হঠাৎ রাশ টেনে ধরল কেড্রিক। একটা ঘোড়া উত্তর পশ্চিম কোণ থেকে এসে এদিক দিয়ে গেছে, টাটকা ট্র্যাক দেখা যাচ্ছে। বারউইকও দেখল।
এই ট্রাক আমার চেনা, বলল কেড্রিক। ঘোড়াটা কার?
চল তো, অধৈর্য কণ্ঠে বলল অ্যালটন বারউইক। ওরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা করবে।
সকালের সোনালি আলোয় এগিয়ে চলল দুজন। মাথার উপর নীল আকাশ ধনুকের মতো বেঁকে গিয়ে দিগন্ত স্পর্শ করেছে। টুকরো টুকরো শাদা মেঘ ভাসছে, যেন দীঘিতে সাঁতার কাটছে রাজহাঁসের দল। বায়ে লালচে পাহাড়গুলো আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভানে, দূরে হারিয়ে গেছে উপত্যকা, চোখ ভোলানো দৃশ্য। সেজঝোপে ঢাকা মাঠের ওপর দিয়ে দৃষ্টি মেলে দিল পল। এখান থেকে সাত আট মাইল দূরে এই নীলের সাগরেই হারিয়ে গেছে ম্যালপাই ক্যানিয়ন। ওখানে স্ন্য লেইন আছে।
এখন কী ঘরে আছে মেয়েটা? নাকি কোথাও বেরিয়ে গেছে? হালকা পাতলা, কালো চুল আর কালো চোখের মেয়েটা সত্যি আকর্ষণ করে। মরুভূমির সূর্যের প্রখর তাপ ওর কোমল ত্বকে সামান্যতম রুক্ষতা আনতে পারে নি। বিপদ সম্পর্কে ওকে সতর্ক করতে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে মাস্ট্যাংয়ে ছুটে গিয়েছিল সে। কেন? ওকে বাঁচাতে? মেয়েটা ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ল না তো? চট করে ধারণাটা নাকচ করে দিল পল। তবু প্রশ্নটা অনবরত খুঁচিয়ে চলল ওকে। সুন্দরী হলেও কঠিন এবং স্বার্থপর স্যু লেইন, এখানে থাকতে চায় না, দূরে কোথাও যেতে চায়। তাপ-তরঙ্গ নাচছে নীচের সমতলে। লাল-পাহাড়ী-দেয়ালের নীচে ছায়া পড়েছে। হঠাৎ বাতাসে বালির ঘূর্ণি উঠল, পিশাচিনীর মতো নাচল মরুভূমির বুকে, তারপর ঘন অ্যান্টিলোপ ঝোঁপ আর ক্যাট-ক্লর মাঝে হারিয়ে গেল। কপালের ঘাম মুছল ক্যাপ্টেন কেড্রিক। পুবে ঘোরল অ্যাপলুস। দূরে চিমনি রক-এর সুউচ্চ চূড়া দেখা যাচ্ছে। আশপাশে আরও অনেক পাহাড় জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে।
ওই যে, বরউইকের কণ্ঠে বিজয়ের সুর, ওরা আছে!
