নামটা নিঃসন্দেহে স্লোয়ানের পরিচিত, ফ্যাকাসে চেহারায় ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল সে। বাচ্চাদের একটা দুধের বোতল ধরে আছে, কিনতে যাচ্ছিল। সন্ত্রস্ত চেহারায় পালা করে সিঙ্গার আর অ্যাবি মিক্সাসের দিকে তাকাচ্ছে। আতঙ্কিত এবং হতচকিত, নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। তুমিও আছ এই ঝগড়ায়, সিঙ্গার? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি এসবে জড়াও নি।
হাসল সিঙ্গার। সবাই যাতে একথা ভাবে সেটাই চেয়েছি।
ছুঁচোর মতো লম্বাটে চেহারা মিক্সাসের, চোখদুটো হলুদ, ঈষৎ কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পকেট থেকে একটা কাগজ বের করল সে। একটা দলিল এটা, স্লোয়ান। এখানে লেখা আছে: তুমি তোমার জমির মালিকানা ছেড়ে দিচ্ছ। সই করে দাও, আর ঝামেলা পোহাতে হবে না।
রক্ত সরে শাদা হয়ে গেছে স্লোয়ানের চেহারা, মাথা নিচু করে দলিলের দিকে তাকাল সে, চোখের পাতা পড়ছে না। আবার অ্যাবি মিক্সাসের দিকে, চোখ ফেরাল। পারব না। কদিন পরেই আমার বউয়ের বাচ্ছা হতে যাচ্ছে। তা ছাড়া ওই জমির পেছনে প্রচুর খেটেছি আমি, ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যাই করো, আমি সই করব না।
করলেই ভালো হত, নিষ্কম্প শীতল কণ্ঠে বলল অ্যাবি মিক্সাস। ইতিমধ্যে উধাও হয়ে গেছে দোকানি। ওদিকে ওরা তিনজন আর একধারে ঝোলানো জিন্স আর স্নিকারের আড়ালে, গা ঢাকা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পল কেড্রিক-দোকানে আর কেউ নেই। ভালো চাইলে, সই করে দাও, ওই জমির ওপর আসলে তো তোমার অধিকার নেই। আমি কি মিথ্যে বলেছি?
এখনও চেহারার ফ্যাকাসে ভাব কাটে নি স্লোয়ানের, কিন্তু ভয় কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে। লোকটা সাহস করে এখন মুখ খুললেই তাকে মরতে হবে; বুঝতে পেরে কেড্রিকই নীরবতা ভাঙল।
হ্যাঁ অ্যাবি, মৃদু কণ্ঠে বলল ও, আমি বলছি তুমি মিথুরু?
বজ্রাহতের মতো আড়ষ্ট হয়ে গেল মিক্সাস। লোকটা খুনী এবং বিপজ্জনক, কিন্তু ধূর্তও বটে, নিজের নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই খুন করে। সিঙ্গার ছাড়া কামরায় আর কেউ নেই ধরে নিয়েছিল সে। এখন দেখা যাচ্ছে পেছনে আর একজন দাঁড়িয়ে আছে। পাথরের মতো কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে রইল সে, তারপর ঘুরতে শুরু করল। দেয়ালের কাছে চলে গেছে সিঙ্গার, তার দুচোখ কেড্রিককে খুঁজে ফিরছে।
ওটা কেট্রিক! বলল সে, বুস গানম্যান!
ভুরু কোঁচকাল মিক্সাস। কী ব্যাপার, আঁ? বিরক্তির সঙ্গে বলল সে। তুমি নাক গলাচ্ছ কোন্ দুঃখে?
খুনোখুনি আর চলবে না, অ্যাবি, জোর গলায় বলল পল কেড্রিক। আগামীকাল শান্তিসভায় যোগ দিতে যাচ্ছি আমি। খুন-খারাবী বন্ধ!
নির্দেশ মতোই কাজ করছি আমি, বলল মিক্সাস, তুমি বারউইকের সঙ্গে কথা বলো!
