ঘোড়ার পেটে পার ছোয়াল গফ। ঘুরে ভোরের আবছা আলোয় হারিয়ে গেল চ্যাপটা মুখো সোরেলটা নিয়ে। লীগফের লড়াইয়ের সাধ মিটে গেছে। কলরাডো অথবা ইউটাহতে যাচ্ছে সেকিংবা অন্য কোনওখানে মোট কথা দূরে কোথাও।
ওদিকে মাস্ট্যাংয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। ওর সঙ্গে আছে লরেড়ো শ্যাড, পিট লেইন, ডাই রীড, বার্ট উইলিয়ামস এবং আরও কয়েকজন। দল বেঁধে নিঃশব্দে এগিয়ে চলেছে ওরা। স্যাডলফর্কের ওপর রাইফেল ফেলে রেখেছে।
ওদের পশ্চিমে, অন্যদিকে ছোট্ট একটা নাটকের মহড়া চলছে। কেড্রিক যাদের ধাওয়া করছে, ক্যানিয়ন যুদ্ধে পরাজিতদের সবাই ওই দলে নেই। ডরনি শ আর কর্নেল লরেন কীথপশ্চিমে রওনা দিয়েছে। ইতিকর্তব্য স্থির করে ফেলেছে ওরা।
যথেষ্ট ঝামেলা পোহানো গেছে, ভাবছে কীথ, আর নয়। কেউ মানুক আর নাই মানুক শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে ওদের। এখন দেশ ছেড়ে পালানো ছাড়া উপায় নেই।
মাস্ট্যাংয়ের হেডকোয়ার্টারে কিছু ক্যাশ টাকা জমা আছে। ওগুলো একবার হাত করতে পারলেই সোজা ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যাবে ও। তারপর যত ইচ্ছে তদন্ত চালাক র্যানসাম। কয়েক বছর পর আবার পুবে ফিরে যাবে। এখানকার ঘটনা সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুললে জড়িত থাকার কথা সোজাসাপ্টা অস্বীকার করবে। কোম্পানির প্রাথমিক অবস্থায় আইনগত ব্যাপারে সাহায্য করা ছাড়া ওদের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক ছিল না বললেই হবে।
চেহারা দেখে ডরনি শয়ের মনের কথা বোঝার সাধ্য নেই কারও। অবশ্যই এই মুহূর্তে তেমন কিছু ভাবছে না সে। আসলে চিন্তাভাবনা ওকে দিয়ে হয় না। মদে আসক্তি নেই তার, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বাছবিচার করে না। কিন্তু কয়েকটা জিনিসের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। ভালো ঘোড়ার মালিক হতে তার ভালো লাগে এবং সুন্দ মেয়েদের প্রতিও দারুণভাবে আকৃষ্ট হয়। স্যু লেইনকে ভালো লাগত ওর কাছে। কিন্তু সামান্থা ফক্স ওকে পাগল করে দিয়েছে। ডরনি শ যে বেঁচে আছে মেয়েটা বোধ হয় জানে না। তবে ডরনি শয়ের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস আগ্নেয়াস্ত্র। বিপদে কিংবা
লড়াইতে আগ্নেয়াস্ত্রের সাহায্যে নির্বিচারে যন্ত্রের মতো মানুষ হত্যা করতে পাকে আজ পর্যন্ত ওর চেয়ে দক্ষ কোনও পিস্তলবাজের দেখা পায় নি সে। পিস্তল ছাড়া অন্য কিছুর সাহায্যে শত্রুর মোকাবিলা করতে হয় নি-ভবিষ্যতেও করার ইচ্ছে নেই।
দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। আরাম করে স্যাডলো বসেছে। কেড্রিক যখন সদলে ইয়েলো বাট থেকে মাস্ট্যাংয়ের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছে, সেই সময় সল্ট ক্রিক ওঅশের তীরে পৌঁছুল ডরনি শ আর কর্নেল কীথ। জিনের পেটি শক্ত করে বাঁধার জন্যে স্যাডেল থেকে নামল কীথ। সুযোগ পেয়ে পানি খেয়ে নিল ঘোড়াটা। ডরনি শও নামল এবার ঘোড়ার পিঠ থেকে।
অন্যমনস্কভাবে ডরনিকে জিজ্ঞেস করল কীথ, তা ডরনি; খেলা তো শেষ, এবার কোথায় যাবে?
