল মিলিয়ে দুলছে। চিন্তাক্লিষ্ট চেহারা, বিরক্ত। মিসেস ট্যাগার্টের আচরণে, সবার মতো সে-ও আলোড়িত হয়েছে। অন্য কিছু হয়তো তাকে এতটা প্রভাবিত করতে পারত না। কঠিন, হৃদয়ের মানুষ ফেসেনডেন, কত মানুষকে যে হত্যা করেছে ইয়ত্তা নেই। লড়াইয়ের মাঠে নির্দয়-নৃশংসভাবে মানুষ খুন করেছে সে, বেঁচে থাকার জন্যেই!
আগেও বহুবার পিস্তল ভাড়া খাটিয়েছে ফেসেনডেন। সেসব ছিল ক্যাটল বা শিপ-ওঅর, সেয়ানে সেয়ানে মোকাবিলা। প্রতিপক্ষে ছিল ওরই মতো দুরন্ত সব পিস্তলবাজ। কিন্তু একদল মানুষকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্যে এই প্রথম কারও সঙ্গে যোগ দিয়েছে সে। কাজটা হাতে নেয়ার সময় কোনওরকম চিন্তা-ভাবনা করে নি ও জানে পশ্চিমে পাড়ি জমানো অধিকাংশ লোকই মাথা গোঁজার মতো একটুকরো জমির সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের সংগ্রাম নিয়ে কখনও ভারে নি সে। বার কয়েক ক্যাটল-রেঞ্জ থেকে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদে সাহায্যও করেছে। কাজটা ন্যায়সঙ্গত বলেই তার ধারণা। গরু-বাছুর পোষার জন্যে ঘাসের প্রয়োজন, কিন্তু চারণভূমিতে চাষাবাদ শুরু করলে গরু চরবে কোথায়? তা ছাড়া বেশির ভাগ তৃণভূমিই তো খামার বা চাষাবাদের অনুপযুক্ত। কিন্তু, এবার একটা ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। এই প্রথম ব্যাপারটা তলিয়ে দেখছে ফেসেনডেন। গবাদি পশুর সুবিধের জন্যে লোকজকে এখান থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে না, মুনাফাই প্রধান এবং প্রথম। উদ্দেশ্য। সাত বোঝা কঠিন নয়। ফেসেনডেনের মতো লোকেরা পরিস্থিতির আসল রূপ প্রক্ষ করলে সামান্য পার্থক্যই বিরাট হয়ে দাঁড়ায়, তাদের চোখের সামনে।
মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত ফেসেনডেন। কীথের কাক্ষিত বিজয় কত কাছেই এসে গিয়েছিল! ক্যানিয়নে আত্মগোপনকারী মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোককে কজা করার মতো সহজ কাজ আর কিছু হয়! প্রথমে ডিনামাইট ব্যবহারের বিরোধিতা করলেও সাময়িক দুর্বলতাটুকু ঝেড়ে ফেলেছিল ও। সবার সঙ্গে ক্যানিয়নে ঢুকেছে, ঝামেলা চুকিয়ে টাকা নিয়ে এখান থেকে কেটে পড়বে বলে। ঠিক তখনই এল অপ্রত্যাশিত বিদ্যুৎ-গতির পাল্টা আক্রমণ। ক্যানিয়নের দেয়াল আরও ভয়ঙ্কর করে তুলল সে আক্রমণকে। বোল্ডারের ফাঁকে আটকা পড়ে গো-হার্য হেরে গেল ওরা। নরক ভেঙে পড়ল যেন মাথার ওপর।
