অস্বস্তি বোধ করছে ও। পিটার্সের হুমকির কথা মনে পড়ছে। নির্বোধ হতে পারে, কিন্তু চেহারা বলে লোকটা ভালোমানুষ। তবে ওদের মাঝে দুএকজন ভালোমানুষ থাকা খুবই স্বাভাবিক। পিটার ঠিক নেতা গোছের লোক নয়, এই রকম লোকেরা খারাপ লোকের ফাঁদে পা দিয়ে অজান্তে বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়ে।
জমিটা সরকারী নির্দেশে গুন্টার, কীথ আর বারউইকের দখলে গিয়ে থাকলে, এর মধ্যে কোনও ঘোর প্যাঁচ না থাকারই কথা। সরকার ওদের কাছে জমি বিক্রি করলে স্কোয়ার্টার বা জবরদখলকারীদের ওখানে থাকার অধিকার নেই। তবে অধিকাংশ লোক যদি পিটার্সের মতো হয়ে থাকে, ও যেমন ভেবেছিল, মোটেই ততো কঠিন হবে না কাজটা।
রাস্তা থেকে খানিকটা দূরে একটা চৌকো পাথুরে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল গুন্টার। আমাদের হেডকোয়াটার, বলল সে, এসো, ভেতরে এসো!
বাড়িটার চারপাশে প্রশস্ত বারান্দা। সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল ওরা। কেড্রিক দেখল কাছেই শাদা ব্লাউজ আর ধূসর স্কার্ট পরা এক মেয়ে চেয়ারে বসে বই পড়ছে। থমকে দাঁড়াল গুন্টার।
ক্যাপন কেড্রিক। এ আমার ভাগ্নী, সামান্থা ফক্স।
দৃষ্টি বিনিময় হলো ওদের, নিঃশব্দে কেটে গেল একটি দীর্ঘ মুহূর্ত। কেড্রিকের পুরো শরীর যেন অসাড় হয়ে গেছে, নড়তে পাড়ছে না। বড় বড় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা, দৃষ্টিতে বিস্ময়।
চট করে নিজেকে সামলে নিল কেড্রিক, ঈষৎ মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানাল।
হাউডি, মিস ফক্স!
ক্যাপ্টেন কেড্রিক, কোনওমতে উঠে দাঁড়াল মেয়েটা, কেড্রিকের দিকে এগিয়ে এল। আশা করি এখানে তোমার ভালো লাগবে।
মেয়েটার ওপর থেকে চোখ সরায় নি কেড্রিক, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে সামান্থা ফক্সের চেহারা।
নিশ্চয়ই! আস্তে করে বলল ও, ভালো লাগতেই হবে!
এতটা নিশ্চিত হওয়া ঠিক নয়, শীতল কণ্ঠে বলল কর্নেল লরেন কীথ। ধ্যেৎ, দেরি হয়ে যাচ্ছে। চল তো! কিছু মনে করো না, সামান্থা, বারউইক
অপেক্ষা করছে। দরজা দিয়ে পা বাড়াতে গিয়ে একবার পেছনে তাকাল কেড্রিক। এখনও দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা।
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, খেপে গেছে কীথ, কিন্তু গুন্টার ব্যাপারটা লক্ষ্য করে নি।
হঠাৎ কোত্থেকে এসে হাজির হলো ডরনি শ, পলকের জন্যে কেড্রিকের দিকে তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না। অচঞ্চল হাতে একটা সিগারেট রোল করতে শুরু করল।
০২. বারউইক, নোংরা স্থূলদেহী এক লোক
একটা টেবিলের উল্টোদিকে বসে আছে বারউইক, নোংরা স্থূলদেহী এক লোক। খোঁচা খোঁচা দাড়ির আড়ালে গাল আর থলথলে চিবুক ঢাকা পড়েছে। মাথার তুলনায় ছোট নাকটার দুপাশে খুব কাছাকাছি ভুরুহীন কুতকুতে চোখ দিয়ে দেখছে কেড্রিককে, অস্থির দৃষ্টি। বুক অবধি শার্টের বোতাম খোলা, কলারের পেছনে ঘামের কালচে দাগ স্পষ্ট। ময়লায় ভরাট প্রতিটি আঙুলের নখ।
কর্নেল কীথ আর গুন্টারের দিকে একবার তাকিয়ে আবার কেড্রিকের দিকে চোখ ফেরাল সে। বসো! বলল, এত দেরি হলো কেন? কাজের সময় দেরি করলে চলে! বিশাল মাথা, এবার গুন্টারের দিকে ফিরল। জন, এ লোকই আমাদের জমি থেকে হারামজাদাগুলোকে দূর করবে?