একটু নড়ে উঠল স্লোয়ান, পাঁই করে ঘুরল অ্যাবি মিক্সাস। একদম নড়বে! খেঁকিয়ে উঠল সে।
তুমি যেতে পারো, স্লোয়ান, বলল কেড্রিক। বাকবোর্ডে চেপে ঘরে ফিরে যাও। ম্যাকলেননকে বলো আমার কথার নড়চড় হবে না। অ্যাবি, ওকে খুন করার কথা ভুলে যাও তুমি। তোমার সামনে বিপদ।
বিভ্রান্ত অ্যাবি মিক্সাস। কেড্রিক বন্দুকবাজদের নেতৃত্ব দিচ্ছে জানে সে। তাই দ্বিধাগ্রস্ত। ভুল করতে যাচ্ছিল সে? কিন্তু তা কী করে হয়? ওকে তো-গবেট কোথাকার! ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল সে। কীথই এখানে পাঠিয়েছে আমাকে!
চুপ করো! চেঁচিয়ে উঠল সিঙ্গার, তুমি–
ঠাণ্ডামাথার খুনী অ্যারি মিক্সাস, কিন্তু মনের জোর নেই। নির্দেশ, পাল্টা নির্দেশ, তারপর খুন করতে গিয়ে মাঝপথে বাধা পেয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে-অনেকটা অন্ধকার কানাগলিতে, পথ হারানোর মতো। সিঙ্গারের ধমকে শেষ পর্যন্ত নিজেকে আর স্থির রাখতে পারল না। চরকির মতো ঘুরল সে, দাঁত বেরিয়ে পড়ে হিংস্র হয়ে উঠল চেহারা।
আমাকে ধমকাতে এসো না! খেঁকিয়ে উঠল অ্যাবি মিক্সাস।
একটা হাত পিস্তলের বাঁটের কাছে ঝুলছিল সিঙ্গারের, আতঙ্কে আঁকড়ে ধরতে গেল। নিমেষে হোলস্টার থেকে বেরিয়ে এল অ্যাবির পয়েন্ট ফোর ফোর, অগ্নিশিখা তেড়ে এল সিঙ্গারের দিকে। গুলি খেয়ে লাটিমের মতো ঘুরল সিঙ্গার। ধীরে ধীরে দুহাটু ভাজ হয়ে গেল তার, লন্ত মোমের মতো পিছলে পড়ল মেঝেতে, মাথা এলিয়ে পড়ল একটা ময়দার বস্তার ওপর। মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসছে।
হাঁ করে সিঙ্গারের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মিক্সাস, চোখ পিটপিট করল বার কয়েক। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসছে ও, উত্তেজিত স্নায়ু শান্ত হচ্ছে। অবিশ্বাসভরা দৃষ্টিতে সিঙ্গারের দিকে তাকিয়ে আছে।
হায়াল্লা, সিঙ্গারকে মেরে ফেলেছি! বলল অ্যাবি।
হ্যাঁ, মিক্সাসের ওপর থেকে চোখ না সরিয়ে বলল পল কেড্রিক। এখন বুঝতে পারছে, কত সামান্য কারণে খেপে যায় লোকটা। এবার কীথের কাছে কী জবাব দেবে!
আবির ছুঁচো মুখো চেহারায় আবার ধূর্ত হাসি ফুটে উঠল। কীথ? কীথের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী?
গুলির শব্দে আকৃষ্ট হয়ে আস্তে আস্তে দরজার কাছে ভিড় জমতে শুরু করেছে। নিজের জায়গায় ফিরে এসেছে দোকানি, আতঙ্কিত ঝুলে-পড়া হারায় তাকিয়ে আছে।
দোকানের দরজার দিকে তাকাল অ্যাবি মিক্সাস। এই সুযোগে নিঃশব্দে পিছিয়ে এল কেড্রিক। ঝোলানো স্নিকারগুলোর আড়ালে আড়ালে পা টিপে টিপে দুই কাউন্টারের মাঝে ফাঁকায় বেরিয়ে এল ও; তারপর দোকানির শোবার ঘর হয়ে পেছনের দরজা দিয়ে গলিপথে নেমে এল।