ব্যাপারটা দুর্বোধ্য কয়েকজন গানম্যান বিদায় নিল, তারপর আরও দুজন হাজির হলো। এমনও হতে পারে পরিকল্পনা পরিবর্তনের আগেই ওদের দুভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বারউইক? সম্ভব। সম্ভাবনার কথা লরেডো শ্যাডকে বলল কেড্রিক। সন্দেহের সঙ্গে মাথা দোলাল টেক্সান।
তা হতে পারে, কিন্তু আমার সন্দেহ আছে। বারউইককে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। তোমার গুন্টার খুব একটা ভাল মানুষ নয়; আর কীথ, ভাবতে গেলে আগাগোড়া বদমাশ; কিন্তু ওদের কারোই বারউইকের ধারে কাছে ঘেঁষার সাধ্য নেই-অন্তত কূট-বুদ্ধির দিক দিয়ে।
.
নানা দিক থেকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা খুঁজে পেল কেড্রিক। এদিকে ম্যাকলেনন আর সেগালের সঙ্গে দেখা করার কথাও অপরিবর্তিত রয়েছে। আলোচনা থেকে সমাধানের একটা উপায় বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে বারউইককে সন্দেহ করার কোনও কারণ দেখছে না ও।
রোদ ঝলমল সকাল, উত্তপ্ত একটি দিনের আগমন বার্তা ঘোষণা করছে। রাস্তায় বেরিয়ে এল কেড্রিক। এখনও শীতের আমেজ যায় নি, রোদের উত্তাপ উপভোগ করছে ও। রাস্তা পেরিয়ে ছোট্ট রেস্তরাঁয় ঢুকল, নিঃশব্দে খাওয়া সেরে নিল। একদফা কফি শেষ করে দ্বিতীয় বারের মতো কাপ ভরে চুমুক দিচ্ছে, এমন সময় রেস্তরাঁয় ঢুকল, সামান্থা ফক্স।
কেড্রিকের দিকে চোখ পড়তেই উজ্জ্বল হয়ে উঠল ওর চোখমুখ, হাসল। সোজা কেড্রিকের টেবিলের দিকে এগিয়ে এল। এখানে তুমি একটা দর্শনীয় বস্তু জানো সেটা? ওই প্রাচীন পাথুরে বাড়ি আর বুড়ো নোংরা লোকটার চেহারা দেখতে দেখতে কাহিল হয়ে গেছি। দম বন্ধ হবার যোগাড় হয়েছে। ঝামেলাটা চুকে গেলে বেঁচে যেতাম।
সামান্থার দিকে তাকাল কেড্রিক। কী করবে তারপর?
কী জানি, এখনও কিছু ঠিক করি নি। এদিকে আশপাশে কোথাও একটা র্যাঞ্চ কিনব ভাবছি। ওখানে অনেক গাছ থাকবে, থাকবে ঘাসআর পানি। জায়গাটা যে খুব বড় হতে হবে তেমন কোনও কথা নেই।
গরু পুষবে না?
পুষব, তবে অল্প। আমার শখ ঘোড়া। তোমার অ্যাপাসার মতো। অসংখ্য ঘোড়া থাকবে আমার।
চমৎকার। ঘোড়া পোষার জন্যে খুব বেশি জায়গার দরকারও হয় না। ভালো ঘোড়ার বাজার দর চড়া। কিছুক্ষণ সামান্থার সৌন্দর্য উপভোগ করল পল কেড্রিক; মেয়েটার চেহারার লাবণ্য, দুচোখের সরল দৃষ্টি মুগ্ধ করল ওকে। তুমি এখানে থাকবে শুনে কেন যেন খুব খুশি লাগছে। এর পর আর তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগত না।
চট করে কেড্রিকের দিকে তাকাল সামান্থা, হাসিতে নাচছে চোখজোড়া। আরে, তুমি দেখছি আর সব কাউবয়দের মতো, প্রেম নিবেদন করতে চাইছ!
