সুষ্ঠুভাবেই শুরু হলো আক্রমণটা। একসঙ্গে এগিয়ে গেল ওরা। বিদ্যুৎ গতিতে ক্যানিয়নের প্রায় বিশফুট ভেতরে ঢুকে পড়ল। মেসার চূড়া থেকে অতীতে কোনও এক সময় একটা বড়সড় পাথরের টুকরো গড়িয়ে পড়েছিল, এটার সামনে এসে পৌঁছুল। এবং এখানেই সমাপ্তি ঘটল আক্রমণের।
আচমকা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ওরা। রাইফেলের প্রচণ্ড গুলিবৃষ্টির কবলে পড়ল-পয়েন্ট-ব্ল্যাংক-রেঞ্জ!
লড়াইয়ের বহু কলাকৌশল জানে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। জানত গম্বরের এই আশ্রয় দীর্ঘকালে মরণফাঁদে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই নিজেকে কীথের জায়গায় কল্পনা করে বুঝে নিয়েছে সে কী করতে যাচ্ছে। তারপর সাতজন সঙ্গী আর চোদ্দটা রাইফেল নিয়ে ইন্ডিয়ানদের মতো অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে খাদ থেকে। কীথের কল্পনায় আসবে নাএমন একটি জায়গায় ঘাপটি মেরে বসেছে।
গোলাগুলির প্রথম ঝাঁপটাতেই প্রতিপক্ষের পাচজন ইহলোকের মায়া ত্যাগ, করল। নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় ছুটোছুটি শুরু করে দিল গানহ্যান্ডরা। ফলে আরও দুজন প্রাণ হারাল। ভাঙা হাঁটু নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে কোনওমতে পরিত্যক্ত ক্যাম্পে ফিরে এল একজন। কিন্তু এখানে কাউকে পেল না সে।
ট্যাগার্টের স্ত্রীর হাতে বিপর্যয়ের শুরু-শেষ হলো রাইফেলের প্রচণ্ড গর্জনে।
কোম্পানি-ফাইটাররা ক্যানিয়নের মুখ থেকে প্রায় ছিটকে বেরিয়ে এল, একসঙ্গে ছুট লাগাল যার যার ঘোড়ার দিকে। কীথও আছে এদের সঙ্গে। প্রাণ নিয়ে সরে পড়তে পেরে শোকর করছে। ওকে স্যাডলে উঠে বসতে দেখল উরনি শ। ঘোড়া ঘুরিয়ে পাশে চলে এল। পেছনে, সুশৃঙ্খল সেনাদলের মতো সাবধানে গুলি করতে করতে এগিয়ে এল ক্যানিয়নের স্কোয়াটাররা। একটা ঘোড়াকে লুটিয়ে পড়তে দেখল কীথ। হামাগুড়ি দিয়ে বোল্ডারের আড়ালে আত্মগোপন করল ওটার সওয়ারী, পরক্ষণে লাফিয়ে উঠে খিচে দৌড় দিল। দল ছেড়ে বেরিয়ে এল ডাই রীড়। পিছু নিল তার।
ওরা পালানোর আগে আরও একজনকে হারাতে হলো। ঘোড়া ঘুরিয়ে সঙ্গীদের মুখোমুখি হলো কেড্রিক। সবাই ঘোড়া যোগাড় করো, তাড়াতাড়ি। মেয়েরা এখানে নিরাপদেই থাকবে। একবারেই সব ঝামেলা মিটিয়ে আসি।
ঘুরে দাঁড়াল ব্ৰকাউ। এক লোক এগিয়ে আসছে। ডাই রীড। ওর বাগিয়ে ধরা স্পেন্সার দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল তার। মনে পড়ল, নিজের রাইফেলটা খালি। পায়ে পায়ে পিছোতে শুরু করল সে। চোখ দুটো আতঙ্কে কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
আমার রাইফেলে গুলি নেই, বলল সে, পিস্তলটাও হারিয়ে ফেলেছি!