হ্যাঁ, ও-ই কেড্রিক, হড়বড়িয়ে বলল গুন্টার। বারউইককে রীতিমত ভয় করে বলে মনে হচ্ছে। কামরায় পা রাখার পর মুখ খোলে নি কর্নেল কীথ। গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে, যেন এখানে সে উপস্থিত নেই।
ও ছাড়া আর কেউ পারবে না! আবার বলল গুন্টার।
এক মুহূর্ত পর কেড্রিকের দিকে তাকাল বারউইক। মাথা দুলিয়ে গুন্টারের কথায় সায় দিল যেন। তোমার কথা অনেক শুনেছি। আন্তরিক কণ্ঠে বলল সে। ওদের প্রতি দরদ না দেখালে কাজটা তোমাকে দিয়ে হবে। আমাদের হাতে কিন্তু মোটেই সময় নেই! বুঝতে পারছ? আগেই ওদের একবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। তুমি আরও একবার নোটিশ দাও, তার পরও যদি না যায়, ঝেঁটিয়ে বিদায় করো কিংবা কবর দিয়ে দাও। কোনটা করবে, তোমার ইচ্ছে; আমার কিছু বলার নেই। আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব না। একটু থেমে আবার খেই ধরল সে। কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেদিকেও খেয়াল, রাখব; এখানে কী ঘটবে না ঘটবে, আমাদের ওপরই নির্ভর করছে।
মন থেকে কেড্রিককে ঝেড়ে ফেলে এবার জন গুন্টারের দিকে মনোযোগ দিল বারউইক। জন, তোমাকে যে কাজ দিয়েছিলাম করেছ? পঞ্চাশজন লোকের দুমাসের মতো খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে? জায়গাটা খালি হওয়ামাত্রই আমি কাজে নামতে চাই। যত দ্রুত কাজ শুরু করা যায় ততই আমাদের লাভ। মুহূর্তের জন্যে কাজে বাধা পড়ক চাই না আমি।
ঝট করে ঘাড় ফিরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কেড্রিকের দিকে তাকাল বারউইক। দশ দিন! দশ দিন সময় দিচ্ছি তোমাকে! কিন্তু পাঁচ দিনের বেশি লাগলৈ আমি কিন্তু দুঃখ পাব। তোমার পক্ষে যদি না কুলোয়, ডরনি শকে ছেড়ে দিয়ো, এক হাত দেখিয়ে দেবে ও! আচমকা সশব্দে হেসে উঠল বারউইক। হ্যাঁ, ডরনি শই দেখিয়ে দেবে!
হাসি থামিয়ে ডেস্কের কাগজপত্রে মনোযোগ দিল ও, কেড্রিকের দিকে না তাকিয়েই বলল, তুমি এবার যেতে পারো, কেড্রিক। ডরনি, তুমিও!
একটু ইতস্তত করে উঠে দাঁড়াল কেড্রিক। মোট কতজন, লোক আছে ওখানে? হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসল ও, ছেলে-মেয়ে আছে কারও?
সন্ত্রস্ত চেহারায় ওর দিকে তাকাল গুন্টার। আমি তোমাকে সব কিছু খুলে বলব, পল! পরে তোমার সঙ্গে কথা বলব।