চড়া গলায় ডাকল ১৪:মাথার উপর ছুটন্ত পায়ের শব্দ হলো। কয়েকমুহূর্ত পর সিঁড়ির মাথায় এসে দাড়াল সামান্থা, ফক্স।
কে? পরক্ষণে কেড্রিককে চিনতে পেরে তাড়াতাড়ি নেমে এল। কোনও সমস্যা?
সব কিছু খুলে বলল কেড্রিক, কিছুই গোপন করল না। হয়তো কিছুই হবে না। কিন্তু ঝামেলা শুরু হতে আবার বেশি কিছু লাগেও না। সবাই এখন জানে কোম্পানির বন্দুকবাজরা শহর থেকে চলে গেছে। বারউইক, কীথ আর তোমার মামা নিশ্চয়ই গা ঢাকা দিয়েছে।
আজ সারা দিনে একবারও মামার সঙ্গে আমার দেখা হয় নি। সকালে একসঙ্গে নাশতা করার পরই কোথায় যেন চলে গেছে।
দাঁড়াও, দেখছি। তোমার কাছে পিস্তল আছে? জিজ্ঞেস করে আবার নিজেই মাথা নাড়ল কেড্রিক। হয়তো তার প্রয়োজন হবে না। এখানে সবাই তোমাকে পছন্দ করে, তা ছাড়া আগেই তুমি তোমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছ। তোমার বিপদ হবার আশঙ্কা কম। তবু সাবধান থাকা ভালো। বিনাকাজে ঘর ছেড়ে বেরিয়ো না। গোলমাল একটা বাধল বলে!
দরজার কাছে পৌঁছুনোর আগেই আবার সামান্থা ডাকল ওকে, ঘুরে মুখোমুখি হলো কেড্রিক।
পল, সামান্থার দৃষ্টিতে আবেদন ঝরছে। নিজের দিকে খেয়াল রেখো।
দীর্ঘ কয়েক মুহূর্ত পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইল ওরা। মাথা দোলা, কেড্রিক। আচ্ছা, চেষ্টা করব।
ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির গোড়ায় থমকে দাঁড়াল কেড্রিক। বারউইক আর কীথ হয়তো গা ঢাকা দিয়েছে; কিন্তু যত খারাপই হোক, ভাগ্নীকে, বিপদে ফেলে পালিয়ে যাবার মতো লোক তো গুন্টার নয়! গুন্টারের অন্তর্ধানের রহস্য কী? ভাবতে ভাবতে ঘাড় ফিরিয়ে এদিক-ওদিক তাকাল পল কেড্রিক। বাড়ির পেছনের রাস্তা খাঁ-খাঁ করছে, তূপ হয়ে আছে পাউডারের মতো মসৃণ ধূসর বালি; গাছের পাতায় পাতায়, ঝোঁপ ঝাড়ে ধুলোর পুরু আস্তরণ পড়েছে।
নেড়েচেড়ে গানবেল্ট জায়গামতো বসাল কেড্রিক, তারপর বাড়ির পেছন দিকে পা বাড়াল। সাধারণত আস্তারল ঘোড়ায় গিজগিজ করে, কিন্তু এখন যেন ফাঁকা। দ্রুতপায়ে এগোল ও, পায়ে পায়ে ধুলো উড়ছে, ঝুন-ঝুন শব্দ উঠছে ম্পারে।
আস্তাবলের কাছে পৌঁছে ওঅটর ট্রাফের পাশে দাঁড়াল পল। শহরের কোলাহল কানে আসে কিনা শোনার চেষ্টা করল।
নীরবতা, অস্বাভাবিক নীরবতা।
সামান্থার নিরাপত্তার কথা ভেবে মুহূর্তের জন্যে ইতস্তত করল কেড্রিক, তারপর সব দ্বিধা ঝেড়ে পা বাড়াল, চওড়া দরজা গলে ঢুকল আস্তাবলে।
একটা ছাড়া সবগুলো স্টল খালি। স্টলের মুখে এসে দাঁড়াল কেড্রিক। গুন্টারের চেস্টনাটটা রয়েছে। কাছেই পড়ে আছে স্যাডল। তা হলে কী শহরেই আছে গুন্টার? একটু ভেবে সম্ভাবনাটা নাকচ করে দিল কেড্রিক। মাথা থেকে টুপি খুলে রুমালে ব্যান্ড মুছল, আবার জায়গামতো বসাল ওটা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রতিটি স্টল পরীক্ষা করল ও, চেহারায় চিন্তার ছাপ।
কোথাও কিছু নেই!