না, সামান্থা, শান্ত কণ্ঠে বলল কেড্রিক, তা নয়, তোমাকে সত্যি ভালোবাসি আমি, এতে কোনওরকম সন্দেহের অবকাশ নেই! একদিন বুঝবে আমি মিথ্য, বলি নি।
আমারও মনে হচ্ছে তুমি সত্যি কথা বলছ, বলল সামান্থা ফক্স।
ওদিকে পশ্চিমে, বলল কেড্রিক, ঠিক পশ্চিমে নয়, উত্তর-পশ্চিমে কয়েক মাইল দীর্ঘ একটা রিম আছে। রিমের চূড়ায় অপূর্ব পাইনের বন। গাছ, পানি, বুনো-জন্তু জানোয়ার আর নয়ন জুড়ানো সবুজ মাঠ, সবই আছে ওখানে। অমন দৃশ্য মানুষ খুব কম দেখেছে। ওদিকে একটা জায়গা চিনি আমি, একবার ক্যাম্প করেছিলাম। মিঠে পানির ঝর্না; লম্বা লম্বা ঘাস, সারাক্ষণ হাওয়ায় দুলছে; আর বিস্তীর্ণ সমভূমি, বন-কী নেই?
ইশ, শুনেই লোভ লাগছে। এখানে আসার পর থেকে এমন একটা জায়গাই খুঁজছি! চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল কেড্রিক। আমার কাজ শেষ হোক, তোমাকে নিয়ে যাব, কেমন? জায়গাটা দেখবে।
কেড্রিকের দিকে তাকাল সামান্থা ফক্স। ঠিক আছে, পল, আমরা দুজন একসঙ্গে যাব ওখানে।
টুপি হাতে থমকে উঁড়াল কেড্রিক, দরজা দিয়ে বাইরে চোখ ফেরাল। হ্যাঁ, একসঙ্গে বিড়বিড় করে বলল ও। তারপর চোখ নামিয়ে সামান্থার দিকে চাইল। বুঝলে, সামা, একসঙ্গে শব্দটার চেয়ে সুন্দর শব্দ আর নেই…।
রেস্তরাঁ থেকে বেরিয়ে আসার পথে দুজনের খাবারের দাম চুকিয়ে দিল কেড্রিক। উত্তপ্ত রাস্তায় দাঁড়াল মুহূর্তের জন্যে। একটা বাকবোর্ড এসে থামল স্টোরের সামনে। একজন লোক নামল, সতর্ক ভাবভঙ্গি, সন্ত্রস্ত দৃষ্টি। হঠাৎ ঘাড় ফিরিয়ে কেড্রিকের দিকে তাকাল সে, তারপর স্যাৎ করে ঢুকে পড়ল দোকানে।
০৮. আরও দুজন লোক
আরও দুজন লোক হঠাৎ রাস্তা পেরিয়ে স্টোরের দিকে এগিয়ে গেল। একজনকে আগে কখনও দেখে নি পল; অন্যজন সেদিন ইয়েলো বাট স্যালুনের পেছনের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ধূর্ত চেহারার সেই লোকটা, নাম সিঙ্গার, কথা বলছে সেই। রাস্তার উল্টোদিকে পৌঁছে দাঁড়িয়ে পড়ল দুজন। হাতের ইশারায় বাকবোর্ড থেকে নামা লোকটাকে দেখিয়ে দিল সিঙ্গার।
ওই যে লোকটা, অ্যাবি, বলল সে। শত্রুপক্ষে একজন। ম্যাকলেননের শালা।
শুরুটা ভালোই হবে দেখছি, সংক্ষেপে মৃদু কণ্ঠে বলল অ্যাবি। চলো তা হলে?
চট করে ঘুরে ওদের পিছু নিল পল কেন্দ্রিক। ওরা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দ্রুত এগিয়ে গেল ও, কবাট দুটো বন্ধ হওয়ার আগেই হাতল ধরে ফেলল। ওর আগমন টের পায় নি কেউ, অনুমান করল কেড্রিক। কাউন্টারে দাড়ানো লোকটার দিকেই মনোযোগ ওদের।
হ্যাল্লো, স্লোয়ান, নরম কণ্ঠে ডাকল সিঙ্গার, এসো, অ্যাবি মিক্সাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই।