নিশ্চিত হওয়ার আর বাকি আছে কী? ভেঙচি কাটল ক্লসন। দেখছ না চালুনির মতো ফুটো হয়ে গেছে একেকটা?।
কেড্রিকের কী অবস্থা? জিজ্ঞেস করল ফেসেনডেন। ব্যাটা সত্যিই মরেছে?
মরে ভূত হয়ে গেছে, বলল লী গফ।
আরে! বাধা দিয়ে বলল ডরনি শ, এ-তো ম্যাকলেনন না! স্টীলম্যান!
একসঙ্গে স্টীলম্যানের পাশে জড়ো হলো ওরা।
তাই তো! হিংস্র কণ্ঠে বলে উঠল বারউইক। মুশকিল হলো দেখছি। এখন ম্যাকলেননকে ধরতে না পারলে- ডরনি শর দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে চুপ করে গেল সে।
ডরনির হালকা ধূসর চোখ দুটো ছেলেমানুষি উত্তেজনায় নেচে উঠল।
কুছ পরোয়া নেই, বস, সিগারেট ফেলে গোড়ালি দিয়ে পিষে নেভাতে নেভাতে বলল সে, আমি আছি কেন? ম্যাকলেনন শালাকে আমার হাতে ছেড়ে দাও। কাল সন্ধ্যা নাগাদ ব্যাটার দফারফা করে দিচ্ছি!
আমি আসব? পয়েন্সেট জিজ্ঞেস করল।
দরকার হবে না, বলল ডরনি শ। তবে চাইলে আসতে পারো। শুনেছি বব ম্যাকলেনন নাকি সীমান্তের কোন এক শহরের মার্শাল ছিল। মার্শালের বাচ্চাদের আমার মোটেই সহ্য হয় না।
যার যার ঘোড়র কাছে ফিরে এল ওরা, স্যাডলে চেপে রওনা হলো। পশ্চিমে গেল ডরনি শ, পয়েন্সেট এবং লী গফ-বব ম্যাকলেননকে শিকার করতে যাচ্ছে; অ্যাল্টন বারউইক, চোখের কোণে কুঞ্চন, চলেছে পুবে, মাসট্যাংয়ের দিকে। অন্যরাও রয়েছে তার সঙ্গে। অস্বস্তির সঙ্গে স্যাডলে বসে পেছন ফিরে তাকাল ফেসেনডেন।
ওদের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারলে ভালো হত; বলল সে।
শখ থাকলে ফিরে যাও! বলল ক্লসন। বললাম তো সবকটা মরে ভূত হয়ে গেছে। কেড্রিক শালাকে অসহ্য লাগত আমার! পয়লা গুলিটা সোজা তার। খুঁলি বরাবর ছুঁড়েছি, বুঝলে?
বিকেল গড়িয়ে চলল। পশ্চিমে হেলে পড়ল সূর্য। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে নামল প্রচণ্ড শীত। রূপালি চাঁদের কাছে কোথায় যেন করুণ ফরিয়াদ জানাল একটা কয়োটি। অন্ধকার আকাশের নীচে নিস্তব্ধ মরুভূমি।
আকাশচুম্বী চিমনি রক আর তার আশপাশে কোথাও কোনও স্পন্দন নেই। একটা কয়েটি এদিকে এগিয়ে আসছিল। বাতাসে রক্তের গন্ধ পেয়ে ভয়ে সিঁটিয়ে গেল। পিছিয়ে গেল দুকদম। তারপর ঘুরে ছুট লাগাল যেদিক থেকে আসছিল সেদিকে। পেছন ফিরে তাকাল একবার। পুকুর পারে এখনও আছে কেড্রিকের অ্যাপলুসা, হাঁটছে, মাঝে মাঝে ঘাস খাচ্ছে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল ওটা, রক্তের গন্ধে নাকের পাটা ফুলে উঠল।
গাছপালা আর বোল্ডারের আড়ালে থাকায় গোলাগুলির সময় মাথা তুলেও কিছু দেখতে পায় নি ঘোড়াটা, ঘাস খাওয়ায় মন দিয়েছে আবার। কোথাও কিছু নড়ছে না। রাতের হিম রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দিচ্ছে। আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাটিতে শায়িত মানুষগুলোর শরীর।
.
