এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হলো এবার। হঠাৎ হঠাৎ ক্যানিয়নের মুখের দিকে লোকজন এগিয়ে আসছে। কিন্তু গুলি করার জন্যে যথেষ্ট সময় খোলা জায়গায় থাকছে না তারা। লুকিয়ে পড়ছে, খানিক পর আরেক জায়গায় মাথা তুলছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে। বিদায়ী সূর্যের আলো শত্রুদের চোখ ধাধিয়ে দিচ্ছে। লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে ওদের গুলি। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বার কয়েক অগ্রসরমান শত্রুদের উদ্দেশে গুলি ছুঁড়ল লরেডো শ্যাড আর কেড্রিক। কিন্তু কাউকে ঘায়েল করতে পারল না। দুবার মেসার চূড়ায় রাইফেল গর্জাল। আর্তর করে উঠল কে যেন।
বুঝলে, লরেডো, হঠাৎ বলল পল কেড্রিক, ওদের ভয়ে পিছিয়ে যাবার মানে হয় না। আমি মেসার মাথায় উঠছি। ফিরে আসি, তারপর দেখা যাবে, কয়োটের দল কেমন লড়াই জানে!
হাসল শ্যাড, ওর চোখের তারায় কৌতুক। আমিও আছি, পার্ডনার, শুষ্ক কণ্ঠে বলল সে, লুকিয়ে থাকতে আমার একটুও ভালো লাগে না। তা ছাড়া মেয়েরা তো এখন নিরাপদেই আছে।
একজন বাদে, বলল কেড্রিক। মিসেস ট্যাগার্ট, রেচারির স্বামী খুন হয়েছে খানিক আগে। ঘর ছেড়ে নড়ে নি সে।
হ্যাঁ, কে যেন বলছিল তখন। ট্যাগার্ট নাকি কোনও সুযোগই পায় নি। আহা, দুজন ভালো মানুষকে হত্যা করেছে ওরা!
.
আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো ইয়েলো বাট মেসার বিশাল কাঠামোর দিকে গম্ভীর চেহারায় তাকাল কর্নেল লরেন কীথ। চূড়ার লোকটা ওদের ঠেকিয়ে রেখেছে। ওখানে ওঠা গেলে কাজ হত। মনে মনে রণাঙ্গনে অধীনস্থ সৈনিকদের সঙ্গে বর্তমান সঙ্গীদের তুলনা করল সে। এরা একদল নৃশংস খুনী ছাড়া আর কিছুই নয়। কীভাবে সে এদের সঙ্গে নিজেকে জড়াল? পা বাড়ানোর সময় কোথায় পা রাখছে দেখে না কেন মানুষ?
ঐশ্বর্য-সারা জীবন বিপুল ঐশ্বর্যের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে লরেন কীথ। অভিজাত সমাজে চলাফেরা করতে হলে প্রচুর সম্পদ দরকার। কিন্তু টাকা যেন সোনার হরিণ, ধরা দিতে চায় না। তিক্ত মনে মেসার দিকে তাকাল কীথ। বারউইকের শার্টের নোংরা কলার আর জ্বলন্ত চোখজোড়া মনের পর্দায় ভেসে উঠল। স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সবাইকে দাবার খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে বারউইক-কাজ আদায় হলে কলার খোসার মতো ছুড়ে ফেলে!
