ভিড়ের পেছন দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে ঘুর পথে সেইন্ট জেমস-এর সামনে পৌঁছুল পল। থামল। হঠাৎ পাশে হাজির হলো লরেডো শ্যাড।
কী ব্যাপার? চট করে জিজ্ঞেস করল সে।
ব্যাখ্যা করল কেড্রিক। বুঝতে পারছি না ঠিক, বলল ও। কীথ বোধহয় খুশি মতো কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। আলোচনা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বারউইকের শান্ত থাকার কথা। আমি জানি ব্যাপারটা কীথ মেনে নেয় নি। সঙ্গে সঙ্গে বারউইকের বিরোধিতা করেছিল সে।
সিঙ্গার সেটলারদের একজন না? জিজ্ঞেস করল লরেডো শ্যাড। ও খুন হওয়ায় সবাই খেপে যাবে! কীথ বা কোম্পানির সঙ্গে সিঙ্গার হাত মিলিয়েছিল, কেউ জানে?
ঠিকই বলেছ, লরেডো, চিন্তিত চেহারায় বলল পল কেড্রিক। এটাকে উসিলা করেই হয়তো মহা হাঙ্গামা বেধে যাবে!
দুজনই উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল ওরা। স্লোয়ান ম্যাকলেননের আত্মীয়, তাই ওকে খুন করতে চেয়েছিল অ্যাবি। আমার গলা শুনে ভড়কে যায় সে, মাথা ঠিক রাখতে পারে নি।
ভিড়ে ভাঙন ধরল। ছোট ছোট জটলা করে নতুন ঘটনাটা প্রসঙ্গে আলাপ করতে লাগল লোকেরা রাস্তার ওপর। লরেন কীথ যখন হাজির হলো তখনও কেড্রিকের পাশে দাঁড়িয়ে আছে লরেড়ো শ্যাড। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রথমে শ্যাড তারপর কেড্রিকের দিকে তাকাল কীথ।
কী হচ্ছে ওখানে?
কেড্রিকের দিকে চোখ রেখে প্রশ্ন করল সে। কেড্রিক কাঁধ ঝাঁকাল। গানফাইট বোধহয়, যা শুনলাম, মাস্ট্যাংয়ে এসব পুরোনো ব্যাপার।
মিক্সাসকে দোকানে ঢুকতে দেখলাম, মন্তব্য করল লরেডো শ্যাড। এর মধ্যে তার হাত আছে কি না জানতে চাও?
ঘাড় কাত করে লরেডোর দিকে তাকাল কর্নেল লরেন, কীথ, সন্দেহভরা চোখ, কে মারা গেল? প্রশ্ন করে পালা করে দুজনের দিকে তাকাল।
সিঙ্গার নামে এক লোক, সহজ কণ্ঠে, বলল লরেডো শ্যাড। মিক্সাসই খুন করেছে।
মিক্সাস? সিঙ্গারকে মেরেছে? মাথা নাড়ল কীথ। অসম্ভব!
অসম্ভর হতে যাবে কেন? ধীর লয়ে বলল লরেটে। লড়াই করতেই তো এখানে এসেছে মিক্সাস, নাকি? সিঙ্গার একজন সেটলার, তাই না?