আকস্মিক ধাক্কা আতঙ্ক আর তীব্র বিতৃষ্ণার জন্ম দিয়েছে সবার মনে। আত্মরক্ষার স্বাভাবিক তাগিদে কোনওমতে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। কিন্তু ক্লসন আর পয়েন্সেটের মৃত্যু এখনও মেনে নিতে পারে নি কেউ, অদৃশ্য হয়েছে ব্ৰকাউ, লী গফ চলে গেছে। শুধু ফেসেনডেনকেই চলে যাবার কথা বলেছিল গফ। কারণ জিজ্ঞেস করার দরকার মনে করে নি ও।
পেছনে ব্যর্থ হামলায় হতাশ মিক্সাসরা দুই ভাই এগিয়ে আসছে। দয়ামায়াহীন দুই খুনী, মেয়েমানুষ খুন করতেও ওদের হাত কাঁপবে না। লড়াকু লোক নয় ওরা-কসাই। কিন্তু ওরাও বুঝতে পারছে দলে একটা পরিবর্তন এসেছে। ব্ৰকাউ আর গফের ভাগ্যে কী ঘটেছে ওরা জানে না, তবে দলে যে ভাঙন ধরেছে সেটা বুঝতে পারছে পরিষ্কার। এক অর্থে হিংস্র একদল নেকড়েয় পরিণত হয়েছে ওরা। পরস্পরের প্রতি ঘৃণা বোধ করতে শুরু করেছে।
শান্ত মাস্ট্যাংয়ে ফিরে এল ওরা। ঝড়ের পূর্ব মুহূর্তে চারদিক যেমন থমথম করে তেমনি নীরবতা বিরাজ করছে শহরে। ভুগোতে ফিরে যাওয়া গরু-ক্রেতার মতো শহরটাও যেন ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের পূর্বাভাস পেয়েছে। রাস্তায় মেয়েদের দেখা যাচ্ছে না দুচারজন বেপরোয়া লোক বার কিংবা তাসের টেবিলে সময় কাটাচ্ছে। সেইন্ট জেমস-এর সামনে সাজানো চেয়ারগুলো খালি পড়ে আছে। মাতাল অবস্থায় র্যাঞ্চে ফিরে গেছে ক্লে অ্যালিসন।
সূর্য যেন গলন্ত আগুন ঢালছে, পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে সব। নিঝুম চারদিক। মাসট্যাং স্যালুনের সামনে ঘোড়া থামাল ফেসেনডেন, ক্লান্ত জানোয়ারটার পিঠ থেকে নামল। উরুর সঙ্গে বাড়ি মেরে টুপি থেকে ধুলো ঝাড়ার ফাঁকে নির্জন রাস্তায় চোখ বোলাল। পশ্চিমের লোক ফেসেনেডেন, বিপদের পূর্বলক্ষণ টের পেতে ভুল হলো না। টুপিটা আবার কোনাচে করে মাথায় বসিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল বিশালদেহী গানম্যান। সোজা বারের দিকে এগিয়ে গেল।
রাই, স্যালুনের অভ্যন্তরে গমগম করে উঠল ওর কণ্ঠস্বর। কামরার চারধারে ঘুরে ফিরল চোখজোড়া, তারপর বারটেন্ডারের ওপর স্থির হলো।
কৌতূহল চেপে রাখতে পারল না বারটেন্ডার। কী ঘটেছে? ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করল সে।
গানম্যানের কঠিন, দুচোখে ক্ষীণ কৌতুকের ছায়া পড়ল। চিরদিনের জন্যে জায়গাটা জিতে নিয়েছে স্কোয়াটাররা! হুইস্কিটুকু গলায় ঢালল ফেসেনডেন। ওখান থেকে ওরা নড়বে না, বুঝিয়ে দিয়েছে! হালকা কণ্ঠে বলল সে। কেয়ামত নামিয়ে দিয়েছে আমাদের ওপর! সংক্ষেপে ঘটনার বিবরণ দিল ফেসেনডেন। যেন হাজার হাজার লোক একসঙ্গে হামলে পড়ল! এমন কিছু হতে পারে কারও মাথায় আসে নি! অন্ধকারে সিঁড়িতে পা রাখতে গিয়ে দেখল কোনও সিঁড়িই নেই-অনেকটা এই রকম ব্যাপার।