দক্ষিণে, মাইল তিনচার দূরে, দুজন ঘোড়সওয়ারকে দেখা যাচ্ছে, চিমনি রকের দিকে এগিয়ে আসছে। এত দূর থেকে ওদের চেনা না গেলেও গন্তব্য বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না।
চমৎকার, উজ্জ্বল হয়ে উঠল বারউইকের চেহারা। সময় মতোই পৌঁছে যাবে ওরা। মনে করো ভারি সোনার ঘড়িটা দেখল সে, ওদের আগেই কিন্তু ওখানে পৌঁছে যেতে পারবে তুমি। এক কাজ করো? তুমি গিয়ে ওদের জন্যে অপেক্ষা করো, এই ফাঁকে আমি ওদিকে ক্যানিয়নের ভেতর দিকে একটা চাতাল পরীক্ষা করে আসি, ঠিক আছে? দেরি করব না।
কয়েক মিনিট পর চিমনি রক-এর ছায়ায় এসে ঘোড়া থামাল ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। একটা খুদে পুকুর আছে এখানে। অ্যাপলুসাকে পানি খাইয়ে কিছু বোল্ডার আর গাছের আড়ালে ঘেসো জমিতে ছেড়ে দিল। তারপর ফিরে এসে মাটিতে বসে সিগারেট ধরাল। আরও এগিয়ে এসেছে ঘোড়সওয়াররা। একজন একটা চেস্টনাট হাঁকাচ্ছে, লম্বা লম্বা পা ফেলছে ওটা। অন্যটা একটা ড্যাপল্ড
কেড্রিকের সামনে এসে ঘোড়া থামিয়ে স্যাডল থেকে নামাল ওরা। প্রথমজন পিটার সেগাল। অন্যজনকে কেড্রিক চেনে না, আগে দেখে নি।
ম্যাকলেনন কোথায়? জানতে চাইল ও।
সময় মতো, র্যাঞ্চ থেকে আসতে পারে নি বলে আমি স্টীলম্যানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। স্টীলম্যান ভালো লোক। ওর কথা আমাদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। তবে ববের মুখে প্রতিশ্রুতি চাইলে, প্রয়োজনে ও-ও আসবে নিশ্চয়ই।
বারউইক এসেছে আমার সঙ্গে। ক্যানিয়নের ভেতর কী একটা চাতাল পরীক্ষা করতে গেছে সে।
গোল হয়ে দাঁড়াল তিনজন। কেড্রিককে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জরিপ করল স্টীলম্যান।
ডাই রীডের মুখে তোমার অনেক প্রশংসা শুনেছি। তুমি নাকি খুবই বিশ্বস্ত লোক।
অন্তত বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করি, সিগারেটে শেষ টান দিয়ে ছুঁড়ে ফেলতে গিয়ে মুখ তুলে তাকাল পল কেড্রিক।
মুহূর্তের জন্যে আড়ষ্ট হয়ে গেল ও, ফ্যাকাসে হয়ে গেল চেহারা; পরক্ষণে সতর্ক হয়ে উঠল। সাবধান! চিৎকার করে বলল, শুয়ে পড়ো!
বন্দুকের কানফাটা আওয়াজে চাপা পড়ে গেল ওর গলা। কেড্রিক মাটি স্পর্শ করার আগেই কী একটা যেন আঘাত করল ওর দেহে। পরমুহূর্তে খাবলা লাপিল খুলিতে। অন্ধকারের স্রোত ধেয়ে এল, অতল অন্ধকার টেনে নিতে শুরু করল ওকে…নীচে…আরও নীচে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। অকস্মাৎ দপ করে নিভে গেল সব আলো! তারপর আর কিছু মনে নেই।
.
তৃপ্তির সঙ্গে মুচকি হাসল অ্যাল্টন বারউইক। সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দিল। ঠাণ্ডা মাথায় ঘোড়া ঘোরাল। চিমনি রক-এর কাছে একটা নিচু পাথুরে দেয়ালের পেছন থেকে বেরিয়ে এসেছে চার অশ্বারোহী, সেদিকে এগোল। বারউইক ওদের কাছে যাবার আগেই ছায়ায় লুটানো তিনজন মানুষের কাছে পৌঁছে গেল ওরা। স্যাডল থেকে নেমে রাইফেল হাতে বারউইকের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল।
একদম খতম! বলল ডরনি শ, কঠিন দৃষ্টি তার। চিরদিনের জন্যে চুকে গেল ঝামেলা?
ফেসেনডেন, ক্লসন আর পয়েন্সেট মাটিতে শায়িত কেড্রিকদের দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছে না। হামলার হাত থেকে কেউ যাতে, রেহাই না পায়, সেজন্যে অন্য এক জায়গায় লুকিয়ে ছিল লী গফ, বেরিয়ে এসে ওদের সঙ্গে যোগ দিল। ঝুঁকে পড়ল সে কেড্রিকদের দিকে।
আক্ষরিক অর্থেই বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে পিটার সেগাল, ছিন্নভিন্ন, রক্তাক্ত। একপাশে পড়ে আছে স্টীলম্যান, অর্ধেকটা খুলি উড়ে গেছে। গাঢ় ছায়ায় লুটিয়ে আছে ক্যাপ্টেন কেড্রিক, রক্তাপুত মাথা, শরীরও রক্তাক্ত। আরও এক দফা গুলি লাগিয়ে দেব? নিশ্চিত হওয়া যেত? পয়েন্সেট জিজ্ঞেস করল।