ওদের দিকে ঘুরে দাঁড়াল মহিলা। বয়স্কা, লালচে চেহারা, এক মাথা পাকা চুল বাতাসে উড়ছে। কাজ করতে করতে কঠিন হয়ে গেছে দুটি হাত। শুলিন্য শটগান এখনও আঁকড়ে আছে। ওদের দিকে তাকিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা হালকা চেক শার্ট পরা লোকটার দিকে ইঙ্গিত করল সে।
এই মুহূর্তে তাকে আর অসহায় এক বৃদ্ধা মনে হচ্ছে না। দুচোখে অশ্রুরও চিহ্ন নেই। ওই মানুষটা আমার স্বামী ছিল, কিঞ্চিৎ কেঁপে গেল তার গলা। টাগাট আমাকে ধনসম্পদ হয়তো দিতে পারে নি, দেয়ার ক্ষমতাও ছিল না; কিন্তু একটা জিনিস দিয়েছিল-শান্তি। ওকে হত্যা করেছ তোমরা। আমার কাছে আরও কয়েকটা গোলা থাকলে… ঘুরে দাঁড়াল মিসেস ট্যাগার্ট। একটিবারও পেছনে না তাকিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিল।
গোল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পিস্তলবাজের দল। হঠাৎ যেন বুঝতে পারছে, ওদের অপরাধ কতটা জঘন্য।
সবার আগে নীরবতা ভেঙে কথা বলল লী গফ। দুই পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে সে! শার্ট ছিড়ে যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে ওর পেশীবহুল শরীর। বাতাসে উড়ছে মাথা ভর্তি সোনালি চুল। ওই মহিলাকে কেউ উক্ত করলে, বলল গফ, আমার হাতে খুন হয়ে যাবে!
১৩. ঠিক সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আক্রমণ
ঠিক সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আক্রমণ চালাল কীথ এবং পিছু হটতে বাধ্য হলো। দুজন লোক হারাতে হলো তাকে। তবে হামলার ফলে একটা লাভ হলো-খাদের কথা জানা হয়ে গেল। গিরিখাদের কাছে ক্যানিয়নের মুখে একটা দেয়ালের আড়ালে আসন পেতে বসে আছে ডরনি শ। একেবারে সহজ হয়ে গেল কাজটা, বলল সে। এখনও প্রচুর ডিনামাইট আছে আমাদের কাছে!
মুখ তুলে তাকাল কীথ, ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ডরনি শ, চোখজোড়া জ্বলজ্বল করছে। নাকি সেটা আবার তোমার নীতিতে বাধবে, কর্নেল? ডিনামাইটের গোটা দশেক কাঠি ফেলে দিলেই কিন্তু বারউইকের চাহিদা পূরণ হত-লাশের চিহ্ন থাকত না কোথাও!
খাদের ভেতর দিকে গুহাটুহা থাকলে, আপত্তি জানাল লরেন কীথ, জ্যান্ত কবর হয়ে যাবে সবার! জবাব দিল না কেউ। সবার ওপর দৃষ্টি বোলাল কীথ, মাটির দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। দায়দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা। একমাত্র রনি শয়ের মধ্যেই প্রবল উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। আতঙ্কে সারা শরীর শিউরে উঠল কীথের। এদের সঙ্গে জড়িয়ে কী ভুলটাই না করেছে!
