এখন না, শান্ত কণ্ঠে বলল কেড্রিক। আগে,এ-বিবাদের একটা মীমাংসা করতে হবে। তারপর তোমাদের ওদিকে একবার যেতেও পারি।
অধৈর্যভাবে ঘোড়ার দিকে এগিয়ে গেল স্যু লেইন। স্যাডলে চেপে ঘাড় ফিরিয়ে কেড্রিকের দিকে তাকাল। যদি মত পাল্টাও
এখন নয়, আবার বলল কেড্রিক। তা হলে সাবধান, খুব সাবধান, পল!
স্যু লেইন চলে গেলে কী ভেবে হেডকোয়ার্টারের দিকে তাকাল পল কেড্রিক। জানালায় দাঁড়িয়ে ওর দিকে এতক্ষণ তাকিয়েছিল সামান্থা, চোখাচোখি হতেই চট করে সরে গেল। পা বাড়াতে গিয়েও থমকে গেল কেড্রিক। কী বলবে? এখন মেয়েটা কিছুই বুঝবে না।
বাড়ির সামনে যাবার জন্যে পা বাড়াল ও, কয়েক পা এগিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়ল। ঘুরে দ্রুত পায়ে ফের এগিয়ে গেল পুরোনো আস্তাবলের দিকে। দরজার খিড়কিতে হাত রাখল। রোদ-বৃষ্টির অত্যাচারে কাহিল অবস্থা, আস্তে আস্তে খুলল ও, মরচে ধরা কজ্বা আর্তনাদ করে উঠল। ভেতরে সঁতসেঁতে পরিবেশ, গুমোট। এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল কেড্রিক। মাকড়শার জালে ঢাকা জানালার ফাঁক গলে রোদ এসে বহুদিন আগের খড়ে ছাওয়া মেঝেতে নকশা আঁকছে। এক কদম এগিয়ে সবচেয়ে কাছের স্টলে উঁকি দিল পল।
একটা হাতের ওপর মাথা রেখে উপুড় হয়ে পড়ে আছে জন গুন্টার, শার্টের পেছনে রক্তের দাগ। মৃতদেহটার পাশে হাঁটু গেড়ে বসল পল। পেছনে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছে সামান্থার মামাকে, উপর্যুপরি তিনবার আঘাত করেছে খুনী। আঘাতের চেহারা দেখে মনে হয়, ডেস্কে বা টেবিলে বসে কাজ করছিল গুন্টার, এই সময় অতর্কিতে হামলা চালানো হয়েছে।
কয়েক ঘণ্টা আগেই মারা গেছে জন গুন্টার।
০৯. প্রকাণ্ড শরীর নিয়ে
প্রকাণ্ড শরীর নিয়ে বেশ সহজ ভঙ্গিতেই স্যাডলে বসে এগিয়ে চলেছে অ্যাল্টন বারউইক। লম্বা লম্বা পাঅলা একটা ব্লাড বে হাঁকাচ্ছে সে। অ্যাপলুসা নিয়ে। পাশে রয়েছে, ক্যাপ্টেন পল কেড্রিক। মাঝে মাঝে স্পারের গুতোয় ঘোড়ার। গতি বাড়িয়ে সামনে চলে যাচ্ছে বারউইক, একটু পরেই আবার কেড্রিকের পাশে আসছে। পুরোনো ছেড়া দোমড়ানো-মোচড়ানো একটা টুপি মাথায়। দিয়েছে সে, গলায় প্যাচানো রুমালটাও নোংরা, ঘামের দাগ-পড়া শার্টের কলার ঢেকে রেখেছে।
বেল্টের ওপর দিয়ে ঝুলে পড়েছে গায়ের শার্ট। একটা পিস্তল ঝুলছে কোমরে, অনেক উঁচু করে বাঁধা গানবেল্ট, এভাবে ঝোলানো পিস্তল বের করা অসুবিধেজনক। যেমন ছিল তেমনই আছে, বারউইকের দাড়ি, কর্কশ নোংরা কাঁচাপাকা। কিন্তু কথাবার্তায় অস্বাভাবিক আন্তরিক মনে হচ্ছে তাকে।
দেশটা বড় সুন্দর, কেড্রিক। এমন দেশে মরেও সুখ। হাতের কাজ, শেষ করে, এখানেই ধারে-কাছে কোথাও একটার্যাঞ্চ গড়ে তোল না কেন? আমিও তাই করব ভাবছি।
মন্দ বলে নি। বাঁ হাতে লাগাম ধরেছে কেড্রিক, ডানহাত ঝুলছে পাশে। গতকাল সামান্থা ফক্সের সঙ্গে এ-নিয়ে আলাপ করেছি।
বারউইকের ঠোঁটের হাসি, অদৃশ্য হলো। কাল ওর সঙ্গে দেখা হয়েছে? কখন??