তা হলে ওটা ফেলে দাও, শান্ত কণ্ঠে বলল ডাই রীড, এরকম কিছুই চাইছিলাম আমি, পিস্তল রাইফেল ধাতে সয় না।
কথাটার মানে না বুঝলেও রাইফেল ফেলে দিল ব্ৰকাউ। বিশাল শরীর তার, পেশীবহুল, শক্তিশালী। বিস্মিত চোখে ডাই রীডকে স্পেন্সর নামিয়ে রাখতে দেখল সে। গানবেল্টও খুলে ফেলল রীড। বাঁকা পায়ে এগিয়ে এল ছোটখাট মানুষটা।
মুহূর্তের জন্যে পলক পড়ল না আউট-লর চোখে। তারপরই ডাই রীডের মোকাবিলা করতে পা বাড়াল। কাছাকাছি হতেই ঘুসি হাঁকাল। পাথরের মতো শক্ত মুষ্টি আঘাত হানল ডাই রীডের চিবুকে। প্রচণ্ড আঘাত নিঃশব্দে হজম করল ডাই রীড, চোখজোড়া একটু পিটপিট করে উঠল কেবল। পরক্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়ল ব্ৰকাউয়ের ওপর। প্রথম ঘুসি ব্যর্থ হওয়ায় আতঙ্ক ভর করল ব্ৰকাউয়ের মনে, আরও দুটি ঘুসি হানল সে। নিজেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হলো রীড। নীরবে মার খেলো। এইবার ডাই রীড বিশাল দুই হাতে ব্ৰকাউয়ের বাহু খামচে ধরল, হ্যাচকা টানে কাছে নিয়ে এল ওকে।
দুহাতে আউট-লর মাথা ধরল ডাই রীড়, সামনে টানল। ঠকার্স করে বাড়ি খেলো দুটো মাথা! চোখে সর্ষে ফুল দেখল ব্ৰকাউ। নাকের হাড় ভেঙে গুড়ো হয়ে গেল। বুনে বর্বরের মতো ঘুসি হাঁকানোর চেষ্টা করল সে। কিন্তু তার আগেই রীডের দুহাত চেপে বসেছে ওর শ্বাসনালীর ওপর। ব্ৰকাউ নিস্তেজ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ল না রীড়। তারপর ওকে মাটির ওপর শুইয়ে দিল। ঘুরে হাঁটতে শুরু করল এবার। কাছেই একটা ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে, দেখল না। একটা গলা মাস্ট্যাং।
ক্যানিয়ন মুখে বিপত্তির পর ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাচ্ছে ওরা। কিন্তু একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে ল গফের। পোড়খাওয়া মন্টানা গানম্যান গফ মিসেস ট্যাগার্টের চোখে-মুখে সত্যের প্রকৃত রূপ প্রত্যক্ষ করেছে। মহিলা ওকে ওর মায়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। মন্ট্যানার একটা জীর্ণ র্যাঞ্চে সাত ছেলে আর পাঁচটি মেয়েকে লালনপালন করতে গিয়ে প্রচণ্ড পরিশ্রমের ধকল সইতে পারে নি মহিলা, অকালে বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে।
ইয়েলো বাটে মিসেস ট্যাগার্টের বাড়িতে যাচ্ছে লী গফ।
কুটিরের সামনে পৌঁছে ঘোড়া থামাল সে। নামল না। স্যাডলে বসেই মৃদু টোকা দিল দরজায়। খুলে গেল কবাট দুটো, মিসেস ট্যাগার্টের মুখোমুখি হলো সে। কেঁদে কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছে মহিলা। ম্যাম, বলল গফ, আমি খুব তুচ্ছ একজন মানুষ, আমার কথায় হয়তো কিছুই যায় আসে না। কিন্তু এসব আমার আর ভালোগছে না। আমি চলে যাচ্ছি। দয়া করে এই টাকাগুলো রাখবে?
মোটাসোটা এক তোড়া টাকা সসংকোচে মিসেস ট্যাগার্টের দিকে বাড়িয়ে ধরল লী গফ। এক মুহূর্ত ইতস্তত করল মহিলা। তারপর সসম্মানে গ্রহণ করল তোড়াটা। ধন্যবাদ, বাবা। খুব ভালো ছেলে তুমি!