বিভ্রান্ত কেড্রিক আস্তাবল থেকে বেরিয়ে এল। সূর্য যেন আগুন ঢালছে। কোথাও কোনও শব্দ নেই। চোখ ছোট করে ইতিউতি তাকাল ও। এখনকার এই বড় আস্তাবল তৈরি হওয়ার আগে যেটা আস্তাবল হিসেবে ব্যবহৃত হত, সেই জরাজীর্ণ দালানটা চোখে পড়ল। কয়েক মুহূর্ত সেদিকে চেয়ে রইল কেড্রিক। তারপর, পা বাড়াল। সঙ্গে সঙ্গে কানে এল ঘোড়ার খুরের শব্দ, চট করে উবু হয়েই বসে পাইকরে ঘুরল ও, দুই হাত প্রস্তুত।
পর মুহূর্তে আবার সোজা হয়ে দাড়াল। স্যাডল থেকে পিছলে নেমে ছুটে আসছে লেইন। ওঁহু, পল, তুমি এখানে! আর আমি এদিকে খুঁজে সারা! কেড্রিকের বাহু আঁকড়ে ধরে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মেয়েটা। কালকের মিটিংয়ে তুমি যেয়ো না, পুল, বিপদ হকে!
ম্যাকলেনন ষড়যন্ত্র করেছে?
ম্যাকলেনন? মুহূর্তের জন্যে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল স্যু লেইন। না, না! ম্যাক নয়! চেহারা বদলে গেল ওর। আমার বাড়িতে চলল, পল, ওদের ঝামেলা ওরা পোহাবে! তুমি আমার সঙ্গে এসো!
হঠাৎ আমার জন্যে বড় উতলা হয়ে উঠলে যে? প্রকৃতই কৌতূহল বোধ করছে কেড্রিক তোমার সঙ্গে মাত্র একবার আমার কথা হয়েছে এবং সব ব্যাপারেই মতের অমিল পেয়েছি আমি।
তর্ক করে সময় নষ্ট করো না তো! ওদের কেউ যদি দেখে ফেলে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলছি, বিপদে পড়ে যাব। তুমি আমার সঙ্গে চলো, গোলমাল না মেটা পর্যন্ত এখান থেকে দূরে থাকো। ডরনিকে আমি চিনি, ও তোমাকে ঘৃণা করে, পল, মন থেকে ঘৃণা করে!
তাই নাকি? স্যু লেইনের কাঁধ চাপড়ে দিল পল কেড্রিক। যাও, ঘরে ফিরে যাও। এখানে অনেক কাজ পড়ে আছে আমার।
অ! একটু কঠিন হলো স্যু লেইনের দৃষ্টি। ওই মেয়েটাই না যাওয়ার কারণ নিশ্চয়ই? কী যেন নাম, ফক্স? মেয়েটার কথা অনেক শুনেছি, খুব নাকি সুন্দরী আর-আর, কেমন মেয়ে সে?
চমৎকার, গাঢ় স্বরে বলল কেড্রিক। আলাপ করে দেখো, তোমার ভালো লাগবে।
আড়ষ্ট হয়ে গেল স্যু লেইন। আচ্ছা? মেয়েদের সম্পর্কে কী জানো তুমি পল? জানতে ইচ্ছে করছে। আদৌ কিছু জানো? সামান্থা ফক্সকে আমার ভালো লাগার প্রশ্নই ওঠে না। কেড্রিকের কাধ ধরে ঝাঁকুনি দিল ও। চাইলে আসতে পারো। কাল রাতে খবরটা পেয়েছি আমি। এমন কিছু ঘটুক আ-আমি চাই না।
কী-কীসের কথা বলছ?
অধৈর্যের সঙ্গে মাটিতে পা ঠকল স্যু লেইন। উফ, বোকা নাকি! ওরা তোমাকে খুন করার প্ল্যান করছে, পল! কই, এবার চল।