বিকেলে, সহজ কণ্ঠে বলল কেড্রিক। কিন্তু বারউইকের কণ্ঠস্বরের আকস্মিক পরিবর্তন নজর এড়াল না। গুন্টারকে বারউইকই খুন করে নি তো? নাকি কাজটা ইয়েলো বাটের কারও? যা অবস্থা, সত্যি জানার উপায় নেই। অনেকক্ষণ কথা বলেছি আমরা। সামান্থা চমৎকার মেয়ে।
জবাব দিল না বারউইক, পরস্পরের সঙ্গে চেপে বসল ঠোঁটজোড়া। ক্যানিয়নের লালচে দেয়াল দুপাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সল্ট ক্রিকের তলদেশ থেকে প্রায় পাঁচশো ফুট উঁচুতে রয়েছে ওরা। গন্তব্যে পৌঁছুতে বেশি দেরি নেই। অস্বাভাবিক সতর্ক হয়ে উঠেছে বারউইক, ধাঁধায় পড়ে গেল কেড্রিক। কোনরকম বিপদের আশঙ্কা করছে না তো লোকটা? কিন্তু এ প্রসঙ্গে উচ্চবাচ্য করল না ও।
স্যু লেইনের সাবধানবাণীর কথা মনে পড়ে গেল। ওকে হত্যা করতে চাইছে ওরা–কিন্তু এই ওটা কারা? স্পষ্ট করে বলে নি মেয়েটা। স্রেফ আজকের মিটিংয়ে যোগ দিতে বারণ করেছে জোর গলায়। মনে মনে ব্যাপারটা উল্টে পাল্টে দেখল কেড্রিক। মেয়েটা পরিকল্পিতভাবে আপোস প্রচেষ্টা বানচাল করতে চায় নি তো? নাকি সত্যিই গোপন কোনও তথ্য জানতে পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে?
স্যু লেইনের বন্দুকবাজ ভাই, পিট লেইন সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে নি। পল কেড্রিক। কোনও আলোচনাতেই পিটের নাম উচ্চারিত হয় নি। কিন্তু সব সময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও, কেড্রিক নিশ্চিত, সেই ইঁদুর-রঙা ফেঁড়াটার রহস্যময় সওয়ারীর মতো বর্তমান সংকটে তারও একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। স্যু বলেছে ঘোড়াটা নাকি ভোজবাজির। মতো অদৃশ্য হয়ে যায়-আজগুবী গল্প! কিন্তু স্যু লেইনের মতো মেয়ের তো আষাঢ়ে: গল্পে বিশ্বাস করার কথা নয়! সল্ট ক্রিকের ক্যানিয়ন চওড়া হয়ে গেছে এখানে, কয়েকটা শাখা ক্যানিয়ন এসে মিশেছে এটার সঙ্গে। ক্যানিয়নের তুলদেশ ছেড়ে ট্রেইল থেকে প্রায় সাতশো ফুট উঁচু আকাশচুম্বি ক্লিফের দিকে এগোল ওরা, দক্ষিণ দিকে। খানিক পর পর নোংরা রুমালে ঘামে চটচটে মুখ মুছছে বারউইক। কথা বলছে না, একেবারে বোবা বনে গেছে।
টুপি ঠেলে পেছনে সরাল কেড্রিক, একটা সিগারেট রোল করতে শুরু করল। বারউইককে এই প্রথম এমন উত্তেজিত হতে দেখছে ও, ভাবনায় পড়ে যাচ্ছে। গুন্টারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোম্পানির কারও সাথে কথা বলে নি পল। শহরের কিছু লোকের সাহায্যে লাশটা সরানোর ব্যবস্থা করেছে। হত্যাকাণ্ডের পরিণতিতে তুমুল লড়াই বেধে যাবে, আশঙ্কা করেছিল কেড্রিক, অথচ লড়াই থামানোর জন্যেই আপ্রাণ চেষ্টা করছে ও। সমস্যা, গুন্টারকে যে কে কী কারণে হত্যা করল সেটাই বোঝা যাচ্ছে না ব্যাপারটা সিঙ্গার হত্যার প্রতিশোধও হতে পারে। আবার কীথ অথবা বারউইকও করে থাকতে পারে কাজটা।