ইতস্তত করল কীথ, তার ছুঁচাল কঠিন চেহারায় দিশেহারা ভাব। কীথের চেহারা দেখে মনে মনে তৃপ্তি বোধ করল কেড্রিক। দোকানি ওর চেহারা দেখতে পায় নি। মিক্সাস, সিঙ্গার আর স্লোয়ান-এই তিনজন কেবল দেখেছে ওকে। এদের মধ্যে সিঙ্গার মারা গেছে, শ্লোয়ান কেটে পড়েছে। সিঙ্গারকে খুন করার পেছনে অ্যাবি মিক্সাস কী যুক্তি খাড়া করবে ভেবে পেল না কেড্রিক। তবে একজন বেঈমান্তের মৃত্যু ঘটেছে, হতবুদ্ধি হয়ে গেছে ইয়েলো বাটের শত্রু বারউইকরা। ভবিষ্যতের কথা বলা যায় না, তবে আপাতত ভালোই হয়েছে ব্যাপারটা। তবে একটা জায়গাতেই মুশকিল, সিঙ্গার ইয়েলো বাটের লোক ছিল, কীথ বা কোম্পানির সঙ্গে তার গাটছড়া বাঁধার কথা কারও জানা নেই-জানলেও তাদের সংখ্যা নগণ্য।
জটলার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ কেড্রিকের মনে হলো: নতুন একটা উপাদান যোগ হতে যাচ্ছে ঘটনা ধারায়। জনমতও যে একটা প্রচণ্ড শক্তি, কথাটা ভাবে নি বারউইক; এবার ভাবতে হবে। শহরের প্রতিটি মানুষের চেহারায় কাঠিন্য ফুটে উঠেছে।
এরা, প্রায় সবাই-ই গরীব; যার যার পথে চলে কিংবা চলার চেষ্টা করে। কোম্পানির কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়েছে ওরা। সিঙ্গারকে যে সবাই চিনত তা নয়, যারা চিনত তারাও খুব একটা আমল দিত না; কিন্তু এখন কাকে হত্যা করা হয়েছে তা নয়, পুরো ব্যাপারটা তাদের দৃষ্টিতে পরিশ্রমী, একদল মানুষের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের মদতপুষ্ট কোম্পানির লড়াইতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় লোকদের শ্রমের বিনিময়ে মুনাফা লুটতে চাইছে ওরা। তা ছাড়া সিঙ্গার আর যাই হোক পিস্তলবাজ ছিল না, তার ওপর স্থানীয় লোক ছিল সে। অ্যাবি মিক্সাস নৃশংস খুনী, কারও অজানা নেই, পিস্তল ভাড়া খাটায় সে।
মাথা দুলিয়ে রাস্তার দিকে ইঙ্গিত করল পল কেড্রিক। কর্নেল, বলল ও, বিপদ এড়াতে চাইলে এখন থেকে এদেরকেও হিসেবের মধ্যে ধরো। জনগণ খেপলে সামলাতে পারবে না।
ভয়ার্ত দৃষ্টিতে জনতার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাল লরেন কীথ। তারপর পড়িমরি করে হেডকোয়ার্টারের দিকে ছুটল। কীথের গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইল শ্যাড, তারপর কেড্রিকের দিকে ঘাড় ফেরাল। আমরা কিন্তু এখনও কোম্পানির সঙ্গে আছি, ওদের জন্যে মুণ্ড হারাতে চাই না আমি। চলল কেটে পড়ি। কয়েকদিন পাহাড়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকি।
সম্ভব নয়। বারউইককে নিয়ে সেগালদের সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে। তবে তুমি চাইলে শহর থেকে বেরিয়ে যেতে পারো, চারদিক জরিপ করে গফদের কোনও খোঁজ মেলে কিনা দেখো-সত্যি চলে গেছে না ভাওতা দিচ্ছে জানতে পারলে ভালো হয়। কাল সন্ধ্যা নাগাদ আমার সঙ্গে চিমনি রকে দেখা করো। আমি অপেক্ষা করব।
.
শ্যাডের কাছে বিদায় নিয়ে সেইন্ট জেমস-এ নিজের রুমে ফিরে এল পল কেড্রিক। চট করে কিছু জিনিস গুছিয়ে নিল। তারপর ব্যাগ হাতে সোজা চলে এল লিভারি স্ট্যাবলে, অ্যাপলুসার পিঠে জিন চাপিয়ে তৈরি করে রাখল টাকে। আস্তাবল থেকে বেরিয়ে এসে বড় রাস্তা এড়িয়ে হেডকোয়ার্টারের দিকে এগোল পল। সামান্থা ফক্সের সঙ্গে দেখা করবে, এ-মুহূর্তে বারউইক বা কীথের মুখোমুখি হতে চায় না।
হেডকোয়ার্টারে কারও দেখা পেল না পল। গুন্টার, বোধ হয় কোথাও গেছে। বারউইক আর কীথ উধাও। অফিস-রুমে পায়চারি করতে করতে মাথার ওপর মৃদু পদশব্দ শুনতে পেল পল কেড্রিক।