পাথরে খুরের ঘষা খাওয়ার শব্দ উঠল। একসঙ্গে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল সবাই। ঘোড়াটা দেখা গেল না। স্যাডলের সঙ্গে কাপড়ের ঘষা খাওয়ার আওয়াজ ভেসে এল। ঝুনঝুন শোনা গেল স্পরের! আঁধার ফুড়ে সামনে এসে দাঁড়াল অ্যাল্টন বারউইক।
ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়ল কর্নেল লরেন কীথ। দ্রুত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করল। চুপচাপ শুনে, গেল বারউইক, মাঝে মাঝে মাথা দুলিয়ে সায় জানাল। কীথের বক্তব্য শেষ হলে বলল, ডিনামাইট চালাও। সকালে সবার আগে এ কাজটাই সারবে। ব্যস, তা হলেই জীবনের জন্যে মিটে যাবে ঝামেলা।
পকেট থেকে সিগার বের করে কামড়ে গোড়া কাটল বারউইক। আজ একটা টেলিগ্রাম এসেছে। শিগগিরই তদন্ত কমিটি আসছে, হপ্তা দুএকের, মধ্যেই। কিন্তু ততদিনে এই ঘটনার কথা ভুলে যাবে সবাই। অন্য ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
ঘোড়ার দিকে পা বাড়াল বারউইক, মাঝপথে থেমে ডরনি শর দিকে, তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে ডাকল ওকে।
আগুনের পাশ থেকে উঠে দাঁড়াল ডরনি শ, অনুসরণ করল তাকে। মুখ ভেঙচে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল লরেন কীথ। এর মানে? ওকে বাদ দিয়ে কোনও ফন্দি আঁটছে না তো ব্যাটারা?
আগুনের নাগালের বাইরে, কেউ ওর কথা শুনবে না এমন দূরত্বে পৌঁছে দাঁড়িয়ে পড়ল বারউইক। ডরনি, শ এগিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করল। চমৎকার কাজ দেখাচ্ছ তুমি, ডরনি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা দুজন হলে আর কাউকে লাগে না।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল ডরনি। আমিও তাই বলি!
হুম, সিগারেটে টান দিল অ্যাল্টন বারউইক। আমার একজন ভালো সঙ্গী সত্যি দরকার। গুন্টার মারা যাবার পর তার জায়গাটা তো খালি রয়ে গেছে!
তোমাদের কোম্পানিতে, ফিসফিস করে কথা বলছে ডরনি শ, এমনিতেও লোকজন বেশি-মামে পার্টনারের কথা বলছি।
হ্যাঁ, শান্ত কণ্ঠে বলল বারউইক, অন্তত এখনও তাই।
ঠিক আছে। নেড়েচেড়ে পিস্তলজোড়া জায়গামতো বৃসিয়ে নিল ডরনি শ। দুই তিন দিন পর তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসব।
ঘুরে হাঁটতে শুরু করল বারউইক। সহজ ভঙ্গিতে স্যাডলে চাপল। যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল শ। অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘোড়ার খুরের ক্রমশ মিলিয়ে যাওয়া শব্দ কানে আসছে। অদ্ভুত শব্দ-বড়ই অদ্ভুত।
শিস বাজাতে বাজাতে আগুনের কাছে ফিরে এল ডরনি।
.
ভোরে ফের হামলা চালাল কর্নেল লরেন কীথ। কোম্পানির পক্ষে প্রায় বিশ জন লোক, ডিনামাইটের বাক্স ছিল দুজনের কাছে। এই হামলাতেই চিরদিনের জন্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কথা স্কোয়াটারদের।
বারউইক ক্যাম্পে আসার আগে ফেসেনডেনকে নিয়ে রিমের ওপর থেকে খুঁটিয়ে ক্যানিয়ন জরিপ করেছে ডরনি আর লরেন কীথ। যার পর নাই খুশি হয়েছে ওরা। গহ্বরের অবস্থান ফাস হবার পর পরিষ্কার হয়ে গেছে, ওটার মুখ থেকে একসঙ্গে দুজনের বেশি লোক কোনও অবস্থাতেই গুলি ছুড়তে পারবে না; অন্যদিকে আক্রমণকারীরা ছড়ানো ছিটানো বোল্ডারের আড়ালে গা ঢাকা দেয়ার প্রচুর সুযোগ পাবে, অনায়াসে ডিনামাইট ছোড়ার মতো দূরত্বে পৌঁছুনো যাবে। দুএক মুহূর্তের চেয়ে বেশি সময় প্রতিপক্ষের নজরে পড়তে হবে না। মাটির কাছাকাছি থাকায় এবং সামনে বোল্ডারের স্তূপ আছে বলে ওদের গুলির আওতা হবে ক্ষুদ্র।