কী জানি, কর্নেল, হালকা সুরে আস্তে করে বলল ডরনি শ, জানি না। তবে তোমার রাস্তা কিন্তু এখানেই শেষ।
কথাটার মানে বুঝতে প্রচুর সময় লাগল কর্নেলের। ঘুরে মুখোমুখি হলো সে ডরনির। বিভ্রান্ত চেহারায় প্রথমে ভয় তারপর আতঙ্কের ছায়া পড়ল। নিতান্ত অবহেলার দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে উরনি শ। ঠোঁটে মুচকি হাসি, চোখে ফাঁকা দৃষ্টি।
ডরনির কথা হৃদয়ঙ্গম করার সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা হয়ে গেল কীথের শরীর। ওকে হত্যা করতে যাচ্ছে এই লোকটা!
বোকার মতো ডরনির ফাঁদে পা দিয়েছে ও। দল ছেড়ে ওর সঙ্গে আসল কোন বুদ্ধিতে? সুযোগ পেয়েও লোকটাকে খুন করল না কেন? ডরনি শয়ের সঙ্গে পাগলা কুকুরের পার্থক্য নেই। উন্মাদ, বদ্ধ উন্মাদ!
কী আবোলতাবোল বকছ, শ? মিলিটারি কায়দায় প্রশ্ন করল কর্নেল কীথ। ওর বলার ভঙ্গি খেয়ালই করল না ডরনি শ। কীথের বেল্টের বাকলসের ওপর দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে তার। কর্নেল, ভাবল সে, ইদানীং বেশ মুটিয়ে গেছে-ছোটখাট একটা ভুড়ি হয়েছে দেখছি। কেন, সহজ কথা, আর কোথাও যাচ্ছ না তুমি, কর্নেল। কিন্তু সেজন্যে আমার মোটেই খারাপ লাগছে না।
বারউইক এসব পছন্দ করবে না। আমাদের দুজনের ওপরই সে নির্ভর করে আছে।
উঁহু। বললো, ছিল। অবস্থা পাল্টে গেছে এখন। কাল ওদিকে, ইয়েলো বাটের দিকে মাথা নেড়ে ইশারা করল ডরনি শ, বারউইক ইঙ্গিত দিয়ে গেছে আমাকে, পার্টনারের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে গেছে ওর। টুপিটা একটু পেছনে ঠেলে দিল সে।
ড্র করতে চাও? লাভ নেই যদিও, তবু চেষ্টা করে দেখতে পারো।
সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে কীথ। শরীরের সব পেশী যেন আড়ষ্ট হয়ে গেছে। নড়তে চাইছে না। অথচ কিছু একটা করা দরকার, এখুনি! অবশেষে কথা বেরোল ওর মুখ দিয়ে, অন্তর থেকে উচ্চারণ করল কীথ, কেড্রিক তোমাকে খুন করবে, উরনি। ও-ই জিততে যাচ্ছে। বারউইক ওর সঙ্গে পারবে না!
হঠাৎ একটা জিনিস মনে পড়ল কীথের। ডরনি শয়ের চেহারায় একটা অস্পষ্ট অভিব্যক্তি। কিন্তু সেটাও তুচ্ছ নয়। ডরনি! মরিয়া কণ্ঠে বলল সে, তোমার পেছনে! সেই গ্রাটা!
শাদা হয়ে গেল ডরনির মুখ। পাঁই করে ঘুরল সে। হিংস্র ভাব তার চোখে। ডরনি, ঘুরতেই বিজয়ানন্দে হাঁপ ছাড়ল কীথ, হাত বাড়াল পিস্তলের দিকে। কিন্তু শয়ের মতো লোকের মুখোমুখি আর কখনও হয় নি সে। পিস্তলের বাট জাপটে ধরেছিল, খাপমুক্তও হয়েছিল ওটা। বিদ্যুৎ চমকের মতো ঘুরে পেছনে কিছু নেই দেখেই চট করে সরে গেল ডরনি শ, চরকির মতো ঘুরল ফের। এক মুহূর্ত আগে ও যেখানে ছিল, সেখান দিয়েই সাঁই করে হারিয়ে গেল কীথের গুলি। পরক্ষণে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে ট্রিগার টিপল উরনি।একবার, দুবার।