দশ মাইল উত্তরে, একটা খোঁড়া ঘোড়া টেনে নিয়ে পায়ে হেঁটে এগোচ্ছে লরেডো শ্যাড। কেড্রিকের সঙ্গে সন্ধ্যায় দেখা করার কথা, দেরি করে ফেলেছে। ঘণ্টা দুএক আগে একটা খাদের কিনারা ধরে এগোনোর সময় মাটি ধসে পড়ায় আছড়ে পড়ে পা মচকেছে ঘোড়াটার। আপনমনে বিড়বিড় করে চলেছে শ্যাড, হাঁটছে, দুঘণ্টা ধরে রাতের মতো ক্যাম্প করবে না এগিয়ে যাবে, ঠিক করার চেষ্টা করছে। কেড্রিক ওর জন্যে অপেক্ষা করে থাকবে ভেবে থামতে পারছে না।
এক ঘণ্টা পর। পায়ে ফোস্কা পড়ে গেছে, তবু হাঁটছে লরেডো শ্যাঙ। হঠাৎ ঘোড়ার খুরের শব্দ কানে এল। দাঁড়িয়ে পড়ল ওঁ। রাইফেল তুলে নি। হাতে। একটু পরেই আঁধার ফুড়ে বেরিয়ে এল এক অশ্বারোহী, রাশ টানল সে। দীর্ঘ নীরবতা। লরেডো শ্যাডই প্রথম কথা বলল।
নাম বলো, পার্ডনার।
নবাগত অশ্বারোহীও সশস্ত্র। বব ম্যাকলেনন, বলল সে। তুমি?
লরেডো শ্যাপ। আমার ঘোড়াটা খোঁড়া হয়ে গেছে। চিমনি রক-এর দিকে যাচ্ছি। কেড্রিকের সঙ্গে ওখানে দেখা করার কথা। ম্যাকলেমনের দিকে তাকাল ও। তোমারও তো মিটিংয়ে থাকার কথা ছিল? কি হলো?
আমি সময় মতো পৌঁছুতে না পারায় সেগাল আর স্টলম্যান গিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও ওরা ফেরে নি, তাই খোঁজ করতে বেরিয়েছি।
কী বললে? তীক্ষ্ণ চিৎকার বেরুল শ্যাডের গলা চিরে। ম্যাকলেনন, আমার ভয় হচ্ছে। কোথাও একটা ভজকট হয়ে গেছে বোধ হয়। বারউইককে ফুটো পয়সারও বিশ্বাস নেই!
টেক্সানকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মাপল ম্যাকলেনন। লোকটাকে ভালো লাগলেও দ্বিধা হচ্ছে।
তোমার মার্কা কিন্তু অন্য কথা বলে, তুমি কোম্পানির লোক নও?
মাথা নাড়ল লরেডো শ্যাড। আসলে ব্যাপারটা এরকম, এখানে লড়াই করে টাকা কামাতে এসেছিলাম। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে বাছবিচার করেচিলি আমি। এখানকার ব্যাপারস্যাপার আমার আর কেড্রিকের পছন্দ হয় নি। তাই কোম্পানির কাজ ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছিলাম আমরা। শুধুমাত্র শান্তি বজায় রাখা যাবে, এই আশায় রয়ে গিয়েছিল কেড্রিক। আমি ওর সঙ্গ ছাড়ি নি।
আমার পেছনে উঠে পড়ো; বলল ম্যাকলেনন। দুজনকে অনায়াসে পিঠে নিতে পারবে আমার ঘোড়া, তা ছাড়া বেশি দূর তো নয়!
১০. চোখ মেলে তাকাল কেড্রিক
চোখ মেলে তাকাল কেড্রিক, অনেকক্ষণ বুঝতে পারল না কিছু। অপরিচিত একটা কামরায় নরম বিছানায় শুয়ে আছে ও। অনেকগুলো মুহূর্ত নিঃসাড় পড়ে রইল, স্মৃতির পাতা হাতড়ে বোঝার চেষ্টা করল কোথায় আছে? কেন? আচ্ছা, কে ও? হ্যাঁ, মনে পড়েছে ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক নিউ অরলিন্স থেকে…একটা কাজ নিয়ে পশ্চিমে এসেছিল…এবার একে একে মনে পড়ে গেল সব।