শুরুতে একেবারে উল্টো মনে হয়েছিল ব্যাপারটা। ওর কর্তৃত্ব, সৈনিকসুলভ আচরণ আর স্পষ্ট চিন্তাশক্তির তুলনায় গুন্টারকে সাধারণ একজন ব্যবসায়ী ছাড়া কিছুই মনে হয় নি। বারউইককে মনে হয়েছে স্বল্প বুদ্ধির এক ভাঁড় বিশেষ। অথচ এখন সহসা স্বমূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করেছে বারউইক। সব কর্তৃত্ব হারিয়েছে কীথ, হার মানতে বাধ্য হয়েছে বারউইকের কাছে। এর জন্যে ও নিজেই দায়ী। আগেই বোঝা উচিত ছিল, অ্যাল্টন বারউইক কুৎসিত ভড় নয়, এক অশুভ দানব, ইবলিশের চেয়েও ধূর্ত। তাকে অবহেলা করা মোটেই ঠিক হয় নি।
নিজেকে বরাবর প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী লোক ভেবে এসেছে কীথ। স্বাধীনভাবে কাজ করেছে এতদিন। কারও পরোয়া করে নি। অথচ আজ এমন একজনের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে, যাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করে! পালাবে, তার উপায় নেই। তা ছাড়া এখনও কীথের মনে আশা আছে, সবদিক সামলে নেয়া যাবে। শেষ পর্যন্ত-প্রচুর টাকা আসবে হাতে।
একটা লোকের নাম ঘুরপাক খাচ্ছে ওর মাথায়। যত নষ্টের গোড়া। নামটাকে ঘিরে ওর অন্তরের সমস্ত ঘৃণা ক্রোধ আর তিক্ততা প্রচণ্ড হয়ে উঠল। ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক।
প্রথম দিনই ওকে বোকা বানিয়ে দিয়েছিল কেড্রিক, অবশ্য এজন্য হতচ্ছাড়া গুন্টারও কম দায়ী নয়। নিজের ব্যাংক আর বার বছর সামরিক বাহিনীতে চাকরির কথা বলে কেড্রিককে দমাতে চেয়েছিল ও। ওকে মার্সেনারি বলে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পেয়েছিল সে, কিন্তু উল্টো কেড্রিক শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে ওর বিদ্রূপ ওকেই ফিরিয়ে দেয়। এতগুলো লোকের সামনে বেইজ্জত করে ছাড়ে! কেড্রিক সম্পর্কে নানা কাহিনী কানে আসলেও তেমন আমল দেয় নি কীথ। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ওগুলো আসলে সত্যি ঘটনা। কেড্রিক র্যানসামের বন্ধু, মনে পড়তেই আরও খেপে উঠল কীথ।
অস্থায়ী স্যালুনে ঢুকল সে। গ্লাসে মদ ঢেলে নিরাসক্ত চেহারায় তাকাল তরল পদার্থটুকুর দিকে। লী গফ আর ফেসেনডেন এল।
শালাদের পাকড়াও করতে যাব, কর্নেল? জিজ্ঞেস করল গফ। একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে।
এক ঢোকে গ্লাস খালি করল কর্নেল কীথ। হ্যাঁ, জলদি। সবাই এসেছে? পয়েন্সেট ছাড়া, তবে সেও এসে পড়বে।
আবার গ্লাসে মদ নিয়ে গলায় ঢালল লরেন কীথ। তারপর এক সঙ্গে ইয়েলো বাট-এর রাস্তায় নেমে এল ওরা।
মিক্সাসরা দুভাই আর নবাগতদের দুজন ছাড়া সবাই উপস্থিত রয়েছে। ক্যানিয়নের দিকে গেছে, দুই মিক্সাস! স্কোয়াটারদের আশ্রয়, বোল্ডার আর ঝোঁপের পেছনের দেয়ালে ওঠার জন্যে ঘুর পথে এগিয়ে গেছে অন্য দুজন।
লম্বা লম্বা পা ফেলে রাস্তা ধরে এগিয়ে আসছে পয়েন্সেট। প্রথম ঘরের সামনে পৌঁছুতেই এক মহিলা দরজা খুলে বেরিয়ে এল। শক্ত সমর্থ গড়ন, পরনে রঙ-জ্বলা নীল সুতি কাপড়; পায়ে গোড়ালি ক্ষয়ে যাওয়া বুট। হাতে একটা ডাবল ব্যারেল্ড শটগান। পয়েন্সেট সামনে আসতেই ঘুরে দাঁড়াল মহিলা। ট্রিগার টিপল।
একসঙ্গে দুটো ব্যারেলই খালি করল সে। পয়েন্ট-ব্ল্যাংক-রেঞ্জ, গোলা দুটো সোজা পয়েন্সেটের পেটে লাগল। আক্ষরিক অর্থেই দুটুকরো হয়ে গেল লোকটা। হুড়মুড় করে লুটিয়ে পড়ল রাস্তায়। একটু কেঁপে উঠে স্থির হয়ে গেল। রক্তে লাল হলো ধূসর পাথর। বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল পিস্তলবাজরা।